শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

বিএনপির কাউন্সিল হওয়া না হওয়ার পরিণতি

প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এস এম মোশারেফ হোসেন মুশু
আগামী ১৯ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বহুল প্রতীক্ষিত কাউন্সিলের সম্ভাব্য তারিখ বা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বহুল প্রতীক্ষিত বললাম এ জন্য যে, স্বাধীনতার ঘোষক ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দলটি বারবার কাউন্সিলের ঘোষণা দিলেও একদলীয় আওয়ামী লীগ সরকারের অতিশয় অত্যাচার থেকে উচ্চ থেকে মধ্যম পর্যায় পর্যন্ত অর্থাৎ কাউন্সিলে যাদের সম্পৃক্ততা অতীব জরুরি এমন নেতাদের মামলা দিয়ে জেলে ঢোকানোসহ নিত্যনতুন নানা ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করে বিএনপি তার কাক্সিক্ষত কাউন্সিল সম্পন্ন করতে পারেনি। বহুল প্রতীক্ষিত বলার আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন ক’মাস আগে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতীয়তাবাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় অবস্থান করছিলেন। ফিরে এসে অঙ্গ ও সহযোগীসহ মূল সংগঠনকে ঢেলে সাজাবেন এমনই প্রত্যাশা করেছিলেন নেতা-কর্মীসহ বিএনপির সমর্থক দেশবাসী। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, মাত্র ক’দিন আগে ষোল মাস আগে গঠিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ৭৩৬ সদস্যবিশিষ্ট বিশাল একটি কমিটি ঘোষণা করল। কমিটির আকার দেখে কেউ মন্তব্য করেছে, গিনেস বুকে নাম লেখাবে। কেউ বলেছে, এতদিন শুনেছি পর্বতের মূষিক প্রসব, এবার দেখলাম মূষিকের পর্বত প্রসব ইত্যাদি। আমাকে একজন রিপোর্টার কমিটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলেছিল। আমার মন্তব্য হলো, “কমিটি ভালো মন্দ এটা বলব না, তবে কমিটির আকার এত বড় যে, ছাত্রদলের যে কেউ নিজেকে কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে দাবি করলে তাকে শনাক্ত করা বেশ কঠিন অথবা ক্ষেত্রবিশেষে অসম্ভবও হতে পারে।”
যাই হোক কথায় আছে না, একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভালো, ছাত্রদলের বেলায়ও তাই, না হওয়ার চেয়ে যা হয়েছে তাই ভালো। নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও কয়েকটি ইউনিট কমিটি গঠন হয়েছে। এটা খারাপ কি? ছাত্রদল ছাড়া অন্যান্য সংগঠন যেমন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল এগুলোর পুনর্গঠন বা নতুন সম্মেলন হচ্ছে না অনকে দিন। অর্থাৎ বিএনপির রাজনীতিতে বিভিন্ন কমিটি কেন্দ্র/ শাখা খুব সহজে গঠন হয় না। আশা করা যায়, অতি দ্রুত এসব কমিটি গঠন হবে। আবার গঠন হলে এটা যতই খারাপ বা দুর্বলই হোক না কেন সহজে পুনর্গঠন হয় না। এ জন্য বলছি যে, যেহেতু কাউন্সিলের একটা সম্ভাব্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে সেহেতু এটা বহুল প্রতীক্ষিত। কাউন্সিল যতটা না প্রতীক্ষিত তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জরুরি। কারণ আমরা জানি, নির্বাচন কমিশনে আরপিও নামে কিছু বিধান রয়েছে। সেই বিধানের কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোকে আয়-ব্যয়ের হিসাব, গঠনতন্ত্র, কমিটি, সম্মেলন ইত্যাদি বিষয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে দলিল প্রমাণাদি তাদের কাছে জমা দিতে হয়। অন্যথায় নির্বাচন কমিশন দলের নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিলও করতে পারে। কাউন্সিল করার জন্য বিএনপি নির্বাচন কমিশন থেকে বারবার সময় বর্ধিত করেও কাউন্সিল করতে পারেনি। পারেনি কেন তা আগেই বলেছি। অর্থাৎ শাসকগোষ্ঠীর বাধা, অসহযোগিতা ও নানা ষড়যন্ত্রের কারণে।
এক্ষেত্রে বিএনপির ভাগ্য ভালোই বলা চলে যে, কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করেনি। করেনি এ জন্য বিএনপি ডান-বাম মিলিয়ে দেশি-বিদেশিদের নিকট একটি প্রগতিশীল দল বলে গণ্য। অন্যথায় আমার মনে হয়, নির্বাচন কমিশন আরও আগেই নিবন্ধন বাতিল করে দিতে পারত। কারণ এই সরকারের আমলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অর্গান ভিন্ন মত, দল, আদর্শ দমনে কীভাবে কাজ করছে তা জনগণ ছাড়া আর কেউ টের পাচ্ছে বলে মনে হয় না, হোক সে অর্গানগুলো সাংবিধানিক বা সরকারের অংশ। অতএব সাধু সাবধান! নিবন্ধন বাতিল করেনি, করতে কতক্ষণ? রাজনৈতিক বোদ্ধারা ধারণা করেন কিনা জানি না। তবে সাধারণ মানুষ মনে কওে, বিএনপি এবার আওয়ামী লীগের আগে কাউন্সিল করতে না পারলে নিশ্চিত নিবন্ধন বাতিল করে দিতে পারে। কারণ বিএনপি তখন বলতে পারবে না যে, আওয়ামী লীগকে তো সময় দিচ্ছেন বা তাদেরও তো কাউন্সিল বাকি আছে। আর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়ে গেলে কমিশনও মনে করতে পারে যে, এখন নিবন্ধন বাতিল করলে দৃষ্টিকটু দেখাবে না। তবে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সম্পন্ন হওয়ার আগে বা সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি যদি কাউন্সিল করতে না পারে কমিশন কিছু করুক আর না করুক, শাসকচক্র যে বিএনপিকে নিয়ে একটি নতুন চাল চালবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
সরকার যে চালটা চালার চেষ্টা করবে সেটা হলো তথাকথিত আসল বিএনপিকে দিয়ে গভীর রাতে একটা কাউন্সিল করিয়ে নিতে চাইবে এবং এটা করানো সম্ভব হবে এ জন্য যে, এ দলে এমন এমন নেতা রয়েছেন যারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজরিত, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৪০ বছরের হৃদয়ের বন্ধন ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে যখন এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয় তখন বরিশাল জেলার এক বিএনপি সাংসদ সরকারি ত্রাণের টিন ভাগবাটোয়ারা করছিলেন। এই নেতাকেই একদিন ওয়ান-ইলেভেনের সময় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সম্মুখে পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম- ভাই, আপনি তো অমুক আপার লোক, আপাতো তার গুলশানের বাড়ি রক্ষার্থে ব্যারিস্টার মঈনুল সাহেবের কাছে যায় আর ম্যাডামের (খালেদা জিয়ার) বিপক্ষে মিটিং করে, আপনিও কি তার সঙ্গে? না ম্যাডামের পক্ষে? তিনি জবাব দিলেন, না আমি ম্যাডামের পক্ষে। অথচ পরে জানতে পারি তিনিও সংস্কারপন্থী হিসেবে ঢাকা এবং বরিশালের অধিকাংশ সভায় উপস্থিত থাকেন। বিএনপিতে তো সেসব লোকজন এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। ওয়ান-ইলেভেনে দেশনেত্রী গৃহবন্দী থাকাবস্থায় দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপ জেলার একটি থানার সাধারণ সম্পাদক খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিকনফারেন্সে কথা বলেছিলেন। সেই অপরাধে ওই সাধারণ সম্পাদককে বকাঝকা করে দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি বিএনপির সদস্য পদেও নেই। অথচ এসব লোকদের (যিনি ওই সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়েছেন) খালেদা জিয়া অতি আদর-¯েœহ দিয়ে ডাকসাইটে ছাত্রনেতা বানিয়েছিলেন, এমপি বানিয়েছেন, মন্ত্রীর মর্যাদা পর্যন্ত দিয়েছেন। এরাই সময়-সুযোগে ছোবল মারতে চায় শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে।  
আর এ জন্যই বলছি যে, এরকম কিছু নেতাকে ডেকে ভয়ভীতি, লোভ দেখিয়ে একটি রেজ্যুলেশন দাঁড় করিয়ে ‘বিএনপি’কে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা শাসক চক্রের নিকট খুব কঠিন কাজ হবে না বলেই ধরে নেয়া যায়। এই লেখা পর্যন্ত বিএনপি কাউন্সিল করার ভেন্যু পায়নি বা নির্ধারণ করতে পারেনি। সরকার ভেন্যু দিক আর না দিক, সরকারের পুলিশ অনুমতি দিক বা না দিক, বিএনপির অবশ্য কর্তব্য হবে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আগেই যে কোনো মূল্যে বিএনপির কাউন্সিল সম্পন্ন করা। হয় যদি সেটা এক দিনের নোটিশে, হোক সেটা নয়াপল্টনের অফিসে, এমনকি বাংলার রাখাল রাজা শহীদ জিয়ার পবিত্র জন্মস্থান বাগমারার খোলা মাঠে তাতেও সমস্যা নেই। বিএনপিকে দেখাতে হবে যে, আমাদের ডেলিগেটরা কাউন্সিল সম্পন্ন করেছেন এবং এই আমাদের রেজ্যুলেশন। তাহলেই বিএনপিকে নিয়ে একদলীয় সরকার যে চালটা চালার দিকে এগোচ্ছে সেটা আপাতত বুমেরাং হয়ে যাবে।
উপরে বিএনপির দু-একজন সুবিধাবাদী/ষড়যন্ত্রকারী নেতার উদাহরণ দিলাম। তবে এদের সংখ্যা খুব বেশি নয়, একটু হিসাব করলে বের করা খুব সহজ। বিপরীত দিকে ত্যাগী নেতাদের সংখ্যা হিসাব করা অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন। কারণ এদের সংখ্যা যাই হোক না কেন? দলের কর্মীরা এদের কাতারে। তাই ত্যাগীদের কাতার বিএনপিতে বেশ লম্বা এবং বেশি। কাউন্সিলের কাজে ত্যাগীদের যত বেশি কাজে লাগানো যাবে কাউন্সিল তত নির্ভেজাল ও সফল হবে। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো গঠন ও পুনর্গঠনের সময় দুটি বিষয় আলাদা করে দেখতে হবে : এক. যারা দেশকে ভালোবেসে শহীদ জিয়ার দল করে; দুই. যারা নিজেদেরকে রক্ষাকল্পে এই দল করে। প্রশ্ন জাগতে পারে বিএনপি করলে আবার রক্ষা হয় কীভাবে? সেটা এভাবে যে, কিছু লোকের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অপরাধ বা সহায়-সম্পত্তির অবৈধ অর্জন এত বেশি যে শাসকচক্র চাইলেই এদের পাকড়াও করতে পারে। পাকড়াও করলে শাসকচক্রের তেমন লাভ হয় না। তার চেয়ে বরং এদেরকে যদি বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখে চাপে রাখা যায় বা কিছু সুবিধা দেয়া যায় তাহলে তারা (শাসকচক্র) বরং বেশ কিছু রাজনৈতিক ক্লু হস্তগত করতে পারে, যা ব্যবহার করে বিএনপিকে কাবু করা সহজ হয়। এটা যুগে-যুগে, দেশে-দেশে,  স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপে হয়ে আসছে, চলতে থাকবে। এখানে যারা বেশি সতর্ক ছিল বা আছে, তারাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ছিল বা থাকবে। উপরে যে দুই শ্রেণির কথা বলছিলাম, তাদেরকে দুইভাবে মূল্যায়ন করতে হবে এবং এর মধ্যেই দলের আগামী দিনের অগ্রযাত্রা নিহিত।
এবার একজন বিএনপি নেতার কথা লিখতে চাই যিনি ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বলেছিলেন, ‘দেশের অবস্থা এত খারাপ যে, আমাকেও যে কোনো সময় গুম করা হতে পারে’। উপস্থিতদের মধ্যে জনৈক জিজ্ঞস করলেন, আপনার মতো একজন ভদ্রলোককে গুম করবে কেন? ওই নেতা ২০১৫ সালের গোড়ার দিকে ঠিকই গুম হয়েছেন। আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচেও আছেন। আমি বুঝাতে চেয়েছি গুম হওয়া নেতার জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জেনে-বুঝে দলীয় দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় গুম হয়েছেন। পাশাপাশি এমন নেতাও দেখছি বা দেখা যায় দলের সমূহ বিপদের আভাস পাওয়া মাত্রই ঠুনকো অজুহাতে যুক্তরাজ্যে-যুক্তরাষ্ট্রে তাদের গমন ও অবস্থান। বিপরীতধর্মী এই দুই অবস্থানকে কোনোভাবেই এককাতারে রাখা যাবে না। সবশেষে বলতে চাই, বিএনপির অস্তিত্বের সঙ্গে দেশের অস্তিত্ব অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দেশকে বাঁচাতে হলে বিএনপিকে টিকে থাকতে হবে। বিএনপিকে টিকে থাকতে হলে কাউন্সিল হতেই হবে এবং তা অবশ্যই শাসক দলের কাউন্সিলের আগে।
কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে জেলা-থানার সম্মেলন শুরু হয়েছিল, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে উপলক্ষ করে সেগুলো স্থগিত রয়েছে। স্থগিত হওয়াটা সংগঠনের স্বার্থে সর্মথনযোগ্য নয়। কারণ এই নির্বাচনের ফলাফল কি হবে গত ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচন থেকে দেশবাসী জেনে গেছে। জানার যদি একটু কমতি থাকে সেটা বিএনপির থাকতে পারে। তা না হলে এটা তো পাগলেও বুঝে যে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিএনপির পুনর্গঠন বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার তড়িঘড়ি করে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে তফসিল ঘোষণা করিয়েছে। আর বিএনপি সরকারের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে, তাল না মেলালে একদিকে নির্বাচন চলত অন্যদিকে পুরোদমে থানা-জেলার সম্মেলনগুলো সম্পন্ন হতো। সরকার এরকম বছরের পর বছর কোনো না কোনো নির্বাচন বা অজুহাত তৈরি করে বিগত দিনের মতো বিএনপিকে ব্যস্ত রাখতে চাইবে-এটাই বাস্তবতা। তাই বলে থানা-জেলার সম্মেলনের মতো কেন্দ্রীয় কাউন্সিল কোনোক্রমেই স্থগিত বা বাতিল করা যাবে না। এমনকি সরকার এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও। বিভিন্ন শাখার সম্মেলন একটু পরে হলে সংগঠন অল্প-বিস্তর ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা থাকা স্বাভাবিক কিন্তু জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন না হলে জাতীয় নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের দিন পর্যন্ত বিএনপিকে ছিনতাই করার চেষ্টা করবে সরকার। অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই সময়ে কাউন্সিলই বিএনপির একমাত্র ব্রত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
লেখক : রাজনৈতিক কর্মী
mushu.5795@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন