শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

নয়া সিইসি ও চার কমিশনার জনগণের প্রত্যাশা

প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৮:১২ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

হোসেন মাহমুদ : অবশেষে নতুন নির্বাচন কমিশন পেয়েছে দেশ। দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণের পর ৬ ফেব্রুয়ারি নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার নির্বাচন কমিশনারের নাম ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। নতুন সিইসি হিসেবে কাকে নিয়োগ করা হয় তা জানার জন্য সবাই সাগ্রহে অপেক্ষা করছিল যদিও বহু জনেরই ধারণা ছিল কাকে নিয়োগ দেয়া হবে তা সরকারের ঠিক করাই আছে বা করবে। যারা নিরীহ, নিরপেক্ষজন তারা সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ বলতে যা বোঝায় এ রকম কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে বলে বলে আশা করছিলেন। তবে সিইসি ও কমিশনারদের নাম ঘোষিত হওয়ার পর এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার কথা  জানা গেছে। আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন জোট এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। বিশিষ্টজনদের অনেকে বিস্মিত যে নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে সিইসি সহ তিনজনের নামই প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সুপারিশে ছিল না। এ নাম তাহলে কারা দিলেন এবং বিএনপি-আওয়ামী লীগের সুপারিশকৃত নামগুলোর চেয়ে এ নামগুলো বেশি গুরুত্ব পেয়ে গেল কীভাবে?  
বাংলাদেশে বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে গণতন্ত্রের অবন্থা কি, সে সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল। বহু মানুষই মনে করেন দেশে গণতন্ত্র বলে এখন কিছু নেই। সরকার ও সরকারের সমর্থকরা অবশ্য তা স্বীকার করেন না। তারা মনে করেন, দেশে এখন পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে। যাহোক, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি বহুল আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ ও তার সহযোগী নির্বাচন কমিশনারদের আমলে বাংলাদেশে জাতীয়, স্থানীয়সহ যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ছাড়া বাকি সবগুলোই নিন্দিত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, তার মত এমন মেরুদ-হীন ও অযোগ্য নির্বাচন কমিশনার আর দেখা যায়নি। তার আমল নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত আমল। তবে তিনি দায়িত্ব পালনে কখনো নিজের অযোগ্যতা বা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেননি। তিনি বিশ^স্ততার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেছেন বলে বারবার জানিয়েছেন। তিনি ৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সাথে বিদায়ী সাক্ষাতকালে বলেন, তার মেয়াদকালে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই কাজী রকিব উদ্দিনের কারণেই সিইসি নিয়োগের বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সব সরকারই সিইসি হিসেবে নিজেদের পছন্দসই লোক নিয়োগ করতে চায়। কাজী রকিবউদ্দিন ও অন্য তিন কমিশনারকে সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে বাছাই পূর্বক নিয়োগ করে। সে সময় অন্য কারো আপত্তিকে সরকার পাত্তা দেয়নি।  যাহোক, বিশেষ করে কাজী রকিব উদ্দিনের বেলায় যে এই পছন্দটি ব্যক্তিত্ব ও মেরুদ-হীনতার এমন দৃষ্টান্তে পরিণত হবে তা সরকার নিজেও হয়তো ভাবেনি। তাই তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষ ও সুধীজনদের এক উল্লেখযোগ্য অংশই ছিঃ ছিঃ করলেও সরকারের উচ্চ থেকে নি¤œ পর্যন্ত কোনো পর্যায়েই তার প্রতি কোনো প্রকার আপত্তি-বিরক্তি ছিল না। শোনা যায়, সচিব থাকাকালেও তিনি সরকারের গুডবুকেই ছিলেন। আবার অবসরোত্তর পর্যায়ে সিইসির নতুন দায়িত্ব পাবার পর বিশ^স্ততম সেবা দিয়ে তিনি সরকারের গুডবুকে থেকেই জীবনের শেষ চাকরি থেকে বিদায় নিলেন। একটি সংবাদপত্রে তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মূল্যায়ন করা হয়েছে এভাবে- ‘ওই কমিশন সবার আস্থা অর্জন তো দূরে থাক বলা যায় দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও সংস্কৃতিতে যে সুবাতাসের ধারা বইতে শুরু করেছিল তাকে কার্যত ধ্বংস করেছে।’
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সার্চ কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদার নাম ঘোষণা করেন। সে সাথে ৪ জনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন- সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী। এ ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন পর্যায়ে নবগঠিত কমিশন সম্পর্কে মত-মন্তব্য প্রকাশ শুরু হয়। আওয়ামী লীগ ও জোটসঙ্গীরা এ নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের সন্তোষ প্রকাশ করে। আওয়ামী লীগ আশা প্রকাশ করে বলেছে, নতুন নির্বাচন কমিশন জাতির প্রত্যাশা পূরণ করবে। তবে বিএনপি সেদিন কোনো মন্তব্য না করে পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি ২০ দলীয় জোটের বৈঠকের পর তাদের মত প্রকাশ করে। তখনি পরিষ্কার হয়ে যায় যে তারা এ নির্বাচন কমিশন গঠনে সন্তুষ্ট নয়। যাহোক, এদিন বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট ভাষায় বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, নতুন ইসি নিয়ে বিএনপি নিরাশ ও হতাশ। তার ভাষায় একজন বিতর্কিত সাবেক সরকারি কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত কোনো প্রতিষ্ঠান নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। কাজেই কে এম নুরুল  হুদার নেতৃত্বে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যনির্বাচন সম্ভব হবে না।  সিইসি সম্পর্কে যা বলেন তা হচ্ছে- কে এম নুরুল হুদা কে বিএনপি আমলে ২০০১ সালে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। তখন তিনি যুগ্ম সচিব ছিলেন। তিনি অতিরিক্ত সচিব বা সচিব হয়েছেন শুধুই কাগজে। এসব পদে দায়িত্ব পালনে কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা তার নেই। তিনি আরো বলেন, নুরুল হুদাকে বিএনপি আমলে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠোনো হয়, আর আওয়ামী লীগ আমলে তাকে সচিব মর্যাদা প্রদানের ফলে আমাদের দল সম্পর্কে তার মনে ক্ষোভ থাকতে পারে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরাগ পোষণ করতে পারেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৯৬ সালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক থাকাকালে নুরুল হুদা জনতার মঞ্চের একজন সংগঠক ছিলেন। এমন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হওয়া সরকারি চাকরি বিধির লংঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবসর গ্রহণের পর ২০১০-১৫ সাল পর্যন্ত সরকারি একটি প্রকল্পের এমডি হিসেবে লাভজনক পদে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম, কারো কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ কিংবা কারো প্রতি ক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি যেন নির্বাচন কমিশনের মতো নিরপেক্ষ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না পান। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তাই হয়েছে।
এদিকে কারো কারো মনে এ প্রশ্ন জেগেছে যে সিইসি পদে স্বাভাবিক ভাবেই প্রধান বড় দুই দল থেকে প্রস্তাবিত কারোরই নিয়োগ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে ৫ জনের মধ্যে বিএনপির প্রস্তাব থেকে নেয়া হয়েছে কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে, আওয়ামী লীগের প্রস্তাব থেকে নেয়া হয়েছে বেগম কবিতা খানমকে। বাকি তিনজনের নামই এসেছে ছোট দল তরিকত ফেডারেশনের কাছ থেকে। যারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল। তাদের প্রস্তাবেই সিইসি হিসেবে কে এম নুরুল হুদা এবং কমিশনার হিসেবে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও ব্রি. জে. শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরীর নাম ছিল। সার্চ কমিটির সুপারিশে তরিকতের প্রস্তাবিত ৫টি নামের মধ্যে ৩টি নামসহ ১০ জনের নাম প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হয়। যাদের নাম পাঠানো হয় তাদের মধ্যে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ৫ জন, তিন জন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ।  তারা হলেন- সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা, আলী ইমাম মজুমদার, মাহবুব তালুকদার, জেরিনা রহমান খান, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। দেখা যাচ্ছে, ছোট দল তরিকত ফেডারেশনের প্রস্তাবিত নামগুলোই সার্চ কমিটির কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তাদের প্রস্তাবিত তিন জনকেই যথাক্রমে সিইসি ও কমিশনার হিসেবে রাখা হয়েছে। সে হিসেবে আরেকটি ছোট দল এলডিপির সুপারিশ কিন্তু সার্চ কমিটির কাছে গুরুত্ব পায়নি। তারা সিইসি হিসেবে আলী ইমাম মজুমদারের নাম প্রস্তাব করেছিল। এ ব্যাপারে একটি অনলাইন পত্রিকা তরিকত ফেডারেশনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায়, ক্ষমতাসীন দলের পরামর্শে তিনটি ও নিজেদের পক্ষ থেকে দু’টি নাম প্রস্তাব করেছিল তারা। তাদের নিজ পছন্দের নাম দু’টি ছিল সাবেক সচিব আলী কবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক জিনাত। এ তথ্য থেকে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের পরামর্শে তরিকতের প্রস্তাবিত তিনটি নামই সার্চ কমিটির সুপারিশে ছিল এবং প্রেসিডেন্ট সে তিনটি নামই সুপারিশ মতো পদেই রেখেছেন। নাগরিক সমাজের প্রস্তাবিত তিনটি নামও সার্চ কমিটির সুপারিশে ছিল। তারা হচ্ছেন- স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেরিনা রহমান খান ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। বাকি একজন আবদুল মান্নানের নাম আওয়ামী লীগ প্রস্তাব করেছিল। এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারি একটি সংবাদপত্রে এ বিষয়ে সার্চ কমিটির একাধিক সদস্যের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়। তারা বলেন, তারা যেসব ব্যক্তির কথা ভেবেছিলেন চূড়ান্ত তালিকায় তাদের সংখ্যা কম। এ জন্য তাদের কেউ কেউ বিব্রত। একজন সদস্য বলেন, আমরা যা করতে চেয়েছিলাম তা করতে পারিনি। এমনও হয়েছে যে কমিটির ছয়জন সদস্য একমত হয়ে যে নামটি প্রস্তাব করেছেন, সেটিও বাদ পড়েছে।                 
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের এই পুরো প্রক্রিয়া লোক দেখানো ছিল কি না সেই প্রশ্ন তোলার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তাছাড়া যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে সবকিছু হয়ে গেল সেটিও স্বাভাবিক ছিল না। তিনি বলেন, অনুসন্ধান কমিটি বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে যে বৈঠক করেছিল, তাতে সুস্পষ্ট মানদ-ের ভিত্তিতে সিইসি ও কমিশনার নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। তাদের সুপারিশ ছিল জনগণকে আস্থায় নেয়া, স্বচ্ছতার চর্চা করা এবং গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিহার করার। প্রকৃতপক্ষে তাদের এসব মতের কিছুই রাখা হয়নি।  
নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, কোনো দলের দেয়া নাম বিবেচনা করে নয়, সম্পূর্ণ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দেখে তাদের নেয়া হয়েছে। অন্য দলের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্য দলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কেন তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে যাবে?  
মানুষ তো সবাই এক কথা ভাবে না। দেশের সকলেই আওয়ামী লীগের সমর্থক নয়, আবার সবাই বিএনপিরও সমর্থক নয়। তারা তাদের পছন্দমত কথা বলে। সেসব কথার সবই পত্রিকায় আসে না। জনমতের সেসব কথার হয়তো গুরুত্বও নেই। তাদের কথায় উঠে এসেছে যে আওয়ামী লীগ যা চেয়েছিল তাই করেছে। তারা ইসি গঠনে এমন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে যাতে কারো কিছু বলার বা করার নেই। তারা যেভাবে নির্বাচন করবে সেভাবেই হবে। বিএনপির সাধ্য নেই তাদের ঠেকায়। যাক সে কথা।   
এদিকে নব নির্বাচিত সিইসি বলেছেন, তিনি জনতার মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে যুগ্ম সচিব হিসেবে বিএনপি সরকারের সময় ২০০১ সালে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়ার পর তিনি আর সরকারি চাকুরিতে যোগ দিতে পারেননি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এলে তার অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি ভূতাপেক্ষ ভিত্তিতে কার্যকর হয়। অর্থাৎ তিনি সর্বোচ্চ সরকারি পদ পেয়েছেন, তবে সে পদে দায়িত্ব পালন করেননি। কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন তাহলে সিইসির মতো এত বড় গুরু দায়িত্ব তার মতো লোক কী করে পালন করবেন যে দায়িত্ব শুধু সত্যিকারের মেরুদ- শক্ত লোকের পক্ষেই পালন সম্ভব? বিএনপি কেন তাকে ২০০১ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালো? এ বিষয়ে যারা খোঁজ খবর রাখেন তারা জানেন যে গুরুতর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ঘটনা ছাড়া এ রকম ঘটার কথা নয়। আদালত তাকে অবশ্য চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারপর তাকে ওএসডি করে রাখা হয়। ২০০৯ সালে তিনি  চাকুরি ফিরে পাওয়াসহ সবই পান। এটি ক্ষমতাসীন দলের সাথে বিশেষ নৈকট্য ছাড়া সম্ভব ছিল না বলেই অনেকের ধারণা। তারপরও ২০১০ থেকে তিনি যেসব পদে থেকেছেন তাও প্রধানত সরকারি আনুকূল্যেই। তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। অথচ, তিনি রাজনৈতিক দলের সাথে তার সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন। তাই বিএনপি তাকে নিয়ে স্বস্তি বোধ না করতেই পারে। অবশ্য তিনি বলেছেন, আমি কারো প্রতি রাগ বা অনুরাগের বশবর্তী হব না। আমি নিরপেক্ষভাবে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকব।   
আমাদের সুধী সমাজের বেশিরভাগ অংশই এ নিয়োগ নিয়ে কথাবার্তা বলার বদলে তারা কী করেন তাই দেখতে চান। তাদের আশা যে, নব নির্বাচিতরা সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। যদিও সবাই জানেন যে, আশা আর বাস্তবতা এক নয়। অনেকেরই অভিমত যে নতুন সিইসি নিয়ে যে আশাবাদ সৃষ্টি হতে পারত তা হয়নি। আর কে না জানে নির্বাচন কমিশনের কাজ করার স্বাধীনতা সম্পূর্ণ রূপে সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। সরকার চাইলে নারায়ণগঞ্জ মডেলের নির্বাচন হতে পারে, সরকার না চাইলে উপজেলা নির্বাচনের মতো নির্বাচন ইসি জাতিকে উপহার দিতে পারে। তবে সিইসি যদি মোহাম্মদ আবু হেনার মতো কেউ হন তাহলে সত্যিকারের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হতে পারে। বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করেনি। এখন জনতার রায় যাই হোক, সে রায়টি যাতে তারা সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে দিতে পারে, নির্বাচনে কোনোভাবেই অনিয়ম, কারচুপি না হয় তা শতভাগ নিশ্চিত করা সিইসি তথা নির্বাচন কমিশনের মহান দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে নতুন নির্বাচন কমিশন কীভাবে অগ্রসর হয়, কতটা পালন করে, সেটাই আগামীতে দেখার বিষয়।
লেখক : সাংবাদিক
h_mahmudbd@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন