শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ট্রাম্পের ভিসা নিষেধাজ্ঞা বন্ধুদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা : শক্তিশালী হবে শত্রুরা

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি নিউইয়র্ক টাইমস : সাতটি মুসলিম দেশের উদ্বাস্তু আগমন বন্ধ ও পর্যটকদের ভিসা প্রদানে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বড় রকম কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া হবে। শুধু তাই নয়, আমেরিকানদের উপলব্ধিকে খারাপ করবে এবং ট্রাম্প যাদের লক্ষ্যবস্তু করেছেন সেই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বা শত্রুদের প্রচারণাকে আরো জোরদার করবে।
সেই নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলে আসছিলেন। তারপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ভাষা একটু নমনীয় করেন। শুক্রবার তিনি মুসলমান নয়, সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে রাখার নির্দেশ জারি করেন। পেন্টাগনে বসে আদেশে স্বাক্ষর করে ট্রাম্প বলেন, আমরা এখানে তাদের চাই না। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে আমাদের সৈন্যরা যাদের সাথে বিদেশে লড়ছে সেই মারাত্মক হুমকিদের আমরা এ দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।  
কিন্তু মুসলিম দেশগুলোর কয়েক ডজন কর্মকর্তা, বিশ্লেষক ও সাধারণ নাগরিকদের সাথে সাক্ষাতকারে তারা একমত হয়ে বলেন যে শুক্রবার ট্রাম্পের জারি করা আদেশ একটি উস্কানি, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যে খোদ ইসলামকে সমস্যা হিসেবে গণ্য করেন, এটা তারই ইঙ্গিত।
আইন প্রণেতা ও সাবেক ইরাকি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুয়াফাক আল-রুবাই বলেন, আমার মনে হয়, এ পদক্ষেপ গোটা মুসলিম বিশ^কে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরিয়ে দিতে যাচ্ছে।
ইস্তাম্বুলের বিলগি বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যাপক ইলতার তুরান বলেন, এর ফলে সন্ত্রাসীরা বলতে পারেÑ দেখ, তাদের লক্ষ্য সন্ত্রাস নয়, মুসলমান।
অনেক বছর ধরেই মুসলিম বিশে^র অধিকাংশ স্থানে লেনদেনের তত্ত্ব ও কয়েকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধসহ আমেরিকা বাস্তবভিত্তিক নীতি অনুসরণ করে আসছে।
প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও বারাক ওবামা সামরিক অভিযান ও গোপন হামলা চালালেও তারা প্রকাশ্যে ধর্মীয় সহনশীলতার অঙ্গীকার করেছেন এবং ইসলামের বিরুদ্ধে আমেরিকার কোনো যুদ্ধ ছিল না।
আরব কূটনীতিতে অত্যন্ত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কিছু ব্যক্তির মতে, এখন এই গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটিতে আপস ঘটেছে এবং তা বিশেষ বন্ধুদের শত্রু করে তুলতে চলেছে।
১৯৯০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে আফগানিস্তান, ইরান ও লেবাননসহ ৫টি মুসলিম দেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন রায়ান সি. ক্রোকার। তিনি বলেন, ইসলামিক স্টেট বলছে তারা আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সে কথা প্রমাণের জন্য এখন তারা শুধু আমাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলো ব্যবহার করবে।
ক্রোকার বলেন, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ মুসলিম দেশগুলোর পাশ্চাত্যপন্থী এলিটদের হতাশ করবে যে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। যে সব লোক আমেরিকার সৈনিক ও কূটনীতিকদের সাহায্য করার জন্য নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে তাদের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হবে।
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা যে সব দেশের উপর সরাসরি প্রযোজ্য হবে না তারাও হতাশ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। বিশিষ্ট মিসরীয় ঔপন্যাসিক আম্মার আলি হাসান বলেন, এ আদেশ এ ধারণার জন্ম দেয় যে আমেরিকা আর সে আমেরিকা নেই। দেশটি এখন আর বিশে^র দক্ষ লোকদের জন্য উন্মুক্ত নয়। এটি আর স্বপ্নের দেশ নয়।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের হয়রানির বহু খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বুধবার ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাতকারে ইসলামিক স্টেটকে মধ্যযুগীয় জিনিস বলে আখ্যায়িত করেন যারা হত্যার জন্য খ্রিস্টানদের বেছে নিয়েছে। অথচ তারা বিশ^ব্যাপী বহু মুসলমানকে হত্যা করেছে। তিনি ব্যাপক ধর্মীয় সংঘাতের সুরে নীতি কাঠামোর রূপরেখা দেন।
শুক্রবার ক্রিশ্চিয়ান ব্রডকাস্টিং নিউজকে বলেন,  ট্রাম্প বলেন যে যুক্তরাষ্ট্র আবার উদ্বাস্তু গ্রহণ শুরু করলে খ্রিস্টানদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত অবস্থা ছিল এই যে আপনি যদি মুসলিম হন তাহলে আসতে পারেন, কিন্তু খ্রিস্টান হলে নয়।
সত্য হল, পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, যুক্তরাষ্ট্র হাজার হাজার খ্রিস্টানকে আশ্রয় দিয়েছে। শুধু ২০১৬ আর্থিক বছরে মুসলিম উদ্বাস্তু গ্রহণ করেছে ৩৮ হাজার ৯০১ জন, আর খ্রিস্টান উদ্বাস্তু গ্রহণ করেছে ৩৭ হাজার ৫২১ জন।  
লন্ডন ভিত্তিক লেবাননী-ইরাকি স্থপতি ও ভাষ্যকার কার্ল শ্যারো বলেন, ট্রাম্প ভদ্রতার সাথেই কথা বলেছেন, তবে আগে তা লোকদের বোকা বানাচ্ছে না। এ সব কঠোর পদক্ষেপ সম্পর্কে সত্যি কথা এই যে বহু লোকই এটা বলবে যে আমরা কমপক্ষে এটা জানি যে আমরা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছি।
পলিটিকোর জন্য সম্প্রতি লেখা এক নিবন্ধে শ্যারো যুক্তরাষ্ট্র ও বহু আরব দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মিলের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, নিরাপত্তা বাহিনীকে জড়িত করে বিরোধ, বিদেশী প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এবং দেশের নেতা ও মিডিয়ার মধ্যে নোঙরা বিতর্ক। তিনি বলেন, আরব দেশগুলোতে প্রত্যেকে কি বলছে আমি এইমাত্র তা সংগ্রহ করেছি। এটা হচ্ছে এক ধরনের পরের দুর্দশায় আনন্দিত হওয়া।
শ্যারো বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা মৌলবাদি মুসলমানদের নতুন ক্যাডার সৃষ্টিতে সাহায্য করবে বলে যে কথা বলা হচ্ছে তিনি তাতে অপমানিত হয়েছেন। এ সকল  লোক সন্ত্রাসী হতে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে হামলা শুরু করতে যাচ্ছে এটা কিছু কল্পনাপ্রবণ লোকের অনুমান।
বহু মুসলমানের জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ অবমাননাকর প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। উদ্বাস্তুদের ১৮ মাসের ক্লান্তিকর নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অন্যদিকে ভ্রমণ বা ব্যবসার উদ্দেশে আগত ব্যক্তিরা আমেরিকার বিমান বন্দরগুলোতে কোনো কোনো সময় তাদের আলাদা করে ফেলার অভিযোগ করেন।
যদিও ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার পিছনে রয়েছে নিরাপত্তার বিষয়, কিন্তু তা থেকে সউদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের মত দেশগুলোকে বাদ রাখা হয়েছে যাদের নাগরিকরা ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অত্যন্ত মারাত্মক কিছু সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী। এ দেশগুলোকে ধাক্কা দেয়া কঠিন। পাকিস্তানের পারমাণবিক অন্ত্র আছে, সউদি আরবের আছে তেল ও আমিরাত হচ্ছে বিনিয়োগের বড় উৎস। দুবাইতে ট্রাম্পের কোম্পানির একটি গলফ ক্লাব আছে। সউদি আরবে হোটেল ব্যবসা খোলারও সম্ভাবনা আছে।
ভিসা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা আরব দেশগুলোর নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক সমালোচনা হয়ত করবেন না, সম্ভবত ট্রাম্প এ অঞ্চলের বহু সংকট বিষয়ে ট্রাম্প কি পদক্ষেপ নেন সম্ভবত তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।
নৈতিক ঋণের প্রশ্নও আছে। ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করেছে বহু ইরাকি ও আফগান, প্রায়ই দোভাষী হিসেবে। তাদের কথা যে দেশে হামলা থেকে বাঁচতে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের অঙ্গীকার করা হয়েছিল।
ক্রোকার বলেন, ট্রাম্পের গৃহীত ব্যবস্থা এ সব অঙ্গীকারকে ব্যাহত করবে। এ পদক্ষেপ ভবিষ্যতে মার্কিন সরকারের পক্ষে যারা কাজ করতে চাইবে তাদের কাছে অশুভ বার্তা পাঠাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Laboni ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫১ এএম says : 0
they are right
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন