বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

দুইশ বছরের দোরগোড়ায় বাংলা সংবাদপত্র

| প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল : আমরা বাংলাদেশি। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অতি প্রাচীন। জাতি হিসেবে আমাদের যেমন একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তেমনি সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায় আমাদের ঐতিহ্য দুইশ বছরের প্রাচীন। বাংলা সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যা যেমন অধিক, তেমনি আবার বিভিন্ন রকমের। পাঠকগণ বাজারজাতকারী সকল পত্রিকাই পড়েন। কিন্তু কোনো কোনো পত্রিকার প্রতি তাদের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছেÑ এটা পাঠকের ব্যক্তিগত অভিরুচির ওপর নির্ভর করে।
বাংলা সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু হয় ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসে। অর্থাৎ এখন থেকে ১৯৯ বছর আগে। সে সময় ‘দিগদর্শন, বাঙাল গেজেট ও সমাচার দর্পণ’ নামে তিনটি সাময়িকপত্র প্রকাশিত হতো। দিগদর্শন বাংলার প্রথম সাময়িকপত্র যা শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন থেকে প্রকাশিত হতো। এটির সম্পাদক ছিলেন জনক্লার্ক মার্শম্যান। আর বাঙাল গেজেটের সম্পাদক ছিলেন গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্য। সমাচার দর্পণের সম্পাদক ছিলেন মার্শম্যান। এদিকে ১৮৩৯ সালে সাপ্তাহিক ‘সংবাদ প্রভাকর’ বের করেন কবি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত, পরে অবশ্য সংবাদ প্রভাকর দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৮৫৬ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ‘ঢাকা নিউজ’। পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় এপ্রিল, ১৮৫৬ সাল। যার সম্পাদক ছিলেন গুরুগঙ্গা নামের একজন সাংবাদিক। ‘ঢাকা প্রকাশ’ যাত্রা শুরু করে ১৮৬৪ সালে।
বাংলায় প্রথম ছাপাখানা জেমস অসাস্টাহিকি ১৭৭৭ সালে স্থাপন করেন। গঙ্গা কিশোর কলকাতায় প্রথম ‘বাঙাল প্রেস’ নামে ছাপাখানা স্থাপন করেন। বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র বাঙাল গেজেট এই ছাপাখানা থেকে ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৫১ এর দিকে এই ভ‚খÐ থেকে প্রকাশিত হয় দৈনিক সংবাদ। প্রখ্যাত সাংবাদিক সানাউল্লাহ নুরী রচিত ‘যখন সাংবাদিক ছিলাম’ গ্রন্থ হতে জানা যায়, ১৫ মে ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। দৈনিক সংবাদ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন খায়রুল কবির। দৈনিক সংবাদ এখনো তার পাঠকের চাহিদা মিটিয়ে এগিয়ে চলছে মহাকালের দিকে। বাংলাদেশের আরও একটি পুরনো সংবাদপত্রের নাম ‘দৈনিক ইত্তেফাক’। যার সম্পাদক ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। প্রথম দিকে ইত্তেফাক সাপ্তাহিক ছিল। পরবর্তীতে ইত্তেফাক দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সম্পাদনায়। ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালের দিকে। লাখ লাখ পাঠকের চাহিদা পূরণ করে ইত্তেফাক এখনো পাঠকপ্রিয়তা বজায় রাখতে সক্ষম রয়েছে। এই দুটি সংবাদপত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এ পত্রিকা দুটির অনেক সাংবাদিক সরাসরি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। জাতি তাদের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পাকবাহিনী সংবাদ অফিস পুড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কিছু পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ঢাকা হতে। এগুলো হলো দৈনিক দিনকাল, দিনকাল ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় সানাউল্লাহ নুরীর সম্পাদনায়। বর্তমানে পত্রিকাটির সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী। পত্রিকাটি বিএনপির দলীয় মুখপাত্র হিসেবে দেশে পরিচিত। বাংলাদেশের আরও একটি জনপ্রিয় ও পাঠকপ্রিয় পত্রিকার অন্যতম হলো দৈনিক ইনকিলাব। মাওলানা এমএ মান্নান প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাবের সম্পাদক হলেন এএমএম বাহাউদ্দীন। ৪ জুন ১৯৮৬ ইনকিলাবের প্রকাশ শুরু হয়। এএমএম বাহাউদ্দীন দীর্ঘ ৩১ বছর পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। অন্যদিকে আমাদের পাঠক সমাজে বাংলাদেশের একমাত্র টেবলয়েড পত্রিকা হিসেবে পরিচিত ‘মানবজমিন’। ক্রাইম রিপোর্টের জন্য সুপরিচিত এ পত্রিকার যাত্রাকাল হলো ১৯৯৭। দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। বাংলাদেশের প্রভাবশালী দৈনিকগুলোর মধ্যে একটি হলো দৈনিক যুগান্তর। দৈনিকটির সম্পাদক সাইফুল আলম। দৈনিক ভোরের কাগজ এদেশে আরো একটি জনপ্রিয় সংবাদপত্র। পত্রিকাটির বর্তমান সম্পাদক শ্যামল দত্ত। মতিউর রহমান সম্পাদনা করেছেন দৈনিক প্রথম আলো। দৈনিকটির দাবি প্রচার সংখ্যায় তারা শীর্ষে।
২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রের আবির্ভাব ঘটে। এগুলো হচ্ছে দৈনিক সমকাল, দৈনিক যায়যায়দিন ও দৈনিক নয়া দিগন্ত। নয়া দিগন্তের সম্পাদক হলেন আলমগীর মহিউদ্দিন। আরেকটি জনপ্রিয় পত্রিকা সমকাল। পত্রিকাটির সম্পাদক গোলাম সরওয়ার। আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সম্পাদিত দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকাটি বেশ জনপ্রিয়। পত্রিকাটি ১৯৯২ সালে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশ প্রতিদিন দেশের সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্র। পত্রিকাটির সম্পাদক নঈম নিজাম। দৈনিক যায়যায়দিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রুকুনউদ্দিন আহমেদ। ভিন্নধর্মী সংবাদপত্র ‘আমাদের সময়’। সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান। দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার সম্পাদক গিয়াস কামাল চৌধুরী, দৈনিক আমার সংবাদের সম্পাদক হাশেম রেজা। দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।
এ ছাড়া ঢাকার বাইরে কয়েকটি পত্রিকা হলো চট্টগ্রামের আজাদী, কর্ণফুলী ইত্যাদি। পশ্চিমাঞ্চলের বিখ্যাত সংবাদপত্র দৈনিক করতোয়া। কুমিল্লার আমোদ, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা, মুন্সীগঞ্জের দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজ আঞ্চলিক পত্রিকা হিসেবে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছে। ঢাকা থেকে আরো বেশ কিছু জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে বেগম, রোববার, অননন্যা, বর্তমান, দিনকাল, বিনোদন, সময়ের বিবর্তন ইত্যাদি। আবার ক্রীড়া ম্যাগাজিন ক্রীড়া জগৎ, ক্রীড়ালোক ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশের শতাধিক জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক প্রকাশিত হচ্ছে।
যারা বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহ, প্রকাশনা ও এডিট করেন তারা সাংবাদিক। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেন। জাতীয়, আন্তর্জাতিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য, খেলাধুলা, শিক্ষা সব ধরনের আইটেম থাকে একটি সংবাদপত্রে। সব ধরনের পাঠকের খোরাক থাকে, থাকে বিভিন্ন দিন, বিভিন্ন স্বাদের পৃষ্ঠা। বাংলা ভাষায় ও বাংলাদেশের কোটি কোটি পাঠক ভুলবে না আমাদের সংবাদপত্রের দিকপাল কাঙ্গাল হরিণাথ, আহমদ কবির, খায়রুল কবির, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সত্যেন সেন, সানাউল্লাহ নুরী, কবি শামসুর রাহমান, নাসির উদ্দিনের নাম। তাদের হাত ধরেই আজকের সংবাদপত্রের বিকাশ। একটি সংবাদপত্র, সংবাদকর্মীরা দেশ ও জাতির অকৃত্রিম বন্ধু।
য় লেখক : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন