রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক খাবার গজা

| প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : গজা। গ্রাম বাংলা মানুষের যুগযুগের ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক সুস্বাদু একটি খাবার। গজা চিনে না গ্রাম বাংলায় এমন মানুষের সংখ্যা কম। বিশেষ করে শিশুদের অতি পছন্দের খাবার হচ্ছে গজা। কবে কখন কোথায় কিভাবে গজা নামের এই মুখরোচক খাদ্যটি আবিষ্কৃত হয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে প্রবীণজনেরা বলছেন যখন থেকে গম বা যব পেষাই করে আটা ও ময়দায় রূপান্তরিতকরণ শুরু হয়েছে তখন থেকেই গজা নামক এই মিষ্টি খাদ্য বস্তুটি আবিষ্কৃত হয়। গ্রাম্য মেলা বা হাট-বাজারে সকল শুকনো খাবারের মধ্যে সেরা খাবার ছিল এই গজা। গজা ছাড়া মেলাই জমতো না। পরিবারের লোকজন মেলায় গেলে শিশুদের প্রথম বায়নাই ছিল গজা। শিশুরা প্রথমে জিহব্বায় চেটে গজার উপরিভাগে মিষ্টি স্বাদ নিতো। পরে তারা দাঁত দিয়ে কেটে গজা খেতো। শিশুদের সাথে সাথে বড়রাও গজা খেতে ভুলতো না। মেলায় গিয়ে নিজেরা খেতো আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য কাগজের ঠোঙা বা পদ্মপাতার পুটলি ভর্তি করে সের দরে গজা কিনে নিয়ে যেতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই মজার খাদ্য গজা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। গ্রাম্য মেলা বা হাট বাজার ছাড়া এখন গজা তেমন একটা দেখা যায় না। গজার প্রস্তুত প্রনালী সম্পর্কে জানা গেছে, গজা সাধারণত দুই প্রকার। একটি হচ্ছে কাঠ গজা আরেকটি হচ্ছে রস গজা। সুজি, ময়দা, চালের গুড়া, মাসের গুড়া ইত্যাদি একত্রে পানিতে গুলে খামির তৈরী করে রেখে দেয়া হয়। ঙ্গ ঘণ্টা পর তা লুচিরমত করে বেলে গজা তৈরী করা হতো। এরপর গুড় বা চিনির সিরাপ তৈরী করা হয়। সিরাপ তৈরী শেষ হলে গজাগুলো ডোবা তেলে ভেজে চিনি বা গুড়ের সিরাপে ডুবিয়ে রাখা হয়। রস গজা তৈরী করলে চিনি বা গুড়ের সিরাপ পাতলা করে তৈরী করা হয়, আর কাঠ গজা তৈরী করলে গুড় বা চিনির সিরাপগুলো জ্বাল দিতে দিতে ঘন করে ফেলা হয়। এভাবেই তৈরী করা হতো মজার খাবার গজা। জানিয়েছে, এক সময় গ্রামের হাট বাজার বা মেলায় কোন ভাতের হোটেল ছিল না। গ্রামের মানুষ হোটেলে ভাত খেতো না। তারা মনে করতো নিচু পর্যায়ের লোকেরা হোটেলে ভাত খায়। সে সময় ব্যবসায়ীরা গজা বা গজার মত মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন খাবার তৈরী করে মেলা বা বাজারে বিক্রি করতো। মানুষ গজা বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতো। দিন বদলের সাথে সাথে এসব রেওয়াজ এখন উঠে গেছে। গ্রাম গঞ্জের বাজার, গ্রোথ সেন্টারসহ বিভিন্ন জনবহুল স্থানে হোটেল, রেস্তোরাঁয় ভরে গেছে। এখন শহর, বন্দর, গ্রাম সকল স্তরের মানুষই হোটেলে ভাত খায়। যার ফলে এসব আলগা শুকনো খাবারের চাহিদাও কমে গেছে। সেই সাথে কমে গেছে গজার চাহিদাও। তবে গজা যে একেবারে নেই তা বলার সুযোগ নেই। গ্রামে গঞ্জের বাজারগুলোতে এখনো কাঠগজা তৈরী করা হয়। বিক্রি করা হয় রস গজাও। তবে সংখ্যায় তা খুবই কম। বেশী বিক্রি হয় খাজা জাতীয় আরেকটি মিষ্টি খাবার। যেগুলো তৈরী করা হয় গজার আদলেই। শখ করে গ্রাম গঞ্জ ও শহরের মানুষ এসব গজা খাজা খেয়ে থাকে। আজকাল নরসিংদী শহরে বিভিন্ন স্থানে কাঠ গজা বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা গ্রামের মানুষের চাহিদাকে সামনে রেখেই এসব গজা শহরে আমদানি করে। নরসিংদী জেলা শহরের কোর্ট কাচারীসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শত শত গ্রামের মানুষ আসা যাওয়া করে। তাদের জন্য গজা ব্যবসায়ীরা ফেরী করে গজা বিক্রি করে। প্রতিদিন নরসিংদী জেলা জজ কোর্টের সামনে কাঠ গজা নিয়ে হাজির হয় এক ব্যবসায়ী। প্রতিদিন সে এক ডালা কাঠ গজা বিক্রি করতে পারে। কাঠ গজা খায় এমন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা মামলার কাজে কোর্টে আসে। দুপুরে ভাত খেলে এক দেড়শত টাকা পকেট থেকে ব্যয় হয়ে যায়। এটা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তারা দুপুরে ১০ টাকা করে ২/৩টি গজা খেয়ে পানি পান করে দুপুরের খাবারের কাজটি সেরে ফেলে। গজা বিক্রেতা পরিতোষ জানান এখনো গজার চাহিদা আছে। তৈরী করার লোক নেই। ফেরী করে বিক্রি করার লোকও নেই। সে নিজে পরিবারের লোকদের সহযোগিতায় অল্প স্বল্প করে তৈরী করে তা কোর্ট এলাকায় এনে বিক্রি করে চলে যায়। আর এতেই চলছে তার সংসার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন