শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রাম্পবিরোধী ‘সিস্টার মার্চ’-এ লাখ লাখ নারীর অংশগ্রহণ

| প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পরের দিন শনিবার বিশ্বের বিভিন্ন শহরে নারীদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ট্রাম্পবিরোধী মিছিল। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম খবরটি নিশ্চিত করেছে। লাখ লাখ নারী এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
গত নভেম্বরে সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ট্রাম্প। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি। ক্যাপিটাল হিলে দেশটির প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প যুগের সূচনা হয়। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী শপথের পরের দিনই নারীদের মিছিলের কর্মসূচি ছিল বিশ্বজুড়ে। গতকাল সেই কর্মসূচিই পালিত হয়।
নারীদের নেতৃত্বে এইসব বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হলেও যে কোনো লিঙ্গের মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল মিছিলগুলোতে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন শহরে লাখ লাখ মানুষ এইসব মিছিলে অংশ নেয়। নারীদের প্রতি সহিংস দৃষ্টিভঙ্গি কেবল নয়, একেবারে সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে বিতর্কিত এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। প্রচারণা কাল থেকে শুরু করে এমন বহু অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ক্যাথি হেলার নামে ৬৩ বছর বয়সী এক নারী  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের কাছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের মানবাধিকার আইনজীবী গ্লোরিয়া অ্যালারড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সামার জারভস নামে এক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন। ক্রিস্টিন অ্যান্ডারসন নামের এক নারী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার যৌনাঙ্গ স্পর্শের অভিযোগ করেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে ৩০ বছরেরও পুরাতন একটি যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরেন জেসিকা লিডস নামের এক নারী। র‌্যাচেল ক্রুকস নামের এক নারীর অভিযোগ, ২০০৫ সালে তিনি ম্যানহাটানে ট্রাম্প টাওয়ারে অবস্থিত বে’রক গ্রুপের একজন রিসিপশনিস্ট ছিলেন। র‌্যাচেল ক্রুকসের দাবি ট্রাম্প তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়েছিলেন। ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নাতাশা স্টয়নফ নামের এক সাংবাদিকের অভিযোগ, এক সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় দেয়ার সময় রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে তাকে দেয়ালের সঙ্গে ঠেসে ধরে চুমু দিতে শুরু করেন। তখন ট্রাম্পের এক সহযোগী সেখানে চলে আসায় ট্রাম্প তাকে ছেড়ে দেন বলেও নাতাশা উল্লেখ করেন। ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামে একটি রিয়ালিটি শো’র চতুর্থ সেশনের প্রতিযোগী জেনিফার মারফির দাবি, চাকরির সুযোগ দেয়ার কথা বলে ট্রাম্প তাকে যৌন হয়রানি করেছেন। ১৯৯৭ সালে মিস ইউএসএ সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন মিস উটাহ হয়েছিলেন টেম্পল তাগার্ট ম্যাকডোয়েল। তখন তার বয়স ছিল ২১ বছর। সে সময় একাধিকবার তার ঠোটে জোর করে চুমু খেয়েছেন বলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের বিপরীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি’র কাছে দাবি করেছেন, তিনি এমন কিছু করেননি।
চলতি বছরের জুনে ‘জেন ডো’ নামে ক্যালিফোর্নিয়ার এক নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। ট্রাম্প এই অভিযোগের নিন্দা জানিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটাতেই এমনটা করা হয়েছে।
১৯৯০-এর দশকে জিল হার্থ নামের এক নারী ট্রাম্পের সঙ্গে আমেরিকান ড্রিম ক্যালেন্ডার গার্লস নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। ৩৪ বছরের জিল হার্থ অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্পের তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, হার্থ তাকে ধোঁকা দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী ইভানা ট্রাম্প ১৯৯২ সালে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করে বলেন, তার তখনকার স্বামী ট্রাম্প তার সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন। ট্রাম্প ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘এমন কিছুই ঘটেনি।’ সবশেষ ১১ বছর আগে দেয়া একটি নারীবিদ্বেষী বক্তব্য গত ফাঁস হওয়ার পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন। এ ছাড়া প্রচারণা কাল থেকে শুরু করে নারীর প্রতি বিভিন্ন সহিংস মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে নারীর প্রতি ট্রাম্পের সহিংস দৃষ্টিভঙ্গি, সমকামী অধিকার আন্দোলনের প্রতি তার বিরূপ আচরণ আর তার বিরুদ্ধের যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলোকে সামনে আনা হয়েছে বিক্ষোভের কারণ হিসেবে। শুরুতে নিউ ইয়র্কে এই সমাবেশের আয়োজনের কথা ভাবা হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংহতির সুর ভেসে এলে এই আয়োজন বিশ্বব্যাপী করার সিদ্ধান্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনের বাইরে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারীদের জোরালো বিক্ষোভ হওয়ার কথা জানিয়েছে রয়টার্স। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে লন্ডনের বিক্ষোভ সবথেকে বড় হতে পারে। সূত্র : ওয়েবসাইট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন