শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

দুর্নীতির সর্বনাশা চিত্র ও উত্তরণের পথ

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জালাল উদ্দিন ওমর : দুর্নীতির কারণে বিশে^ প্রতি বছর দুই লাখ কোটি ডলার নষ্ট হয়। অথচ এই অর্থ দিয়ে বিশ্বের চারটি বড় সমস্যার সমাধান সম্ভব। সমস্যাগুলো হচ্ছে ক্ষুধা নিবারণ, ম্যালেরিয়া দূর, অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন এবং শিশুদের মৌলিক শিক্ষা দেয়া। ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের (ডবিøউইএফ) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ক্ষুধা নিবারণ নিয়ে বলা হয়েছে, ইয়েমেন থেকে মাদাগাস্কার পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দুর্ভোগের শিকার বিশে^র বহু মানুষ। সব মিলিয়ে বিশে^র ৮০ কোটি মানুষ ঠিকমত খাবার পায় না। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ হিসাব করে দেখেছে, বছরে ১১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করলে এ সমস্যা মেটানো যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে বিশে^র ২১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং ৪ লাখ ২৯ হাজার মানুষ মারা যায়। অথচ গবেষকরা হিসাব করে দেখেছেন ৮৫০ কোটি ডলারের একটি তহবিল থাকলেই ১৫ বছরের মধ্যে বিশ^ থেকে ম্যালেরিয়া দূর করা যাবে। আর শুরুর দিকে এ জন্য ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের জন্য দরকার পড়বে মাত্র ৬০ কোটি ডলার।
বিভিন্ন দেশে রাস্তাঘাট ও সেতুর বড় অভাব এবং প্রকট বিদ্যুৎ সমস্যার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশে^ অবকাঠামো খাতে বছরে ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার। তার পরও ঘাটতি রয়ে গেছে আরো এক লাখ কোটি ডলারের। গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী শুধু দুর্বল অবকাঠামোর কারণেই বিশে^র মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৪ লাখ কোটি ডলার যোগ হতে পারছে না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশে^র বহু শিশু এখনো মৌলিক শিক্ষা অর্থাৎ বিদ্যালয়ে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত। গবেষকরা ২০১৪ সালের এক হিসাবে দেখিয়েছেন বছরে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করলে বিশে^র ৪৬টি নিম্ন ও নিম্ন মধ্যমআয়ের দেশের শিশুদের মৌলিক শিক্ষা দেয়া সম্ভব। আর এটি করা গেলে তাদের প্রত্যেকের আয় বাড়বে ১০ শতাংশ এবং জিডিপিতেও তা উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখবে। এই হচ্ছে দুর্নীতির কারণে বিশ^ব্যাপী মানব সমাজে সৃষ্ট বিপর্যয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ। সুতরাং বিশ^ব্যাপী মানুষের জীবনকে উন্নত এবং সুখী করতে হলে দুর্নীতি নির্মূলের কোন বিকল্প নেই। সুতরাং আসুন দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ গড়ার জন্য একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।
দুর্নীতি মানবজাতির জন্য একটি ক্যান্সার। ক্যান্সার যেমন মানব দেহের সকল কিছুকে ধ্বংস করে দেয়, ঠিক তেমনি দুর্নীতিও একটি জাতির সকল সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়। চরিত্র হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। মানুষের যখন চারিত্রিক গুণাবলী ধ্বংস হয়ে যায়, তখন সে শুধু অপকর্ম করতে থাকে। দুর্নীতিই হয়ে ওঠে চরিত্রহীন মানুষের প্রধান কাজ। ইংরেজিতে প্রবাদ আছেÑ ডযবহ সড়হবু রং ষড়ংঃ হড়ঃযরহম রং ষড়ংঃ, যিবহ যবধষঃয রং ষড়ংঃ ংড়সবঃযরহম রং ষড়ংঃ, নঁঃ যিবহ পযধৎধপঃবৎ রং ষড়ংঃ বাবৎুঃযরহম রং ষড়ংঃ.। এাঁ আসলেই সত্যি যে, চারিত্রিক অধঃপতনের কারণে আজ আমাদের সবই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সমাজে শান্তি এবং জাতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে হবে। এ জন্য দুর্নীতিকে নির্মূল করতে হবে। আমি মনে করি, কেবল মাত্র আইন করে এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি নির্মূল করা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন করা কিছুতেই সম্ভব নয়। দুর্নীতি নির্মূল ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন করতে প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত মানুষ অর্থাৎ সৎ মানুষ। কারণ আইনের প্রয়োগ যিনি করবেন, তিন যদি সৎ না হন তাহলে সেখানে আইন যথাযথ কার্যকর হয় না এবং সেটাই দুর্নীতি। একটি গাড়ি যতই ভালো হউক না কেন, ড্রাইভার যদি ভালো না হন তাহলে ঐ গাড়ি যাত্রীদের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। তিনি কেবল যাত্রীদের জন্য দুর্ঘটনাই নিয়ে আসেন। ঠিক তেমনিভাবে আইনের প্রয়োগকারী ব্যক্তি যদি সৎ এবং নিরপেক্ষ না হন, তাহলে সেই আইনও মানুষের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। বরং সেক্ষেত্রে আইনের অপপ্রয়োগ হয় এবং সেই আইন মানুষের জন্য অকল্যাণই বয়ে আনে। সুতরাং আইন দ্বারা যদি আমরা ন্যায় বিচার আশা করি, তাহলে সেক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তিকে আইনের যথাযথ এবং সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এটা তখনই সম্ভব, যখন আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তিটি সৎ হবেন।
কথায় বলে রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট প্রজায় কষ্ট পায়। অথচ তখন রাজ্যের আইনকানুন ঠিকই থাকে, কিন্তু রাজা অসৎ এবং দুর্নীতিবাজ বলে সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হয়ে অপপ্রয়োগ হয়। তাই রাজ্যের অধিবাসী প্রজারা কষ্ট পায়। অপরদিকে সমাজ এবং রাষ্ট্রের কর্তারা যখন সৎ হন তখন আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় বিধায় সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসে। আম গাছে যেমন কাঁঠাল ধরে না, তেমনি কাঁঠাল গাছে আবার আমও ধরে না। একইভাবে দুর্নীতিবাজদের দ্বারা সৎ কাজও হয় না, আবার সৎ মানুষ দ্বারা দুর্নীতিও হয় না। আম খাওয়ার জন্য যেমন আম গাছ রোপণ করতে হবে, তেমনি সৎ সমাজের জন্য সৎ মানুষ তৈরি করতে হবে। সুতরাং দুর্নীতিমুক্ত সমাজের জন্য সৎ মানুষ অপরিহার্য। এজন্য সৎ মানুষ তৈরি করতে হবে এবং এর কোন বিকল্পই নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা কেউই সৎ মানুষ তৈরি করিনি এবং এখনও করছি না। বিশে^র বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কথায় কথায় দুর্নীতিমুক্ত এবং সুখী সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়ার কথা বললেও সেই পৃথিবী গড়তে যে সমস্ত সোনার মানুষ অর্থাৎ দুর্নীতিমুক্ত সৎ মানুষ দরকার তা তারা তৈরি করেননি। তাই বিশ^ব্যাপী দুর্নীতি বেড়ে গেছে। দুর্নীতির দাপটে বিশ^ব্যাপী সর্বত্রই আজ কেবল অশান্তি আর দুঃখ।
এ অবস্থায় সৎ মানুষ তৈরি করতে হবে এবং এ দায়িত্ব আমাদের সকলের। প্রথমত এ কাজটা শুরু করতে হবে সমাজের একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকেই। সমাজের একেবারে প্রাথমিক স্তর হচ্ছে পরিবার। আর এই পরিবারের মূল ভিত্তি হচ্ছে মা এবং বাবা। সুতরাং পিতা-মাতার দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানকে ছোট বয়স থেকেই সততা এবং ন্যায়পরায়ণতা শিক্ষা দেয়া। তবে পিতা যেহেতু বেশিরভাগ সময় বাসার বাইরে থাকেন, সেহেতেু এ ক্ষেত্রে মায়ের দায়িত্বই বেশি। এ জন্য বিখ্যাত ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ান বেনাপোর্ট বলেছিলেনÑ “এরাব সব ধ মড়ড়ফ সড়ঃযবৎ, ও রিষষ মরাব ধ মড়ড়ফ হধঃরড়হ”। অর্থাৎ আমাকে একটি ভালো মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি ভালো জাতি দেব। পিতা-মাতারা কিন্তু তাদের সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার যাবতীয় চেষ্টা করছেন, চাকরি অথবা ব্যবসার মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কিন্তু এর পাশাপাশি নৈতিকতা, সততা এবং উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী শিক্ষা দিচ্ছেন না। ফলে সন্তানরা ঠিকই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, ঠিকই চাকরি অথবা ব্যবসা বাণিজ্যে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে; কিন্তু একই সাথে চারিত্রিকভাবে সৎ হিসেবে গড়ে না ওঠার কারণে দুর্নীতিও করছেন। এভাবে শিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে যে সন্তানের সৎ জীবনযাপন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার কথা ছিল, সেই সন্তানই হয়ে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজ এবং দুর্নীতি বিস্তারের সৈনিক। সুতরাং দুর্নীতিমুক্ত সমাজের জন্য সমাজের একেবারে প্রাথমিক স্তর অর্থাৎ পরিবার থেকে পিতা-মাতাকেই সৎ মানুষ তৈরির কাজ শুরু করতে হবে।
দ্বিতীয়ত ছাত্ররা যাতে নৈতিক মূল্যবোধে গড়ে ওঠে, সেজন্য বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনতে হবে এবং চারিত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষককে বলা হয় দ্বিতীয় জন্মদাতা। সৎ ও আদর্শ নাগরিক সৃষ্টির ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভ‚মিকা অপরিসীম। যদি পাঠ্যপুস্তকে নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং শিক্ষকেরা যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে অতি সহজেই একদল সুযোগ্য এবং সৎ নাগরিক গড়ে ওঠবে, যারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে সৎ জীবনযাপন করবে ও দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করবে। তৃতীয়ত রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে করে দলের কর্মীরা সততা এবং নৈতিকতার ওপর শিক্ষা লাভ করে। দেশের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের ওপর রাজনৈতিক দলের সরাসরি প্রভাব থাকে এবং রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র ও দলের কর্মসূচি দ্বারা নেতাকর্মীরা প্রভাবিত হয়। সুতরাং যেই দলের নেতারা সৎ নয়, যেই দলে সততার চর্চা নেই, যেই দলে কর্মীদের সৎ হিসেবে গড়ে তোলার কোন ব্যবস্থা নেই, সেই দল ও দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব তো নয়ই বরং তাদের দ্বারা সমাজে দুর্নীতিই প্রতিষ্ঠিত হবে।
চতুর্থত দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে নৈতিকতার আলোকে সমৃদ্ধ করতে হবে। নাটক-সিনেমা হচ্ছে সমাজের দর্পণ, সমাজকে পরিবর্তনের হাতিয়ার। এমন নাটক এবং সিনেমা তৈরি করতে হবে যাতে করে এইসব নাটক এবং সিনেমা দেখে মানুষের মধ্যে সততা এবং নৈতিকতা জেগে ওঠে। কিন্তু বিশে^র দেশে দেশে বর্তমানে যেসব চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে তার প্রধান বিষয় হচ্ছে ভায়োলেন্স, অশ্লীল নৃত্য এবং কুরুচিপূর্ণ গল্প-কাহিনী। আর পর্নো ছবিতো রয়েছেই। এসব দেখে উঠতি বয়সের কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা অতি সহজেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং চরিত্র গঠন ও সমাজ গঠনের পরিবর্তে নাটক-সিনেমা এখন চরিত্র ও সমাজ ধ্বংসের কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ অবস্থায় যদি আমরা সত্যিকার অর্থে একটি সৎ, দুর্নীতিমুক্ত ও সুন্দর সমাজ নির্মাণ করতে চাই তাহলে নাটক-সিনেমায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। তার জন্য নাটক ও চলচ্চিত্র থেকে ভায়োলেন্স ও অশ্লীলতা দূর করতে হবে এবং তৈরি করতে হবে মূল্যবোধসম্পন্ন সুস্থ ধারার নাটক ও চলচ্চিত্র। এজন্য ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অবশ্যই প্রয়োজন। সর্বোপরি দুর্নীতি, অসততা এবং অনৈতিকতার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর এসব করলেই কেবল দুর্নীতির মূলোৎপাটন সম্ভব।
সুতরাং দুর্নীতিমুক্ত সমাজের জন্য দুর্নীতিমুক্ত মানুষ গড়তে হবে। আমরা যদি সৎ মানুষ তৈরি না করি, তাহলে শুধুমাত্র আইন করে এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি দূর করা যাবে না। এটা দুর্নীতিকে সাময়িকভাবে কমাবে মাত্র। ইংরেজিতে প্রবাদ আছেÑ চৎবাবহঃরড়হ রং নবঃঃবৎ ঃযধহ পঁৎব. অর্থাৎ নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। শরীরে অসুখ হবার পর চিকিৎসা করে সুস্থ হবার চেয়ে অসুখকে প্রতিরোধ করাই উত্তম এবং এটাই সঠিক পথ। সুতরাং আমাদেরকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চলতে হবে এবং এরপরও যদি শরিরে অসুখ হয়ে যায় তাহলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে অসুখকে দূর করতে হবে। শরীরকে সুস্থ রাখার এই পদ্ধতি কিন্তু আমরা কমবেশি সবাই জানি এবং মেনে চলতে চেষ্টাও করি। ঠিক একইভাবে সমাজটাকে যদি দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই তাহলে সমাজ থেকে দুর্নীতিকে প্রতিরোধ এবং প্রতিহত করতে হবে। এজন্য দুর্নীতিমুক্ত এবং সৎ মানুষ তৈরি করতে হবে। তারপরও যদি কোন মানুষ দুর্নীতিবাজ হয়ে যায় এবং দুর্নীতি করে তাহলে তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে। আর এটাই হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের একমাত্র পথ। রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করে শুধুমাত্র চিকিৎসার মাধ্যমে যেমন রোগকে কখনই নির্মূল করা যায় না, ঠিক তেমনিভাবে সৎ মানুষ তৈরি না করে শুধুমাত্র দুর্নীতিবাজদেরকে শাস্তি দিয়ে কিছুতেই দুর্নীতি দমন করা যাবে না। সুতরাং দুর্নীতি দমনের জন্য সৎ মানুষ তৈরির কোনই বিকল্প নেই।
অতীতের অনেকগুলো দিনকে আমরা নষ্ট করেছি। আসুন ভবিষ্যতকে সুন্দর করার জন্য কাজ শুরু করি। দুর্নীতিমুক্ত একটি সুন্দর পৃথিবীর জন্য আসুন আমরা সবাই মিলে একটি চরিত্রবান প্রজন্ম গড়ে তুলি। ইংরেজিতে প্রবাদ আছেÑ ঝধাব ধ মবহবৎধঃরড়হ ঃড় ংধাব ধ হধঃরড়হ। অর্থাৎ একটি জাতিকে রক্ষার জন্য একটি প্রজন্মকে রক্ষা কর। সুতরাং একটি জাতিকে রক্ষার জন্য একটি প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। একটি জাতিকে গঠনের জন্য একটি প্রজন্মকে গঠন করতে হবে। আমরা যদি একটি সৎ এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তুলি, তাহলে সেই প্রজন্ম তার পরবর্তী প্রজন্মকে সৎ এবং দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলবে। আর এভাবে ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে একদিন পুরো মানব জাতিটাই সৎ এবং দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে গড়ে উঠবে। যদি একটি প্রজন্মকে সৎ হিসাবে গড়ে না তুলি, তাহলে বিশ^ব্যাপী বিদ্যমান দুর্নীতির ভয়াল থাবা থেকে কেউ রেহাই পাবে না। সুতরাং স্থায়ীভাবে দুর্নীতি নির্মূলের জন্য সৎ প্রজন্ম গড়তে হবে।
প্রবাদ আছেÑ ‘রোম নগরী একদিনে তৈরি হয়নি’। ঠিক তেমনিভাবে পৃথিবীর কোন মহৎ সৃষ্টিই একদিনে তৈরি হয়নি। আবার কোন মন্দ সৃষ্টিও একদিনে সৃষ্টি হয়নি। কোন শহর যেমন একদিনে গড়ে ওঠেনি, তাজমহল যেমন একদিনে তৈরি হয়নি, কোন সভ্যতা যেমন একদিনে সৃষ্টি হয়নি, ঠিক তেমনি কোন জাতিও একদিনেই শিক্ষিত এবং সভ্য হয়নি। যে বাড়িতে আমরা বসবাস করি, যেই রাস্তা দিয়ে আমরা চলাচল করি, জীবনযাত্রার যে আধুনিক সুবিধা আমরা ভোগ করিÑ সবই আমাদের পূর্বপ্রজন্মের তৈরি। তারা তৈরি করেছিলেন বলেই তাদের পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে আমরা তা ভোগ করছি। সুতরাং আমাদের ভবিষ্যতকে সুন্দর করার জন্য আমাদেরকেই কাজ করতে হবে। আর প্রত্যেকের অবস্থান সময়ের সাথে সাথে ঊর্ধ্বমুখী অর্থাৎ উন্নত হতে হবে, তা নাহলে নিম্নগামিতা বা অধঃপতনে যে কোন কিছুর অবস্থান একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে। সুতরাং বিশ^কে যদি আমরা উন্নত করতে চাই, দুর্নীতিকে যদি নির্মূল করতে চাই এবং গড়তে চাই একটি সৎ সমাজ, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই সৎ মানুষ তৈরি করতে হবে। এর মাত্রা হতে হবে সময়ের সাথে সাথে ঊর্ধ্বমুখী এবং ক্রমোন্নত। তা নাহলে সময়ের পরিক্রমায় আমাদের ধ্বংস অনিবার্য। একইভাবে যদি আমরা নিজেরা সৎ হই এবং অন্যরাও সৎ হিসাবে গড়ে ওঠে তাহলে সময়ের পরিক্রমায় আমাদের উন্নতিও অনিবার্য । অতএব, আসুন বিশ^ব্যাপী বিদ্যমান দুর্নীতির সর্বনাশা ভয়াল থাবা থেকে মানবজাতিকে বাঁচানোর জন্য আমরা প্রত্যেকেই সৎ হই এবং অপরকে সৎ হিসেবে গড়ে তুলি। এর মাধ্যমে মানবজাতিকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন