কামরুল হাসান দর্পণ
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের ১৩০ এমপি যদি নানা দুষ্কর্মে লিপ্ত থাকেন, তবে সরকার দেশকে শনৈশনৈ উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে- এ দাবী করা কতটা যুক্তিযুক্ত তা বোধকরি সচেতন ব্যক্তির্গকে বুঝিয়ে বলার অবকাশ নেই। ধারণা করা যায়, জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন দলের প্রায় অর্ধেক এমপি এতটাই অপকর্মে লিপ্ত যে, আগামী নির্বাচনে তাদের নমিনেশন দেয়া হবে না! এ সংবাদটি সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ থেকে জানা যায়, খোদ ক্ষমতাসীন দল জরিপ চালিয়ে ১৩০ এমপির বিরুদ্ধে নানা অপকীর্তি ও অনাচারের খবর পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ১০ ধরনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগগুলো হলোÑএলাকায় গডফাদারের ভূমিকা, সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চালানো, নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা ও এলাকায় খুবই কম যাওয়া, নিজস্ব বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রæপিং করা, স্বজনপ্রীতি, চাকরি দেয়ার কথা বলে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে চাকরি না দেয়া, বিরুদ্ধে বললেই হামলা-মামলা, পঙ্গুত্ববরণ এমনকি জীবন নিয়ে নেওয়া। বলা বাহুল্য, যারা এসব অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন তারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। বলা যায়, গরিবের বন্ধু, মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর। অথচ তাদের উল্লেখিত অপকর্মের দিকে তাকালে তাদের জনশত্রæ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কথায় কথায় উন্নয়নের ফেনিল উর্মীমালার কথা বলেন। চারদিকে কেবল উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেয়ার শ্লোগান ধরেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলেরই যদি অর্ধেকের বেশি এমপি অনিয়ম আর দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকেন, তাহলে উন্নয়নটা কিভাবে হচ্ছে? যদি অপকর্মের মাধ্যমে এমপিদের উন্নয়নকে উন্নয়ন ধরা হয়, তবে বলার কিছু নেই। দেশের ১৩০টি নির্বাচনী এলাকায় যদি অনাচার চলে তবে সেখানের মানুষ কী করুণ পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল জরিপ চালিয়ে এমপিদের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ পাওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তার অর্থ হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতি মেনে নিচ্ছে। তারা আইনের উর্ধে, এ কথা বুঝিয়ে দিচ্ছে। শাস্তি বলতে শুধু আগামী জাতীয় নির্বাচনে নমিনেশন না পাওয়া। নমিনেশন না দেয়ার হুমকি কি অনিয়ম ও অপকর্মের অভিযোগে অভিযুক্তদের কিছু যাবে আসবে? কিছুই আসবে যাবে না। বরং ক্ষমতার আরও সোয়া বছর রয়েছে, এ ভাবনা মাথায় নিয়ে অতি উদ্যমে অপকর্ম চালিয়ে যাবে এবং বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়ে পুনরায় নমিনেশনের জন্য তদবির করবে এবং এদের অনেকে পেয়েও যাবে।
দুই.
বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে বেশ দুর্যোগের ঘনঘটা লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আশঙ্কাজনক রূপ লাভ করেছে। একেকবারের ভূমিকম্প যেভাবে কাঁপিয়ে দিয়ে যায়, তাতে আল্লাহ আল্লাহ করা ছাড়া উপায় থাকে না। আল্লাহর অশেষ রহমতে ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। স্থাপনা ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে ভূমিকম্পের এরকম সহনীয় পরিস্থিতি কতদিন থাকে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ সরকারি হিসেবেই ৭৩ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। বারবার বলা হয়েছে, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ঝুরঝুর করে এসব ভবন ধুলোয় মিলিয়ে যাবে। মৃত্যুবরণ করবে লাখ লাখ মানুষ। রাজধানী হবে মৃত্যুপুরী। আমরা যদি সতর্ক না হই, তবে এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় থাকবে না। ভূমিকম্পের পর নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে বজ্রপাত। বিগত কয়েক বছরে যেভাবে বজ্রপাত হচ্ছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে, অতীতে এমন ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়নি। এখন বলা হচ্ছে, বজ্রপাতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় বাংলাদেশে। সারা পৃথিবীতে যত মানুষ মারা যায় তার এক চতুর্থাংশ মারা যায় বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়। ভূমিকম্প, বজ্রপাতের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি অকাল বন্যা, পাহাড় ধসের হারও বেড়েছে। সবকিছু বিবেচনায় অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের উপর প্রকৃতি রুষ্ট হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে শুধু বলা যায়, প্রকৃতির এই খেয়ালের উপর মানুষের খুব একটা হাত নেই। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতির খেয়াল বদলানোর ক্ষেত্রে মানুষের কাÐজ্ঞানহীন কাজকর্মই দায়ী। নির্বিচারে পরিবেশ এবং এর ভারসাম্য ধ্বংসের কারণে প্রকৃতি বিরূপ হয়ে উঠেছে। জলবায়ুর দ্রæত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্বিচারে ধ্বংস মূল ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি পাঁচটি জেলায় যে ভয়াবহ পাহাড় ধস হলো, এর মূল কারণই হচ্ছে, পাহাড় সংরক্ষণকারি পরিবেশ ধ্বংস করে ফেলা। পাহাড়কে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে গাছ-গাছালি ও বনজঙ্গল। বলা হচ্ছে, পাহাড়ে বসতি স্থাপন করতে গিয়ে এসব গাছপালা ও বনজঙ্গল কেটে সাফ করে ফেলায় বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে ধসে পড়েছে। এর জন্য প্রকৃতি নয়, মানুষই দায়ী। যথাযথ কৃর্তৃপক্ষ যদি প্রকৃতি ধ্বংসকারি এসব অপকর্ম আগে থেকেই প্রতিরোধ করতে পারত, তবে হয়ত প্রকৃতি এতটা বিরূপ হতো না। প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ এবং ধ্বংসযজ্ঞ কারো জন্য যেমন জীবনমরণ সমস্যা, তেমনি কারো জন্য পৌষ মাস হয়ে আসে। এর কারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানেই পুনর্বাসন এবং ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম। এসব কার্যক্রম পরিচালনা করবে স্থানীয় এমপি ও দলের লোকজন। এতে লাভ যা হওয়ার তাদেরই হয়। প্রকৃত ভুক্তভোগীরা বঞ্চিত থেকে যায়। হাওরে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ফসল ও মৎস্যহানির মাধ্যমে যে বিপুল ক্ষতি হয়ে গেল, সে সময় ত্রাণ বিতরণের সময় আমরা নানা অনিয়মের কথা শুনেছি। এমনকি রিলিফের চাল অনিয়মের মাধ্যমে গুদামজাত করে রাখার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এসব অনিয়ম বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ ও অনিয়মের ঘটনা ঘটবে, এটা অবধরিতভাবেই ধরে নেয়া যায়। আমরা দেখেছি, হাওরাঞ্চলের মানুষের মাঝে মন্ত্রীদের অনেকে আয়োজন করে চাল ও নগদ অর্থ বিতরণ করতে। ঘোষণা ছিল এক মাস এ কার্যক্রম চলবে। বলা বাহুল্য, এ সময়ের মধ্যেই অনিয়মের অনেক ঘটনা ঘটে। প্রকৃত অর্থে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের অধিকাংশই সরকারের এ ত্রাণ কর্মসূচির বাইরে ছিল। আর যেসব সক্ষম কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথচ কারো কাছে হাত পাততে পারেনি, তারা কেবল ভেতরে ভেতরে গুমরে মরেছে। তাদের দুঃখ-কষ্ট দেখার কেউ নেই। হাওরাঞ্চলের মানুষের এই দুঃখ-কষ্ট এখনও রয়ে গেছে। বলা হয়, দেশের চালের শতকরা ১৭ ভাগ জোগান আসে হাওর অঞ্চল থেকে। সেই হাওরাঞ্চলে এখন চলছে হাহাকার। এই হাহাকার ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।
তিন.
দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। সরকারের ভাষায় এই ভাতের অভাব দেশে নেই। খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এতটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ যে একবার শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানিও করে ফেলে। দেখানো হয় চাল রপ্তানিতে আমরা সক্ষম। এরপর অবশ্য রপ্তানির আর খবর পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ দেখিয়ে দেয়া হলো আমরা খাদ্যে উপচে পড়ছি। এমন করে আমরা বিদ্যুতের উপচানোও দেখেছি। হাতিরঝিলে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি বলে আলোক উৎসব করা হয়েছে। বিরাট ঝলমলে আয়োজন। পরবর্তীতে দেখা গেল, লোডশেডিং তো কমেইনি উল্টো ভারত থেকে আমদানি করেও ঘাটতি কমানো যায়নি। এখন পর্যন্ত মানুষ লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এ সরকারের মধ্যে বেশি বেশি দেখানোর প্রবণতা প্রবল। সবকিছুতেই বাড়িয়ে বাড়িয়ে দেখাতে হবে। যেমন লোডশেডিং কম দেখানোর জন্য রাজধানীকে বেশি আলোকিত রাখার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। সরকারের ধারণা রাজধানীর মানুষকে যদি লোডশেডিং কম দেখানো যায়, তবে সারা দেশ অন্ধকারে ডুবে থাকলেও কিছু যাবে আসবে না। বাস্তবেও তাই দেখা যায়। মফস্বল এলাকায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে গড়ে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। এটা অন্ধকার যুগে বসবাস করার মতোই। অথচ সরকার খুব বড় গলায় বলছে, দেশের ৮০ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় চলে এসেছে। বাকি ২০ ভাগ আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে চলে আসবে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ থাকুক বা না থাকুক খুঁটি তো গাঁড়া হয়েছে, লাইনও দেয়া হয়েছে। কোনো একদিন বিদ্যুৎ আসবে। এটা অনেকটা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কথা মতো হাওয়া ভবনের খাম্বার মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোট কথা, লাইনে বিদ্যুৎ আছে কি নেই এটা দেখার দরকার নেই, দেখা দরকার খাম্বা ও বৈদ্যুতিক তার আছে কিনা। সরকারের মধ্যে এই দেখানোর প্রবণতা দেশের মানুষ দেখে আসছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয়টিও যে লোক দেখানো ছিল, তা এখন প্রমাণিত। উল্লেখ করা প্রয়োজন, সরকার খাদ্য বলতে কেবল চালকেই বোঝায়। সরকারি গুদাম চালে বোঝাই থাকা মানে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ চাল হচ্ছে খাদ্যের অন্যতম প্রধান উপকরণ। এই চালকে ভাতে পরিণত করে তা খেতে যে তরিতরকারি, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, মসলা, মাছ-গোশত ও অন্যান্য উপকরণ লাগেÑএসব ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হয় না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা মানে যে তৃপ্তি সহকারে তিন বেলা খেতে পারা, সরকার এটা মনে করে না। সরকার মনে করে, চাল আছে, কাজেই শুকনো ভাত খেলেই চলবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে সরকারের এই আরোপিত সংজ্ঞা ধরে নিলেও এখন দেখা যাচ্ছে, দেশ খাদ্য সংকটের মধ্য দিয়ে আবর্তিত হচ্ছে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী সর্বকালের সর্বনি¤œ পর্যায়ে চালের মজুদ রয়েছে। এর পরিমাণ ১ লাখ ৯১ হাজার টন। এ দিয়ে তিন মাসও মানুষকে খাওয়ানো যাবে না। এর প্রভাব পড়ছে বাজারে, বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দামে বাংলাদেশে চাল বিক্রি হচ্ছে। চালের সর্বনি¤œ স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে যে মোটা চালকে ধরা হয়, তার কেজি এখন ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। অথচ এর কেজি ছিল ৩২-৩৪ টাকা। চালের দামের এই উলম্ফনের কারণে নি¤œ আয়ের মানুষের দুই বেলা ভাত খেতে এখন কষ্ট হচ্ছে। অনেক পদের চালের মধ্যে তারা যে মোটা চাল খায়, তার দাম কেজিতে এখন ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। যে পরিবারের প্রধান খাদ্যই তিন বেলা ভাত, সেই পরিবারের যদি দিনে তিন কেজি চাল লাগে তবে তার প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৬০ টাকা বেশি লেগে যাচ্ছে। এখন প্রায় দুই কেজি চাল কম কিনতে পারছে। প্রতি মাসে যদি তার দেড় থেকে দুই হাজার টাকা শুধু চাল বাবদ বাড়তি খরচ করতে হয়, তবে সে এই অর্থ যোগান দেবে কোথা থেকে, অথচ তার না খেয়ে থাকারও উপায় নেই। ফলে অবধারিতভাবেই তার খাওয়া কমাতে হবে। তিন বেলার পরিবর্তে দুই বেলা অথবা অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হবে। উল্লেখ্য, খাদ্য সংকট এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রম ভালনারেবল গ্রæপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচি সরকার বাতিল করেছে। সরকারের কাছে চাল নেই। কী বিস্ময়কর ব্যাপার, যে সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলে তোলপাড় করে ফেলেছে, সেই সরকারের কাছে চাল নেই! সরকারকে এখন খাদ্য সংকট মেটাতে চাল আমদানি করতে হচ্ছে। দশ লাখ টন আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই লাখ টন আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে সরকার টু সরকার পর্যায়ে আরো আড়াই লাখ টন আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। এই যদি হয় খাদ্য পরিস্থিতি, তাহলে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতার আহমটা গেলো কোথায়? আসলে আমরা কখনোই খাদ্যে স্বয়ংস্বম্পূর্ণ ছিলাম না। সরকারের মধ্যে উন্নতি দেখানোর প্রবণতার কারণেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলা হতো। এখন তো উন্নতির একটি শুভংকরের ফাঁকি ধরা পড়ল। খাদ্যে যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম না, তার বড় প্রমাণ হচ্ছে, প্রতি বছরই আমাদের চাল আমদানি করতে হতো। এমনকি ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের পাশাপাশি ৩ শতাংশ রেগুলেটরি শুল্ক সহ মোট ২৮ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও চাল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার টন। ২০১৫ সালে আমদানি করা হয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৬ সালে আমদানি করা হয় ২ লাখ ৫৬ হাজার টন। আমরা যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই হতাম, তাহলে চাল আমদানি অব্যাহত ছিল কেন? কেন আমদানি করা হয়েছে?
চার.
নিবন্ধের শুরুতে ১৩০ এমপির দুষ্কর্মের কথা বলা হয়েছে। একটা দেশে আইনের শাসন ও সুশাসন কতটা নাজুক হলে ক্ষমতাসীন দলের অর্ধেকের বেশি এমপি অপকর্ম করে বেড়াতে পারে। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তাদের কাছ থেকে জবাব নেয়ারও কেউ নেই। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রায়ই বলে থাকেন, দুর্নীতিবাজ ও অপকর্মকারীরা দলীয় মনোনয়ন পাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্নীতিবাজ ও অপকর্মকারীরা যদি চিহ্নিতই হয়ে থাকে তবে তিনি কেন বলছেন না, এখনই এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। এটা কি প্রমাণ করে না, দলের লোক হওয়াতে অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে? তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলের নীতিনির্ধারকরাও কোনো আদেশ-নির্দেশ দেন না। এই পরিস্থিতিতে সরকার কীভাবে নিজেকে সঠিক ও নীতি-নৈতিকতার বলে দাবী করতে পারে? বলার অপেক্ষা রাখে না, যেখানে সরকারের নীতি-নৈতিকতার ভিত দুর্বল থাকে সেখানে অনাচার, দুরাচার ও দুর্বৃত্তায়ন মহীরুহ হয়ে দেখা দেবে, এটাই স্বাভাবিক। এরকম পরিস্থিতিতে নিজ দলের নেতাকর্মীরা যেমন বেপরোয়া হয়ে পড়ে, তেমনি সাধারণ মানুষেরও কষ্টের সীমা থাকে না। এসব অনাচার ও ব্যর্থতা ঢাকতে সরকারের কপটতার আশ্রয় নেয়া ছাড়া গতি নেই। এই কপটতাই যেন এখন বড় বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। কথার কলা কৌশল ও উন্নয়নের ফুলঝুরি ছড়িয়ে জনসাধারণের চোখে ধুলা দেয়ার একটা প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলছে। অর্থাৎ উন্নয়নের এক ধরনের ফানুসের মধ্যে মানুষকে ভাসিয়ে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবকিছুতেই উন্নতির গ্রাফ উর্ধমুখী। অথচ সেই গ্রাফের কোনো ভিত্তিমূল নেই। ফলে সরকার তার সাফল্যের যে সাফাই গাইছে তার অন্তঃসারশূন্যতা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। প্রকাশিত হচ্ছে, দলীয় এমপিরা কীভাবে ও কতভাবে দুর্নীতি করে চলেছে। আমরা জানি না, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত এসব এমপির এহেন দুর্নীতির বিচার কখনো হবে কিনা।
darpan.journalist@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন