এটিএম রফিক, খুলনা থেকে : খুলনা মহানগরীর নিরালা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন ‘বাবরী মসজিদ বাংলাদেশ’ ইতিহাস খ্যাত ঘটনার ধারক-বাহক। অত্যাধুনিক আট্টালিকার ভিড়ে দুই যুগের ঐতিহ্যবাহী ওই জামে মসজিদ ও নূরানী মাদরাসাটিতে প্রতি বছরের ন্যায় বর্ষা মৌসুমে পানি উঠার আশঙ্কায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও কোমলমতি কোরআনী শিক্ষার্থীরা। তাই মসজিদটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুই শতাধিক শিশুর কোরআন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখা এবং হেফজখানা চালু করতে সরকার ও ধর্মপ্রাণ দানশীল ব্যক্তিদের সহায়তার আহŸান স্থানীয়দের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় উগ্রবাদীরা যখন বাবরী মসজিদ গুঁড়িয়ে দিল, তখনই বাংলাদেশের খুলনায় সৃষ্টিশীল কতিপয় ধর্মভীরুর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ওই জামে মসজিদটি। খুলনা মহানগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার দক্ষিণ পাশে ময়ূর নদী সংলগ্ন ‘সাগরের বান্দা’ পার হয়ে ডানদিক দিয়ে আঁকাবাঁকা আবাসিক এলাকা। এখানের সবুজ ঘেঁরা পল্লীতেই বাবরী মসজিদ বাংলাদেশটি অবস্থিত। বাবরী মসজিদ মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত মসজিদের নাম। বাবরী মসজিদর অর্থ বাবরের মসজিদ। ১৫২৭ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের আদেশে নির্মিত হয় বলে এর এই রকম নামকরণ। মসজিদটি ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যা শহরের রামকোট হিলের ওপর অবস্থিত ছিল। ১৯৯২ সালে রাজনৈতিক সমাবেশের উদ্যোক্তারা একটি সমাবেশ শুরু করে। যা দেড় লাখ জন সম্মিলিত একটি দাঙ্গায় রূপ নেয়। এই দাঙ্গার ফলে মসজিদটি সম্পূণরূপে ধ্বংস হয়। ওই সময় ভারতের প্রধান শহরগুলোতে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। বাবরী মসজিদ রক্ষা করতে বাংলাদেশ থেকে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বে একটি দল ভারতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের সে যাত্রা বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়। আন্দোলনকারীদের নিয়ে সেদিন খুলনার শিববাড়ী এলাকায় সমাবেশ হয়। সে সমাবেশে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় খুলনা মহানগরীতে একটি বাবরী মসজিদ নির্মাণের। তাৎক্ষণিকভাবে এই মসজিদের জন্য খুলনা গ্রীনভিউ আবাসিক এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন এক বিঘা জমি দান করেন। সে সময় অনেকেই নগদ অর্থ, শ্রম এবং অবকাঠামো নির্মাণের সরঞ্জামাদি দান করেন। যার ফলে শুরু হয় বাবরী মসজিদ বাংলাদেশের নির্মাণ কাজ। উদ্বোধনী নাম ফলকটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে মসজিদের পূব পাশে। বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ অনেকেই মসজিদের জন্য দান করলে পরিকল্পনার অভাব ও তৎকালীন কমিটির লুটপাটের কারণে মসজিদের উন্নয়ন হয়নি দুই যুগেও।
বাবরী মসজিদ বাংলাদেশের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোঃ আদম গাজী মান্দার বলেন, “গণজাগরণের মধ্যে এই মসজিদটি নির্মাণ হয়েছিল, তা উন্নত হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু হয়নি। দেখভাল করার যোগ্য মানুষের অভাব এবং কোন আয় না থাকায় উন্নয়ন হয়নি। এখানে তাবলীগ জামাতের দেশী-বিদেশী মেহমান আসে। তারা আসে বাবরী মসজিদ নামের কারণে। তারা এসে দেখে নামটি অনেক বড়। কিন্তু মসজিদের অবস্থা করুণ। অনেক জায়গা পড়ে আছে। কিন্তু নেই কোন স্থাপনা। এখানকার ইমাম, মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতাদি ঠিকমত দেয়া যায় না। বাংলাদশে এটিই একটি মহৎ ঐতিহ্য বহনকারী মসজিদ। এখানে দুই শতাধিক শিশু নূরানী পদ্ধতিতে কোরআন ও বাংলা-অংক-ইংরেজির বর্ণ পরিচয় শিখছে। এ মসজিদটি সকলের সহযোগিতা ছাড়া কোনভাবেই এর উন্নয়ন সম্ভব না। তা না হলে বর্ষা মৌসুমে আবাও পানি উঠে যেতে পারে।”
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন