শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

| প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খোশ আমদেদ মাহে রমজান। মহান রাব্বুল আলামীন রমজানের মাসব্যাপী রোজাকে ফরজ করেছেন। সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং ইন্দ্রীয় সুখ ভোগ থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। যে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর ইসলাম দন্ডায়মান তার একটি রোজা। নামাজের পরই রোজার স্থান। মাহে রমজান রহমত-বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। মানুষের দৈহিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে এ মাসের রোজা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। সংযম, সহিষ্ণুতা ও আত্মশুদ্ধির অনন্য চেতনায় ভাস্বর মাহে রমজান। মহানবী সা. এ মাসকে এক সুমহান মাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ মাসের প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্য ১০ দিন মাগফিরাত এবং শেষ দিনগুলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির। অন্যান্য মাস অপেক্ষা রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্বের বড় কারণ এই যে, এ মাসেই বিশ্ব মানবতার মুক্তি সনদ পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘রমজান সেই মাস যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে। কোরআন, যা মানুষের হেদায়াত, সত্যের পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশক আর ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ এ মাসেই এমন একটি রাত রয়েছে যাকে বলা হয় লাইলাতুল কদর বা সৌভাগ্য রজনী। আল্লাহপাক এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা এটি (আল কোরআন) কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জান, কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষাও অধিক উত্তম’। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যখন রমজান শুরু হয়, দোজখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়।’ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে পবিত্র রমজান মাস, রমজান মাসের রোজা ও অন্যান্য ইবাদত কতটা মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
রমজানের পবিত্র কোরআন চর্চা, তিলাওয়াত ও তারাবি নামাজে কোরআন খতম বিধেয় করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সঙ্গে রমজানের সম্পর্ক অচ্ছেদ্য। পবিত্র কোরআনের আলোকে জীবন গঠনের একটা প্রশিক্ষণ হয় মাহে রমজানে। আত্মিক উন্নয়ন, পবিত্রতা অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য রমজানের রোজার কোনো তুলনা হয় না। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ তাকওয়া অর্থ সতর্ক, সংযত ও সাবধান থাকা। আল্লাহর ভয়ে, আখেরাতের জবাবদিহিতার ভয়ে সব ধরনের অন্যায়, অশ্লীলতা, পাপ ও অপরাধ থেকে দূরে থাকা। বলা বাহুল্য, তাকওয়ার গুণ মানুষকে সকল প্রকার পাপাচার, অন্যায়, অপরাধ, অপকর্ম, অশ্লীলতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও দুষ্কৃতি থেকে মুক্ত রাখতে পারে। রোজা রেখে মিথ্যাচার, পরচর্চা, ক্রোধ, হিংসা, নিন্দা, অহঙ্কার, আত্মগর্ব, কৃপণতা, চোগলখোরী ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘রোজা রাখা সত্তে¡ও যে ব্যক্তি মিথ্যাচার ও পাপকর্ম থেকে বিরত রইল না, ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর হওয়া ছাড়া রোজা তার কোনো কাজেই এলো না’। রোজা মানুষকে প্রকৃত আধ্যাত্মিক ও জাগতিক মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করে, কার্যকরভাবে সহায়তা করে। রোজা রাখা ব্যক্তিগত ইবাদত হলেও এর মর্ম অনেক গভীর ও ব্যাপক। নিজের চারপাশের পৃথিবীকে স্বস্তি দেয়া, মানবতার প্রতি দায়িত্ব, সকলের অধিকার প্রদান ইত্যাদিই তাকওয়ার ফসল। যারা রোজা রাখতে পারেন না বা অন্য ধর্মাবলম্বী তাদেরও কর্তব্য রয়েছে রোজারদারদের সম্মান ও সহায়তা করার। বিশ্বব্যাপী রোজাপালনরত মানুষকে শ্রদ্ধা ও রমজানের প্রতি ভালোবাসার সংস্কৃতি গড়ে তোলাও বিশ্বশান্তি ও সাম্প্রদায়িক সুস্থতার জন্য কম জরুরি নয়।
রমজানের শিক্ষা ধৈর্য ও সংযম। রমজানের একটি নাম হচ্ছে শাহরুল মুওয়াসাত। এর অর্থ সহমর্মিতার মাস। একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, সমবেদনা ও সহমর্মিতা রমজানের মহান শিক্ষা। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে মুসলমানদের ওপর নানা দিক থেকে আক্রমণ আসছে। অসহিষ্ণুতা, সা¤প্রদায়িক হামলা, অপপ্রচার সব মিলিয়ে বিশ্ব মুসলিমকে এক কঠিন পরিস্থিতিতে পবিত্র রমজান পালন করতে হচ্ছে। অথচ শান্তির দূত মুসলমানগণ মহান ইসলামের উদার ও মানবিক বার্তা নিয়ে বিশ্বময় এক ইতিবাচক স¤প্রদায় হিসেবে সুপ্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষা নিতে হবে সংযমের উৎকর্ষ থেকে। যেমন হাদিস শরীফে এসেছে, রোজাদারের সাথে কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে এলে সে যেন বলে দেয়, আমি রোজা রেখেছি। অর্থাৎ, আমি তোমার কথার প্রতিউত্তর দেবো না। যেকোনো পরিস্থিতিতে উসকানিতে সাড়া না দিয়ে সংযম ও তাকওয়া রক্ষা করে চলাই রমজানের শিক্ষা। সহমর্মিতার প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও ক্রেতা-ভোক্তাসাধারণের হাতের নাগালে রাখা। খাদ্যে ভেজাল না মেশানো এবং ওজনে কমবেশি না করা। মুসলিম বিশ্ব তো বটেই বহু অমুসলিম দেশেও ধর্মীয় উৎসবের সময় ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেন। বাংলাদেশে দেখা যায় এর বিপরীত প্রবণতা। অধিক বিক্রি হওয়ায় এ মওসুমে মুসলিম নাগরিকদের সিয়াম সাধনার সুবিধার্থে ব্যবসায়ীরা যদি সওয়াব ও কল্যাণের আশায় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেন, মুনাফা কম করেন বা সম্ভব হলে সহায়তামূলক স্বল্পমূল্য নির্ধারণ করেন তাহলে রমজান ও সিয়াম সাধনার মূল লক্ষ্য বাস্তবায়িত হতে পারে। ইসলাম শুধু অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্ম নয়, এর মূল বাণীই হচ্ছে মানবতার উৎকর্ষ। আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য আর মানুষসহ সকল সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা। পবিত্র রমজানে মুসলমানের জীবন-জীবিকার সর্বত্র সততা, সংযম ও পবিত্রতার ছোঁয়া লাগবে এটাই স্বাভাবিক। রমজানুল মুবারকের সিয়াম সাধনার এখানেই সার্থকতা। ইবাদতের এ ভরা বসন্তে, ক্ষুৎ পিপাসা ও সাধনার আগুনে জ্বলে-পুড়ে খাঁটি হওয়ার এ সুবর্ণ সময়ে ঈমানদারদের হৃদয়জুড়ে এরই জীবন্ত প্রত্যাশা। মোবারক হো মাহে রমজান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন