শামসুল ইসলাম : হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে (২০১৭-২০১৯) আজ বৃহস্পতিবার গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট ও গণতান্ত্রিক ফোরাম নামের দু’টি প্যানেলের মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে। হাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্টের প্যানেল প্রধান হচ্ছেন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, বায়রার সহ-সভাপতি ও থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ আব্দুস ছোবহান ভূঁইয়া এবং হাব গণতান্ত্রিক ফোরামের প্যানেল প্রধান হচ্ছেন হাবের বর্তমান মহাসচিব আলহাজ শেখ আব্দুল্লাহ। যদিও হাবের একজন সাবেক সভাপতি ও হাবের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি’র নেতৃত্বে পৃথক একটি আংশিক প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। হাব সমন্বয় পরিষদ নামের তৃতীয় এ প্যানেলটি হাবের ভোটারদের সমর্থন আদায়ে জোড়ালো কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগে ভোটাররা বেশকিছু বিষয় নিয়ে হিসাব-নিকেশ করেই যাবে। গতকাল ফকিরাপুল ও পুরানা পল্টন এলাকার একাধিক ভোটার এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের হাবের নির্বাচন অনেকটা ব্যতিক্রমধর্মী বলে কোনো কোনো ভোটার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ভোট কেন্দ্রের আশপাশের রাস্তায় ও বহুতলবিশিষ্ট ভবনে হাবের নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
ঢাকায় নয়া পল্টনস্থ আনন্দ ভবন কমিউনিটি সেন্টারে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটানা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। হাবের ১১৫৭ জন সচেতন ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবেন। ঢাকায় ২১, চট্টগ্রামে ৩ এবং সিলেটে ৩ প্রার্থীসহ কার্যকরী পরিষদে মোট ২৭টি সদস্য পদে ভোট দিতে হবে। নির্বাচনের তিনটি প্যানেল অংশ নিলেও মূলত দ্বি-মুখী লড়াই হবে। হাব নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ হারুনুর রশিদ। নির্বাচনের সকল প্রস্তুুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। হাবের সাবেক সভাপতি আলহাজ জামাল উদ্দিন আহমেদ দুর্নীতিমুক্ত হাব প্রতিষ্ঠা, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক ও কল্যাণকর হাব গঠনের লক্ষ্যে আংশিক প্যানেল নিয়ে নির্বাচনে নিচ্ছেন। নির্বাচনে হাব গণতান্ত্রিক ঐক্য ফ্রন্টের প্যানেল প্রধান, বায়রার সহ-সভাপতি, হাসান ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও চৌদ্দগ্রাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আব্দুস ছোবহান ভূঁইয়া ও হাব গণতান্ত্রিক ফোরামের প্যানেল প্রধান ও হাবের বর্তমান মহাসচিব আলহাজ শেখ আব্দুল্লাহর মধ্যে হড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে বলে হাবের বর্তমান ও সাবেক একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
আলহাজ আব্দুস ছোবহান ভূঁইয়া গতকাল ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে আল্লাহর মেহমান হাজী ও হজ এজেন্সি’র কল্যাণে নিঃস্বার্থে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। এজন্য হাজীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, হাব নির্বাচনে সম্মানিত ভোটাররা আমার প্যানেলকে বিজয়ী করলে সর্বপ্রথম সরকারের সাথে আলোচনা করে অতিরিক্ত প্রাক-নিবন্ধিত ৫০ হাজার হজযাত্রীর নতুন কোটা আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাব ইনশাআল্লাহ। হাজীদের সেবার মান নিশ্চিতকরণে হজ এজেন্সি’র মুনাজ্জামদের ৬ মাসের মাল্টিপোল ভিসা ইস্যুকরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব। হজযাত্রীদের জনপ্রতি সার্ভিস চার্জ ২শ’ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হবে। সরকারের সাথে বৈরীভাব নয়; সখ্যতার সাথে হজ ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা হবে। সততা, সম্প্রীতি ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে সকল অনিয়ম দূর করা হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, ওআইসি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার কোটা প্রাপ্তির কথা। আমরা নির্বাচিত হলে সরকারের সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। এছাড়া হজযাত্রীদের ট্রলিব্যাগ নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাতে স্ব স্ব হজ এজেন্সিকে ট্রলিব্যাগ ক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী সারা বছর অর্থাৎ হজ শেষ হবার পর যাতে হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা যায় তার ব্যবস্থা করা হবে। হাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্টের সমর্থনে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলেও আব্দুস ছোবহান ভূঁইয়া আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
হাব গণতান্ত্রিক ফোরামের প্যানেল প্রধান আলহাজ শেখ আব্দুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর হাবের সদস্যদের কল্যাণে সময় দিয়েছি। তিনি বলেন, হাব সদস্যদের স্বার্থ বিরোধী কোনো কাজ করিনি এবং ভবিষ্যতেও করব না। তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন পদ্ধতিতে সকল এজেন্সি হজের কাজ করতে পারবে এবং আশানুরূপ লাভবানও হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আদম শুমারি হাল নাগাদ করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। যাতে বাংলাদেশ ১ লাখ ৭০ হাজার হজযাত্রীর কোটা লাভ করতে পারে। শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, হাব পল্লীর জমি ক্রয়ের জন্য হাবে এজিএম এর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ৭ সদস্য কমিটির সুপারিশে জমি ক্রয় করা হয়েছে। এ নিয়ে দুর্নীতির প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে বিজয়ী হলে প্রথমেই হাব সদস্যদের দু’বছরের মধ্যে কিস্তিতে ১৫/২০ লাখ টাকার মধ্যে ফ্লাট দিবো। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে ট্রলিব্যাগ স্ব স্ব হজ এজেন্সি ক্রয় করবে । তিনি বলেন, হাবের বর্তমান কমিটি চার বছর আগে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে হাবের দায়িত্ব নিয়েছিল। এর মধ্যে ঢাকায় পৌনে দু’কোটি টাকা দিয়ে জোনাল অফিস, চট্রগ্রাম ও সিলেটে জোনাল অফিস ক্রয় করা হয়েছে। হাব পল্লীর জমি ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ এবং ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। তার প্যানেল বিজয়ী হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন