শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আমেরিকান স্পিরিট পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের

কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম ভাষণ

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অভিবাসন প্রশ্নে নরম সুর : মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল কমপ্লেক্সে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেয়া প্রথম ভাষণে ‘আমেরিকান স্পিরিট পুনরুদ্ধার’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিবিসি জানিয়েছে, (স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার রাতে) বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার সকালে দেয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আশাবাদের এক নতুন ঢেউ অসম্ভব সব স্বপ্নকেও দৃঢ়ভাবে আমাদের মুঠোবন্দি করতে শুরু করেছে। ভাষণে তিনি ইহুদিদের কবরস্থানগুলোতে সা¤প্রতিক ভাঙচুরের ঘটনা এবং কানসাসে জাতিগত ঘৃণায় এক ভারতীয়কে গুলি করে হত্যার নিন্দা জানান। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ যা ঘৃণা ও অনৈতিকতার নিন্দায় একতাবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘটনাবহুল শুরুর পর তলানীতে নেমে যাওয়া জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনাই তার এ ভাষণটির লক্ষ্য ছিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এক ঘণ্টার ভাষণে তিনি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ও যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেয়ার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অভিবাসন নীতির বাস্তব ও অনুক‚ল সংস্কার সম্ভব। এর কয়েক ঘণ্টা আগে হোয়াইট হাউজে সংবাদ উপস্থাপকদের এক মধ্যাহ্নভোজে তিনি জানিয়েছিলেন, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন তিনি। এই মন্তব্য তার অভিবাসন নীতি থেকে সরে আসার বড় ধরনের ইঙ্গিত। কংগ্রেসের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের অভিবাসন আইনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে আমরা মজুরি বাড়াতে পারব, বেকারদের সাহায্য করতে পারব, শত শত কোটি ডলার বাঁচাতে পারব এবং আমাদের সমাজকে সবার জন্য নিরাপদ করে তুলতে পারব। এই ভাষণ ছিল প্রেসিডেন্টের গতানুগতিক ভাষণ, গতানুগতিভাবেই তা সারা হয়েছে। অন্য কোনো বছর হলে এর প্রতি হয়তো তেমন মনোযোগই দেয়া হতো না। কিন্তু ট্রাম্পের যুগে সাধারণ বিষয়গুলোই অবিশ্বাস্য হয় ওঠে, কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতের ভাষণটি ছিল ব্যতিক্রম। ভাষণের অনেকগুলো বিষয়ই আগের মতো একই ছিল, সেই নিরাপত্তা বাড়ানোর ডাক, অবৈধ অভিবাসীদের নিন্দা, আমেরিকানদের কাজ ও চাকরি দিয়ে আমেরিকাকে পুনর্গঠন করার প্রতিশ্রæতি, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাদের অংশের চাঁদা ঠিকভাবে দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করা ইত্যাদি। তবে এই প্রথম এগুলো বলা হল স্বাভাবিকভাবে। একবার হলেও ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প কথা বললেন, কিন্তু চিৎকার করলেন না, জানিয়েছে বিবিসি।
ভাঙন নয় বরং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে আমেরিকার পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার আহŸান জানিয়েছেন ট্রাম্প তার ভাষণে। ট্রাম্প বলেছেন, আলোকবর্তিকা এখন আমাদের হাতে। আমরা একে বিশ্ব আলোকিত করতে ব্যবহার করব। আমি এখানে এসেছি একতা ও শক্তিশালী হওয়ার বার্তা দিতে এবং এই বার্তা আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আসা। আমেরিকাকে মহান করার নতুন অধ্যায় এখন থেকে শুরু হলো। একটি নতুন জাতীয় অহঙ্কার আমাদের দেশজুড়ে বয়ে যাচ্ছে এবং আশাবাদের ঢেউ জেগে উঠেছে, অসম্ভব স্বপ্নগুলো আমাদের মুষ্টিবদ্ধ হতে যাচ্ছে।
কংগ্রেসে তার প্রবেশের পর রিপাবলিকান সদস্যরা উঠে দাঁড়ালেও ডেমোক্র্যাটরা তাদের আসনেই বসা ছিলেন। কংগ্রেসে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রবেশ করেছিলেন তার স্ত্রী মেলানিয়াও। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই ভাষণের শব্দ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৫৯৬টি । অবশ্য তার পূর্বসূরি ওবামার ভাষণে শব্দ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৮২৪টি। স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত আলোচিত ওবামা কেয়ার বিল বাতিলেরও ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এর জায়গায় নতুন স্বাস্থ্যনীতির বিষয়ে তিনি কিছুই জানাননি। ট্রাম্প বলেন, আমি কংগ্রেসকে ওবামা কেয়ার বাতিলের আহŸান জানাচ্ছি। এর পরিবর্তে স্বল্প ব্যয়, ব্যাপক সুযোগ, আরো বিস্তৃত এবং একই সময় আরো ভালো স্বাস্থ্যসেবার বিধান রেখে নতুন স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের আহŸান জানাচ্ছি। ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে দমনের ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে এর জন্য তিনি মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নেরও ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী, মুসলিম ও খ্রিষ্টান নারী-পুরুষ এবং সব ধর্ম ও বিশ্বাসের শিশুদের হত্যাকারী আইএসকে ধ্বংসের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে আমি নির্দেশ দিয়েছি। আমরা এই জঘন্য শত্রæকে বিশ্ব থেকে নির্মূলের জন্য মুসলিম বিশ্বসহ আমাদের মিত্রদের সঙ্গে কাজ করে যাব।
অভিবাসন প্রশ্নে সুর নরম করলেন ট্রাম্প
অভিবাসন প্রশ্নে নিজের কট্টর অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি ‘অনিবন্ধিত অভিবাসীদের মধ্যে যাদের অপরাধকর্মের রেকর্ড নেই এবং যারা কর্মী হিসেবে দক্ষ, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার রক্ষার ইঙ্গিত দেন। তবে অভিবাসন নীতি বদলের প্রশ্নে পূর্বের অবস্থানেই রয়েছেন এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। এদিন মেধাভিত্তিক নতুন অভিবাসন নীতি গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করি, বিশ্বকে নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র নিয়েই আমাকে ভাবতে হয়। তাই বর্তমানে অভিবাসন নীতি পাল্টে মেধা ভিত্তিক অভিবাসন নীতি শুরু করতে চান ট্রাম্প। ভাষণে তিনি বলেন, অ-নথিভুক্ত অভিবাসীদের আগমন ঠেকিয়ে দক্ষ অভিবাসী নিলে যুক্তরাষ্ট্রের জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘ আমরা যদি মার্কিন নাগরিকদের ভালোর কথা চিন্তা করি তবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এতে করে বিগত কয়েক দশক ধরে চলা সঙ্কটের সমাধান হবে।’ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই অভিবাসীদের নিয়ে বিরূপ ও নেতিবাচক মন্তব্য করা ট্রাম্প এবার অভিবাসীদের প্রতি আরও সহানুভ‚তিশীল হবেন বলে ইঙ্গিত দেন। এর আগে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, অভিবাসনের ব্যাপারে কিছুটা শিথিল হবেন তিনি। ট্রাম্পের এমন মনোভাবে ডেমোক্র্যাটদের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অবাক হয়েছেন রিপাবলিকানদের একাংশও।
ট্রাম্প প্রশাসন থেকে অভিবাসন নীতির ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, এক কোটিরও বেশি অভিবাসী দেশটিতে অবৈধভাবে বাস করছে। তারা হয়তো কোনো আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন। তবে যারা শিশু অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন তাদের ব্যাপারে হয়তো ব্যতিক্রমী কিছু হতে যাচ্ছে। এদিকে ফ্লোরিডার সিনেটর রিপালিকান নেতা মার্কো রুবিও চার বছরের জন্য তৈরি করা একটি অভিবাসন নীতি সামনে এনে বলেন, এই ফরম্যাটের ব্যাপারে তিনি আগ্রহী। তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষ অভিবাসন নীতি পরিবর্তনের পক্ষে। তবে তাড়াহুড়ো করে করতে গেলে এনিয়ে বিতর্কের জন্ম হতে পারে। তাই আমরা অনেক সময় নিয়ে, পরিকল্পনা করে কাজটি করব। নাগরিকত্ব দেয়ার চেয়ে তারা আইনি বৈধতা কিংবা অন্যরকম কোনো চুক্তিতে আসতে পারেন বলে মন্তব্য করেন এই রিপাবলিকান নেতা।
আমরা মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করব
এদিকে, আমেরিকাকে আবার মহান হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আমরা বিশ্বের মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করব। সেই মহানুভবতার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলেও জানান ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রæয়ারি) রাতে (বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার সকালে) দেশটির ক্যাপিটল কমপ্লেক্সে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বক্তৃতায় ট্রাম্প এমন প্রত্যয়ের কথা জানান। ট্রাম্প বলেন, আমরা অবশ্যই আমেরিকান কোম্পানি ও শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করবে। ঐতিহাসিক ট্যাক্স সংস্কারে তার টিম কাজ করছ জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, কোম্পানিগুলোর ওপর থেকে আমরা ট্যাক্সের হার কমাব, যাতে তারা এবং যে কেউ যেখানে ইচ্ছে সেখানে কাজ করে উন্নতি লাভ করতে পারে। মধ্যবিত্তদের জন্য বড় ধরনের ট্যাক্স ছাড় দেয়ার কথাও জানান তিনি। ‘যারা আমাদের ক্ষতি করবে তাদের আমরা বের করে দেবো, আমাদের জাতির সুরক্ষার জন্য আমরা নতুন পদক্ষেপ নেবো’- বলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম এ প্রেসিডেন্ট বলেন, নতুনরা অসম্ভব স্বপ্নের জয়গা দখল করে নিচ্ছে। আমেরিকান মহানুভবতার নতুন অধ্যয় এখন উন্মুক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে ইহুদি সমাধিস্থলে সন্ত্রাসবাদের ঘটনায় নিন্দাও করেন তিনি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিরাপত্তা ও কাজের উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করার মধ্যদিয়ে বাস্তব ও ইতিবাচক অভিবসান নীতি পুনর্গঠন করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
রেকর্ড ভেঙে নিহত সেনার স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে সম্মান
অন্যদিকে, ইয়েমেনে আল-কায়দার হামলায় নিহত মার্কিন নৌ-সেনা চিফ উইলিয়াম রায়ান ওয়েন্সের স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা ও সম্মান জানাল কংগ্রেস। গতকাল মার্কিন কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ভাষণের দিন প্রেসিডেন্টের সম্মানিত অতিথি হিসেবে কংগ্রেসে উপস্থিত ছিলেন উইলিয়ামের স্ত্রী ক্যারেন ওয়েন্স। ফার্স্ট ডটার ইভানকা ট্রাম্পের সঙ্গে আসন গ্রহণ করেন ক্যারেন। ট্রাম্প বলেন, আমরা এই মুহূর্তে ক্যারেন ওয়েন্সের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে গর্ববোধ করছি। তার হাজব্যান্ড উইলিয়াম আমেরিকার নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তিনি একজন যোদ্ধা ও নায়ক। রায়ান মৃত্যুবরণ করে বেঁচে আছেন। বাইবেল আমাদের শিখিয়েছে বন্ধুর জন্য জীবন উৎসর্গ করার চাইতে মহৎ কাজ আর নেই। রায়ান তার বন্ধুর জন্য, দেশের জন্য, আমাদের স্বাধীনতা অক্ষুণœ রাখার জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা তাকে ভুলব না। এই সময় ট্রাম্প কংগ্রেসের প্রতি ক্যারেনকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানোর আহŸান জানান। ক্যারেন তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয়পক্ষের আইনপ্রণেতারা ওই মুহূর্তে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আমেরিকার ইতিহাসে এই প্রথমবার দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস কাউকে সংবর্ধনা ও সম্মান জানাল। কংগ্রেসের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় ধরে তার প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে। সূত্র : ডেইলি মেইল, বিবিসি, রয়টার্স ও নিউইয়র্ক টাইমস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন