শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলা ফিচার

পালাবদল

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইমামুল হাবীব বাপ্পি

উদাহরণ হিসেবে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানকে নিয়ে আসা যায়। লিগে তাদের আধিপত্য এতই বেশি যে লিগের এক-তৃতীয়াংশ সময় পার হওয়ার আগেই প্রায় নিশ্চিত হয়েছে তাদের লিগ শিরোপা। বুন্দেসলিগায় বায়ার্ন মিউনিখের ব্যাপারটাও একই রকম। ইতালিয়ান সিরি আ’তেও অন্যান্য দলের চেয়ে বেশ এগিয়ে জুভেন্টাস। আবার স্প্যানিশ লা লিগার রোমাঞ্চটা ভিন্ন মাত্রার। এখানে তিন ঘোড়ার দৌড়। বিশ্বেও সেরা দুই দলের সাথে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ তার হারানো শক্তি আবারো ফিরে পাওয়ায় লড়াইয়ে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।

ইউরোপিয়ান ফুটবলের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে অন্যতম হল প্রিমিয়ার লিগ। তবে বাকি চার লিগ থেকে কিছুটা ভিন্ন মাত্রা নিয়ে হাজির হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল। সেটা শক্তিমত্তার বিচারে নয়, আবার শক্তিমত্তার বিচারেও! গত কয়েক মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর ভরাডুবি বাকি চারটি লিগের শীর্ষ দলগুলোর চাইতে ঘর্বশক্তিরই প্রমান বহন করে। আবার ঘরোয়া শীর্ষ লিগে নিজেদের দলগুলোর মধ্যে শক্তির পার্থক্যটা এতই কম যে, প্রত্যেক দলই অন্য দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য শীর্ষ লিগে বড় দলগুলোর পার্থটা এতই বেশি যে অন্য দলগুলো পাশে দাঁড়াতেই পারে না। উদাহরণ হিসেবে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানকে নিয়ে আসা যায়। লিগে তাদের আধিপত্য এতই বেশি যে লিগের এক-তৃতীয়াংশ সময় পার হওয়ার আগেই প্রায় নিশ্চিত হয়েছে তাদের লিগ শিরোপা। বুন্দেসলিগায় বায়ার্ন মিউনিখের ব্যাপারটাও একই রকম। ইতালিয়ান সিরি আ’তেও অন্যান্য দলের চেয়ে বেশ এগিয়ে জুভেন্টাস। আবার স্প্যানিশ লা লিগার রোমাঞ্চটা ভিন্ন মাত্রার। এখানে তিন ঘোড়ার দৌড়। বিশ্বেও সেরা দুই দলের সাথে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ তার হারানো শক্তি আবারো ফিরে পাওয়ায় লড়াইয়ে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। একটু পথ হড়কালেই দৌড়ে খুব অন্য দু’টি দল এত বেশি এগিয়ে যায়, তা পুরোন করাই পরে হয়ে যায় এক দুরহ কাজ। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগে এই দুশ্চিন্তা নেই। শীর্ষ আসনটাও ঠিক যেন একটা রকিং চেয়ার। তবে বেশ কিছুদিন হল সেই চেয়ারটা বেশ স্থিও করে দখলে নিয়েছে আসরের চমক জাগানিয়া দল লেস্টার সিটি। গেল মৌসুম যে দলটি লিগ শেষ করেছিল ১৪তম দল হিসাবে, সেই দলই কিনা এবার শাষন করছে পয়েন্ট টেবিল! তবে লিগের শেষ দিকে এসে রং বদলাটাও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেরর পুরোনো রীতি। এখনি তাই কিছু বলা যাবে না। বিশেষ করে এই সময়ে এসে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দলগুলো একের পর এক যেভাবে হোঁচট খাচ্ছে তাতে নতুন করে আশার পালে হাওয়া যোগাচ্ছে লিগের মাঝপথে দিশা হারানো দলগুলো। লিগের এখনো ১০টি করে ম্যাচ বাকি (কিছু ক্ষেত্রে ১১)। চলুন দেখে আসি শিরোপা প্রত্যাশীদের হালচালÑ
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড : পঞ্চম, ম্যাচ : ২৮, পয়েন্ট : ৪৭
পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল আর্সেনাল, টটেনহ্যাম ও ম্যানসিটির জন্য রাতটি বিষাদের হলেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও লুইস ফন গালের জন্য রাতটি ছিল আনন্দের। সিটির সাথে এখন ইউনাইটেডের কোন পয়েন্ট ব্যবধান নেই, তবে ম্যাচ একটা কম খেলেছে সিটি। রেডদের সর্বশেষ জয়টা ঘরের মাঠে ওয়াটফোর্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে। শীর্ষ চারের আশাটা এক সময় ফন গাল মুছে ফেলেছিলেন নিজেই। সেই গালই এখন আবার নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন শীর্ষ চারে ফেরার। ‘প্রিমিয়ার লগটা এমনই। দু’দলের মধ্যে পার্থক্যটা খুবই সামান্য। আমি মনে করি আপনি এখানে হারতে পারেন প্রতিটা দলের বিপক্ষে’Ñ বলেন দলের ডাচ কোচ। পরে তিনি যোগ করেনÑ ‘আমরা সান্ডারল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছিলাম। এজন্য আমাদের অনেক গঞ্জনা সইতে হয়েছিল। কিন্তু এখন আপনি দেখবেনÑ আমরা এখন চতুর্থ অবস্থানের খুব কাছে, সুতরাং আমরা এখন এর জন্যেই লড়ব।’
ফন গাল বলেছেন ঠিকই, কিন্তু যে দলটির নামের পাশে এত ইতিহাস ঐতিয্য সেই দল চতুর্থ হয়েই ক্ষান্ত হবে কেন। দৃষ্টি যে তাদের শিরোপায়।
ম্যানচেস্টার সিটি : চতুর্থ, ম্যাচ : ২৭, পয়েন্ট : ৪৭
মাত্র তিন দিন আগে লিভারপুলকে হারিয়ে লিগ কাপ শিরোপা জেতে দলটি। আনফিল্ডের একই মাঠে একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দেখা গেল ভিন্ন এক দলকে। গোলমুখী শটই নিল মাত্র ৪টি। স্বাগতীকরা যেখানে দৌড়ালো ১১৫ কি.মি, সেখানে অতিথীরা মাত্র ১০৬। ব্যপারটা ধরতে পেরেছেন কোচ পেল্লেগ্রিনিওÑ ‘আমি দেখতে পাচ্ছি দল এখনো গত সপ্তাহের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আমরা চ্যাম্পিয়ন্সলিগ ও লিগ কাপ ফাইনাল খেলেছি।’ তবে চিলিয়ান কোচ এটাও জানান যে, শিরোপা নিয়ে নয়, তারা ভাবছে নিজেদের ফর্ম কিভারে পুনরুদ্ধার করা যায় সেই ব্যাপারে।
আর্সেনাল : তৃতীয়, ম্যাচ : ২৮, পয়েন্ট : ৫১
সোয়ানসির কাছে ২-১ গোলে হারের মধ্য দিয়ে ২০১০ সালের পর এই প্রথম টানা তিন হারের স্বাদ পেল আর্সেনাল। ঘরের মাঠে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় ওয়েঙ্গারের দলকে। গত ১১ ম্যাচে তাদের জয় মাত্র ৩ ম্যাচে। ওয়েঙ্গার মনে করেন খেলোয়াড়দের দৃড় মনোবলের অভাবেই হারছে তার দল। এর ভেতর থেকে বেরিয়ে খেলোয়াড়দের ‘মূল ধারায়’ ফিরে আসার কথাও বলেন তিনি। শিষ্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেনÑ ‘আমরা স্বপ্ন দেখি না, কিন্তু আমাদের বাস্তবিক হতে হবে এবং ঘুরে দাঁড়াতে হবে আমরা কি পারি সেটা দেখানোর জন্যে।’ টানা তিন হার ১২ বছর পর শিরোপা জয়ের স্বপ্নকে আরো ফিকে করে দিয়েছে আনফিল্ডের দলটিকে।
টটেনহ্যাম : দ্বিতীয়, ম্যাচ ২৮, পয়েন্ট ৫৪
এদিন ‘স্পাউর্স’ খ্যাত দলের সামনে সুযোগ ছিল ১৯৬৪ সালের পর পথম পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান দখল করা। টানা ৬ ম্যাচে জয় সেই স্বপ্নের পালে জোর হাওয়াও দিয়েছিল। কিন্তু ওয়েস্টহ্যামের কাছে ১-০ গোলে হেরে তা আর হয়ে ওঠেনি। ‘এটা কি চাপ ছিল? না’- বলেন মৌরিসিও পচেত্তিনো। তিনি আরো বলেনÑ‘আমি মনে করি আমরা কিছু ভুল করেছিলাম, যে ভুলগুলো সাধারণত আমরা করি না।’ তবে কিছুটা চাপে যে ছিলেন সেটা বোঝা গেল খানিক পরেইÑ ‘প্রিমিয়ার লিগ খুব প্রতিযোগীতামূলক খেলা। এখানে জিততে হলে শতভাগ শারীরীক ও মানসিক প্রস্তুতি থাকা লাগে।’
লেস্টার সিটি : প্রথম, ম্যাচ : ২৮, পয়েন্ট : ৫৭
শেষ তিন ম্যাচে সমান একটি করে হার, জয় ও ড্র। লিগের তৃতীয় হারের দ্বারপ্রান্ত থেকে ঘুরে ৮৯তম মিনিটের গোলে ওয়েস্ট ব্রুমের সাথে সর্বশেষ ম্যাচটি তারা ড্র করে ২-২ গোলে। ঘরের মাঠে ড্র করেও কোন নেবিাচক মন্তব্য করতে নারাজ দলের কোচ ক্লাউদিও রেনিয়েরি। তিনি যেন শীর্ষাশনে বসে শুধু তাঁর শিষ্যদের কাজ মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে চেয়ে দেখছেন। তার তো আসলে কোন চাওয়াও নেই। ক্রিসমাসের বিরতির সময় তিনি বলেছিলেন যে তাঁর লক্ষ্য মাত্র ৪০ পয়েন্ট অর্জন, লিগের অবনমনন ঠেকাতে যে পয়েন্ট খুব দরকার। সেই দল যখন এখনো পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে তখন তাঁর চাওয়ার কি-ই বা থাকতে পারে। তবে মনের গোহীনে যে তিনি শিরোপাটা ছুয়ে দেখার স্বপ্নটা লালন করে যাচ্ছেন সেটা বলাই যায়। তবে তাঁর দল তো আর বিখ্যাত কোন কোন দল না যে শিরোপা নিয়ে তাকে কথা বলতে হবে। সেটা বলতেও হয়তো তিনি কিছুটা সঙ্কোচ বোধ করতে পারেন। তাই স্বপ্নটা গোপনে লুকাইত। যে দুই খেলোয়াড়ের ছোঁয়ায় দলের এই আমুল পরিবর্তন সেই জেমি ভার্ডির নামের পাশে গেল মৌসুম ঠিক এই সময় ছিল মাত্র একটি গোল ও চারটি গোলে সহযোগিতা। তার সহযোদ্ধা মাহরেজের ছিল দুই গোল আর তিন অ্যাসিস্ট। সেই ভার্ডির চলতি মৌসুমেও অ্যাসিস্টের সংখ্যা সমান কিন্তু গোল সংখ্যা ছাপয়ে করেছেন লিগ সর্বোচ্চ ১৯! আর মাহরেজের নামের পাশে ১৪ গোল, সাথে ১১ অ্যাসিস্ট! তবে গোপনে লালিত স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রুপ দিতে এখনো যে ভার্ডি-মাহরাজদের পেরুতে হবে অনেক পথ।

মার্টিন ক্রো
জন্ম:২২ সেপ্টে.১৯৬২
মৃত্যু:৩ মার্চ ২০১৬
নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ, ঘরের ছেলেদের প্রতিপক্ষ তাসমান প্রতিবেশি অস্ট্রেলিয়া- এমন সুযোগ হাতছাড়া করেনি আইসিসিও। ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ তারিখ গ্রুপ পর্বের ঐ ম্যাচের মধ্যবিরতিতে অস্থায়ী মঞ্চে নিয়ে আসা হয় ক্রোকে। অসুস্থ শরীর নিয়েও ক্রিকেটের এই ডাক উপেক্ষা করতে পারেন নি তিনিও। এলেন, আবেগঘন এক মুহূর্তে তার মাথায় উঠলো মর্যাদার ক্যাপ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন