শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

তিন দশক পর সংগৃহীত দুটি উদ্ধারযান মাঝারি নৌযান উদ্ধারেও সক্ষম নয়

পুরনো দুটি আয়ুষ্কাল হারিয়েছে অনেক আগে

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথে চলাচলকারী মাঝারী মাপের নৌযানসমূহ উদ্ধারেও সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে ৬শ’ টন থেকে হাজার টন ওজনের নৌযানের নকশা অনুমোদন করলেও বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে যে ৪টি উদ্ধার যান রয়েছে তার সর্বোচ্চ উত্তোলন ক্ষমতা মাত্র আড়াইশ’ টন। এমনকি নৌপথ নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী এ প্রতিষ্ঠানটির যে ৪টি উদ্ধারযান রয়েছে তার সর্বমোট উত্তোলন ক্ষমতামাত্র ৭২০ টন হলেও দীর্ঘদিনের পুরনো উদ্ধারযান ‘হামজা’ ও ‘রুস্তম’ ইতোমধ্যে আয়ুষ্কাল হারিয়েছে। এসব উদ্ধারযান বর্তমানে পাটুরিয়া ও মাওয়া ফেরি সেক্টরে রাখা হয়েছে। তবে বছর চারেক আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সংগ্রহ করা অত্যাধুনিক উদ্ধারযান ‘নির্ভিক’ ও ‘দূর্যয়’-এর উত্তোলন ক্ষমতা আড়াইশ’ টন করে বলা হলেও সে ব্যাপারে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলে। তবে কর্তৃপক্ষ এ সংশয়ের বিষয়টি অমূলক বলে দাবি করে এসব উদ্ধারযান ক্ষমতা অনুযায়ী যে কোন নৌযান উদ্ধারে সক্ষম বলে জানিয়েছেন। এসব উদ্ধারযান যথাক্রমে বরিশাল ও নারায়ণগঞ্জ বেজ-এ রাখা হয়েছে।
গত দুই দশকে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী, পণ্য ও জ্বালানি পরিবহনে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। এসময়ের মধ্যে সবগুলো সেক্টরেই অনেক ভারী নৌযান তৈরী হয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডবিøউটিসি ২০১৪ ও ২০১৫তে ‘এমভি রাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নামের যে দুটি যাত্রীবাহী নৌযান তৈরী করেছে, নকশা অনুযায়ী তার ওজন ১ হাজার টন। বেসরকারী সেক্টরেও রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌপথে চলাচলকারী বিলাসবহুল যেসব যাত্রীবাহী নৌযান তৈরী হয়েছে সেগুলোর কোনটির ওজনই ৭শ’ টনের নিচে নয়।
অথচ বিআইডিবিøউটিএ যে নতুন দুটি উদ্ধারযান সংগ্রহ করেছে তার প্রতিটির সর্বোচ্চ উত্তোলন ক্ষমতা আড়াইশ’ টন করে বলা হলেও সে বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ মহলে। ২০১৫ সালে প্রথম উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়ে নতুন উদ্ধারযান দূর্যয়-এর ক্রেনের তার ছিঁড়ে পরে। অথচ ১৯৬৪ সালে ও ১৯৮২ সালে সংগ্রহ করা হামজা ও রুস্তম উদ্ধারযান দুটি ইতোপূর্বে যৌথভাবে ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের অনেক ডুবে যাওয়া নৌযান নদীর গভীর থেকে তুলে পানিতে ভাসিয়ে নিকটস্থ চড়ায় টেনে তুলতে সক্ষম হয়।
কারিগরি বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলের জন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর যেহেতু অনেক ভারী নৌযান তৈরীর নকশা অনুমোদনসহ চলাচলের ছাড়পত্র দিচ্ছে এবং বিআইডিবিøউটিএ তা চলাচলের সময়সূচীও প্রদান করছে, সেহতেু আরো বড় মাপের উদ্ধারযান সংগ্রহের কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে তহবিলের সংস্থানের বিষয়টিও বহিঃসম্পদ বিভাগকে জরুরী ভিত্তিতে বিবেচনায় নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল।
১৯৬৪ ও ১৯৮২ সালে সংগ্রহ করা হামজা ও রুস্তম নামের উদ্ধারযান দুটি আয়ুষ্কাল হারিয়েছে অনেক আগে। উপরন্তু পায় ৩০ বছর পরে সংগ্রহ করা ‘নির্ভিক’ ও ‘দূর্যয়’ উদ্ধারযান দুটিও মাঝারী থেকে বড় মাপের কোন নৌযান উদ্ধারের ক্ষমতা রাখে না বিধায় অভ্যন্তরীণ নৌপথকে সচল রাখার স্বার্থেও আরো শক্তিশালী উদ্ধারযান সংগ্রহের তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল। সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে একাধিক পণ্যবাহী নৌযান ডুবির ফলে নৌপথগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত শনিবার বরিশাল বন্দরের অদূরে যাত্রী বোঝাই ক্যাটামেরন নৌযান ‘এমভি গ্রীন লাইন-২’ এর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ‘এমভি মাসুদ-মামুন’ নামে কয়লা বোঝাই একটি কার্গো কির্তনখোলা নদীতে ডুবে গেছে। এর ফলে সারা দেশের সাথে বরিশাল ছাড়াও মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ খুলনা ও নওয়াপাড়া নদী বন্দরের নৌযান চলাচলও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। কিন্তু বরিশাল বেজে অবস্থানরত উদ্ধারযান ‘নির্ভিক’ ডুবে যাওয়া পণ্যবাহী নৌযানটি দূরের কথা, আংশিক নিমজ্জিত ৬শ’ টন ওজনের গ্রীন লাইন-২ উদ্ধারেও কোন অভিযান শুরু করতে পারেনি তার সিমিত উত্তোলন ক্ষমতার কারণে।
অথচ গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ দেশীয় লাগসই প্রযুক্তিতে নৌযানটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছেন ইতোমধ্যে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্তেও বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। তবে বিআইডব্লিউটিএ থেকে আরো বড় ধরনের উদ্ধারযান সংগ্রহের বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পেস করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত ঐসব উদ্ধারযানের উত্তোলন ক্ষমতা কমপক্ষে হাজার টন হতে পারে বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে। বিষয়টি এখনো সম্পূর্ণ প্রাথমিক পর্যায়ে।
এব্যপারে গতরাতে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যাান কমোডর মোজাম্মেল হক-বিএন’এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, সময়ের প্রয়োজনে দেশে অনেক বড়মাপের নৌযান তৈরি হচ্ছে। সে নিরিখে আরো বড় ধরনের উদ্ধারযান প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ নিরিখে আমরা আরো শক্তিশালী উদ্ধারযান সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এলক্ষে একটি সম্ভব্যতা সমীক্ষা কমটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে বলে জানান তিনি। কারিগরি কমিটি আজ মাওয়াতে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর জন্য ব্যবহৃত ভাসমান ক্রেনগুলো পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সাথে মতবিনিময় করবে বলেও চেয়ারম্যান জানান। কমিটির সুপারিশের আলোকে সবদিক বিবেচনা করেই সরকারের কাছে প্রস্তাব পেস করা হবে বলে বিআইডবিউটিএ’র চেয়ারম্যান জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন