শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম

গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুসলিম জাহানের জন্য ১১ রবিউস সানি, ৬৬২ হিজরি একটি শোকের দিন ছিল। এ দিন অলিকুল শিরোমনি, বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানির (রহ.) ওফাত দিবস। এদিন বড়পীরের তরিকাপন্থীসহ সমগ্র মুসলিম জাতি ফাতেহা ইয়াজ দাহম পালন করেন। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে এ দিবসটি অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে উদযাপন করা হয়। বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অলি এ ধরাধামে ৯১ বছর কাল বেঁচে ছিলেন। বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানি (রহ.) ৪৭১ হিজরির রমজান মাসে ইরাকের জিলান নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সাইয়েদ আবু সালেহ মুসা জঙ্গি দোস্ত, মাতার নাম ফাতেমা। আবু মোহাম্মদ তাঁর কুনিয়াত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক তাঁকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছেন। কেউ তাঁকে বলেছেন গাউসুল আযম। বাংলাদেশের সকল মুসলমানরা তাকে বড়পীর বলে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন। আরবরা তাকে মহিউদ্দীন খেতাব দান করে। বড়পীরের প্রকৃত নাম হলো আবু মোহাম্মদ আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)।
বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় ১৮ পারা কোরান শরীফ মুখস্ত করেন। তিনি এলমে তাসাউফের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। তিনি এলমে শরীয়ত, মায়ারেফাত, হাকিকত ও তরিকতের সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। সকল যুগের সকল শতাব্দীর অলিরা আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)কে অলিকুল শিরোমনি হিসেবে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভক্তি করেন। বাল্যকাল হতেই আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) অত্যন্ত মেধাবী ও স্মরণ শক্তির অধিকারী ছিলেন। এ মহান অলি কোরান ও হাদিসে পারদর্শী হওয়ার জন্য ৪৮৮ হিজরিতে বাগদাদের ‘নিজামিয়া’ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান হতে তিনি কোরআন-এর তফসিরে পা-িত্য অর্জন করেন।
এ সময় তাঁর অসংখ্য ভক্ত এ মুরিদ সৃষ্টি হয়। তিনি মুসলিম জাতির জন্য বেশ কয়েকটি কিতাব রচনা করেন। এ সকল কিতাবের মধ্যে ‘ফুতহুল গায়েব’, ‘গুনিয়াতুত তালেবিন’, ‘ফতহুর রাব্বানী’, ‘কাসিদায়ে গাওসিয়া’ বিখ্যাত। এ সকল সুবিখ্যাত কিতাব মুসলমান জাতির আগামী দিনের পাথেয় হয়ে থাকবে। বড়পীর (রহ.) তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদদের এই বলে সতর্ক করে দেন, কখনো মিথ্যা বলো না। আল্লাহর সাথে শিরক করো না। আল্লাহর নামে শপথ/কসম করো না। ঐতিহাসিক ফরিদউদ্দিন আত্তার (রহ.) তাজকেরাতুল আউলিয়া গ্রন্থে লিখেন- বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) ইতিহাস, সাহিত্য, ভূগোল ও দর্শন শাস্ত্রে সুপ-িত ছিলেন। অর্থাৎ বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) শুধু ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞানী ছিলেন না, বরং তিনি সকল বিষয়ে অঘাত জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। একদা একজন ভক্ত তাঁর কাছে অলৌকিক কিছু দেখতে চাইলে গাছের প্রতিটি পাতায় তাঁর অবস্থান দেখান।
এরকম বহু অলৌকিক ঘটনা বড়পীরের জীবনীতে ভরপুর। ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন, বড়পীরের জীবনে সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো তিনি সমগ্র জীবন ইসলামী শরীয়তের ভিতর থেকেছেন। রাতভর আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থেকেছেন। বাগদাদ ও পারস্যের ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি সারারাত নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকতেন। বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) ইসলামী শিক্ষাকে প্রসারের জন্য মাদ্রাসা স্থাপন করেন। এ মাদ্রাসার নাম মাদ্রসা-ই কাদেরিয়া এই তথ্যটি প্রদান করেন ফরিদ উদ্দিন আত্তার। মাদ্রাসা কাদেরিয়ার বারান্দাতেই চির নিদ্রায় শায়িত রয়েছেন মুসলমানদের অলিকুল শিরোমনি মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)। ১১ রবিউসসানি উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকায়ে বড়পীরের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়। আল্লাহপাক আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বান্দার জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : সাংবাদিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আমজাদ,হোসেন ১৪ জুন, ২০২০, ১২:০০ পিএম says : 0
আল্লাহর,কাছে,শুভকামনা,রয়ল
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন