মহিউদ্দিন খান মোহন : নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পন্ন হলেও তা নিয়ে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। নানাভাবে নানা প্রেক্ষিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখনো অবস্থান করছে নির্বাচন কমিশন। তবে এখন আলোচনা প্যাটার্ন একটু বদলেছে। এতদিন আলোচনার বিষয় ছিল কারা হচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য। এখন আলোচনা যারা এলেন তারা কেমন এবং তারা রাজনৈতিক দল এবং গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন কীনা। জাতীয় সংসদের একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এ কমিশন সক্ষম হবে কীনা, তা নিয়েই এখন আলোচনা।
সে আলোচনায় যাবার আগে দেখা দরকার নির্বাচনের যারা প্রধান অনুঘটক, অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলো এ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে কী ভাবছে, কী বলছে। বলা বাহুল্য যে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নবগঠিত নির্বাচন কমিশনকে সঙ্গত কারণেই স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে, এ কমিশন আগামীতে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হবে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি নির্বাচন কমিশন সম্বন্ধে তাদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা বলছে যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন এবং চাকরি জীবনেও তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে গড়ে ওঠা জনতার মঞ্চের একজন সংগঠক ছিলেন। তাই এ নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না তারা। এমনকি দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী শপথ নেয়ার আগেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে সরে যাবার জন্য আহŸান জানিয়েছেন কে এম নুরুল হুদার প্রতি। ফলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক আকাশে জমে ওঠা কালো মেঘ কেটে যাবার প্রত্যাশা যারা ইতোপূর্বে ব্যক্ত করেছিলেন, নতুন এ বিতর্কে তারা হতাশ হবেন সন্দেহ নেই। কেননা, এ বিতর্ক শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা নিয়ে অনেকেই শংকার মধ্যে রয়েছেন। কেউ কেউ এও বলছেন যে, নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জটিলতার অবসানের পরিবর্তে তা অধিকতর জটিল হওয়ার আশংকা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে এবার তাতে নতুনত্ব হয়তো ছিল, কিন্তু ফলাফল হয়েছে আগেরবারের মতোই। কমিশন সদস্যদের খুঁজে বের করার জন্য যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তারা আবার সে দায়িত্ব সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঁচটি করে নাম চেয়ে সার্চ কমিটি একটি অতি সূ² চাল চেলেছে। সার্চ কমিটির এ সিদ্ধান্তটি ছিল ক্ষমতাসীন দলেরই একটি কৌশল, যা দ্বারা বিএনপিকে একটি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা গেছে।
বস্তুত নির্বাচন কমিশন সদস্যদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের নয়। ওটা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার এবং তিনি যে সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন (যদিও তা সংবিধান পরিপন্থী), সে কমিটির দায়িত্ব ছিল। তাহলে সার্চ কমিটি কেন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাইল? রহস্যটা এখানেই। এটা অনেকে আগেই বলেছিলেন যে, রাষ্ট্রপতির কাছে সার্চ কমিটি ইসির জন্য দশটি নাম জমা দিলেও আওয়ামী লীগ তথা প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে যাদের নাম পাঠাবেন তিনি তাদের নামই ঘোষণা করবেন। আর বর্তমান বাস্তবতায় সেটা অস্বাভাবিকও নয়। একটি বিষয় অনকেরই হয়তো দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। তাহলো, সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে ইসির জন্য দশটি নাম জমা দেয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যেই পাঁচ জনের নাম ঘোষিত হওয়া। ৬ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর সার্চ কমিটির সদস্যরা বঙ্গভবনে যান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। সেখানে তারা ১০ জনের নাম হস্তান্তর করেন। রাত সাড়ে দশটায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কে এম নুরুল হুদা কমিশনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই যে তড়িঘড়ি, এটা অনেকের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। তাহলে কী পাঁচ জনের নাম আগেই ঠিক করা ছিল? এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য কখনোই পাওয়া যাবে না।
আর এ কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে গিয়ে বিএনপি পড়েছে মহা মুছিবতে। কেননা, শাসক দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, নব গঠিত নির্বাচন কমিশনে বিএনপি’র প্রস্তাবিত একজনকেও নেয়া হয়েছে। তিনি সাবেক অতিরক্তি সচিব এবং কবি ও ঔপন্যাসিক মাহবুব তালুকদার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম স্থান পেয়েছেন এমন প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। এসব প্রচারণার উদ্দেশ্য পরিষ্কার। শাসক দল জনগণকে এটা বোঝাতে চাচ্ছে যে, উভয় প্রধান দলের প্রস্তাবিত দু’জন নির্বাচন কমিশনার হওয়ায় নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হয়েছে। যদিও বিএনপি এখনো স্বীকার করেনি যে, মাহবুব তালুকদারের নাম তারা প্রস্তাব করেছিলো কী না। আর এ প্রচারণার কোনো প্রতিবাদও তারা করছে না। যদিও ‘মৌনতা সম্মতির লক্ষণ’ বলে এ ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হয়, তাহলে বলতেই হবে- বিএনপি সরকারের পাতা ফাঁদে স্বেচ্ছায়ই ধরা দিয়েছে। একা মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনে কতোটা দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে পারবেন সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
কথা উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের প্রস্তাব নিয়ে। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটি যাদের দ্বারা গঠিত হবে, তারা দল নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন- এটাই প্রত্যাশিত। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী এটা গঠিত হবে। রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের নিয়ে এবার নির্বাচন কমিশন গঠন করে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে- এমন অভিমত সচেতন ব্যক্তিদের।
এদিকে বিএনপি পরিষ্কার করেই বলছে যে, নতুন নির্বাচন কমিশন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ কমিশনের দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান আশাও করা যায় না। তারা এটাও বলেছেন যে, নতুন সিইসি আওয়ামী চেতনায় সাবেক সিইসি রকীব উদ্দিনের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। নবগঠিত ইসি সম্বন্ধে বিএনপি’র এ মনোভাব আগামী দিনে দলটির অবস্থানের একটা ইঙ্গিত দেয়। যদিও এখন পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার বিষয়ে বিএনপি কিছু বলেনি। তবে, পর্যবেক্ষক মহল বলছেন যে, নতুন ইসি সম্বন্ধে বিএনপি এখন যে ধরনের বক্তব্যই দিক না কেন, এ ইসির অধীনে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। কেউ কেউ বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হবে। যদিও দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি তোলার ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। তবে সে দাবি ক্ষমতাসীনরা কতটুকু মানবে, বা আদৌ মানবে কী না সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এদিকে নতুন সিইসি নিয়ে বিএনপি’র সমালোচনাকে দলটির ‘পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিক’ বক্তব্য বলে অভিহিত করেছেন কে এম নুরুল হুদা। গত ৮ ফেব্রæয়ারি বিএনপির সমালোচনা প্রসঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে একটি দৈনিককে তিনি বলেছেন, ‘আমি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ছিলাম, জনতার মঞ্চে আমি কখনোই ছিলাম না। এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। যারা রাজনীতি করেন বা কোনো রাজনৈতিক দল যে বক্তব্য দিচ্ছে, তা পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটিজিক বক্তব্য। এ নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।’ এর আগের দিন অর্থাৎ ৭ ফেব্রæয়ারি গণমাধ্যমে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছিলেন- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয় সব কিছু করব, এবং কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না।
যদিও এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত (১৩ ফেব্রæয়ারি রাত) কে এম নুরুল হুদার কমিশন শপথ নেয়নি বা দায়িত্ব গ্রহণ করেননি, তারপরও তার ওই অনানুষ্ঠানিক মন্তব্য তাৎপর্য ও গুরুত্ব বহন করে। বিএনপির বক্তব্যের বিপরীতে কোনো কথা না বলে তিনি সঠিক কাজ করেছেন এটা ঠিক। কিন্তু ১৯৯৬ সালের জনতার মঞ্চের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অনেকেরই জানা। বিশেষ করে কুমিল্লাবাসী তাদের এই প্রাক্তন জেলা প্রশাসক সম্বন্ধে তেমন সাক্ষ্যই দিচ্ছে। তবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয় তিনি সব করবেন বলে যে আগাম আশ^াস দিয়েছেন, তাতে আস্থা রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে কে এম নুরুল হুদার মতো একজন সবার অলক্ষে থাকা ব্যক্তির অধিষ্ঠান সচেতন মহলকে বিস্মিত করেছে। তাকে প্রাক্তন সচিব বলা হলেও কার্যত কর্মক্ষেত্রে তিনি সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি মোটেই। ২০০৩ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে গিয়েছিলেন যুগ্মসচিব থাকা অবস্থায়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাকরি ফিরে পান ২০০৬ সালে। তারপর ২০১০ সালে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিয়ে সচিব হিসেবে অবসরে যান। লক্ষণীয় হলো, কে এম নুরুল হুদা সচিব হিসেবে একদিনও দায়িত্ব পালন করেননি। এ রকম একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনের মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন কী না এ সন্দেহ রয়েছে অনেকের মনেই।
এককালের ছাত্রলীগ নেতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রথম জমানায় প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেয়া ব্যক্তিটি কতোটা নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করবেন, বা করতে পারবেন, সে প্রশ্ন অমূলক নয়। কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার যে কথা তিনি বলেছেন, সে সম্পর্কে রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিদের অভিমত হলো- সিইসি নুরুল হুদা বেহুদা কথা বলেননি। সরকারের পক্ষ থেকে তিনি তো কোনো চাপ অনুভব করবেন না। আগের নির্বাচনে দলের একজন প্রার্থীর পক্ষে একটি এলাকায় কাজ করেছেন, এবার কাজ করবেন সারা দেশে তার সমর্থিত দলের প্রার্থীদের পক্ষে। চাপ যা আসার বিএনপির পক্ষ থেকেই আসবে। আর সে চাপ আন্দোলনের চাপও নয়। সে চাপ হবে ‘শুদ্ধ ভাষা’র কিছু প্রেস ব্রিফিং আর ‘ঘরোয়া প্রতিবাদ সভা’ কিংবা প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় মানববন্ধনে বিএনপি নেতাদের ‘বায়বীয় আষ্ফালনে’র চাপ। সুতরাং, ওই চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করতে যাবেন কোন দুঃখে !
একটি সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশন আক্ষরিক অর্থেই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য হয় তখন, যখন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রধান দলটি তাদেরকে প্রচÐ চাপের মুখে ফেলতে পারে। বর্তমান বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ সরকার বা নুরুল হুদা কমিশনের সেরকম কোনো চাপের সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে উভয়ের যৌথ প্রযোজনায় দেশে আবারও একটি সাজানো নির্বাচন হতে যাচ্ছে- এ কথা বলা বোধ করি অতিশয়োক্তি হবে না। দলীয় সরকার বহাল থাকতে (আওয়ামী লীগের মতো) তাদেরই মনোনীত নির্বাচন কমিশন শিরদাঁড়া সোজা করে কাজ করবে এটা যারা আশা করেন, তারা বোকার স্বর্গেই বাস করছেন।
এদিকে গত ৯ ফেব্রæয়ারি প্রথম আলো- ‘নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে রকিব কমিশনের বিদায়’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে লিখেছে- “বিশ্লেষকদের মতে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, এই কমিশন তার পাঁচ বছরের মেয়াদে তা ধ্বংস করে দিয়েছে।” যদিও বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে কাজী রকীবউদ্দিন আহমেদ বলেছেন- ‘আমরা নির্বাচন ব্যবস্থাকে দুর্বল অবস্থায় নিয়ে যাইনি। দেশে কথায় কথায় মারামারি বেড়ে গেছে। এটা এক ধরনের অবক্ষয়।’ বিদায়ী সিইসি’র এ বক্তব্য যে কতোটা বাস্তবতা বিবর্জিত ও হাস্যকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) এর মুখে। তিনি বলেছেন-‘বর্তমান কমিশন যা করে গেছে তাতে কমিশনের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে।’ আর সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন- ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সময় লাগে, কিন্তু ভাঙতে সময় লাগে না। দুই দশকে অন্য কমিশন যা অর্জন করেছে, বর্তমান কমিশন (রকিব) তা বিসর্জন দিয়েছে। নতুন কমিশন আগের অবস্থানে ফিরে যেতে চাইলে তাকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।’
সরকারের তল্পী বহন, জ¦ী হুজুর মার্কা মনোভাব, চক্ষু লজ্জার মাথা খেয়ে সন্ত্রাস, ব্যালট ছিনতাই ও নজিরবিহীন কারচুপি এবং ভোটার বিহীন নির্বাচনকে ‘সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে রকিব কমিশন যে ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে গেছে, তার পুনরাবৃত্তি এদেশের কেউ-ই চায় না। তারা চায় নতুন নির্বাচন কমিশন মেরুদÐ সোজা করে দাঁড়াক, সংবিধান নির্দেশিত পথে চলুক এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় পদক্ষেপ নিক। কিন্তু যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে কমিশন প্রধানের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তাতে অনেকেই সান্দিহান হয়ে পড়েছেন ভবিষ্যত নিয়ে। তারা বলছেন যে, এটাও আরেকটি রকিব কমিশনই হবে। তবে হয়তো একটু ভিন্ন ধাঁচে, ভিন্ন অবয়বে এবং ভিন্ন কৌশলে। সন্দেহবাদীদের এ ধারণা কতোটা সঠিক কিংবা অমূলক তা দেখার জন্য আরো কিছুটা সময় তো অপেক্ষা করতেই হবে।
য় লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন