সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি রোধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন। দেশে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন, আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। দুর্নীতিতে আমরা সবাই নিমজ্জিত। তবে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, যাদের ক্ষমতা আছে তারাই দুর্নীতি করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদও বলেছেন, আমরা যারা রক্ষক হয়ে আছি, তারাই ভক্ষক হিসেবে অবতীর্ণ হয়ে আছি। গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইন ১০৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেছেন। অর্থমন্ত্রী এ কথাও বলেছেন, দেশে দুর্নীতির সংস্কৃতি আগে ছিল না। এটা একটা গোপনীয়তার মধ্যে ছিল। একটু লজ্জার বিষয় ছিল। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও যাদের সেবা প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই দুর্নীতি করেন। এমনকি সেবা প্রত্যাশীদেরও পরোক্ষভাবে দুর্নীতিতে জড়ানো হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুর্নীতি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবে জনসাধারণকে যে সেবা প্রদান করার কথা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তা স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি অফিস থেকে শুরু করে হাসপাতাল পর্যন্ত সর্বত্র এ চিত্র বিরাজ করছে। প্রভাবশালী না হলে বা অনিয়মের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনে যুক্ত না হলে, যথাযথ সেবা পাওয়া খুবই মুশকিলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশে যে অতীতের তুলনায় দুর্নীতির হার বেড়েছে, তা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উদ্বেগ প্রকাশ ও বারবার সতর্ক করা থেকে বোঝা যায়। জেলা প্রশাসকদের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তাদের দুর্নীতিমুক্ত থাকার আহŸান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই আহŸান জানিয়ে বলেছেন, দেশ থেকে দুর্নীতি উৎখাত করতে হবে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন দুর্নীতির বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়, তখন বুঝতে হবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। শুধু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নয়, একজন অতি সাধারণ নাগরিকও যদি সরকারি কোনো সেবা পেতে চান, তাকেও কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার হতে হয়। দুর্নীতির বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। অনেকের কাছে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ আশা করেছিল, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন যখন শতভাগের বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে, তখন দুর্নীতির হার অনেকটাই কমে যাবে। ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা পেলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্য থেকে ‘উপরি’ চাওয়ার বিষয়টি হ্রাস পাবে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, চাহিদার শেষ নেই বলে যে কথা রয়েছে, তার ব্যত্যয় না ঘটিয়ে একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারি চাহিদার লাগাম ছুটিয়ে দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ ঘুষের টাকাসহ দুদকের কাছে হাতেনাতে ধরাও পড়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানায় পুলিশের হেফাজতে মাহফুজুর রহমান নামে এক ব্যক্তির যে মৃত্যু হয়েছে, সেখানেও অভিযোগ উঠেছে পুলিশকে এক লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। এরকম প্রকাশ্য ঘটনা ছাড়াও অপ্রকাশ্য আরও কত ঘটনা যে ঘটছে, তা ভুক্তভোগীরাই কেবল জানেন। যারা চাহিদা মোতাবেক ঘুষ দিতে পারছেন, তারা রেহাই পাচ্ছেন। দিতে না পারলে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এমন ঘটনাও ঘটছে, অর্থের বিনিময়ে ভুয়া ওয়ারেন্ট জারি করে হয়রানি করা হচ্ছে। অর্থাৎ সর্বত্রই আইনের শাসনের অভাব এবং দুর্নীতি কঠিন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সরকারের নেয়া বিভিন্ন বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পেও দুর্নীতি ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। অর্থ সঠিক সময়ে ব্যয় না করা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। দাতা সংস্থাগুলো বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত নেয়ার কথাও বলেছে। বড় বড় প্রকল্পের সাথে জড়িত ক্ষমতাবানদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যে দুর্নীতি হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন কথাও শোনা যায় যে, যত বড় প্রকল্প, তত বড় দুর্নীতি। অর্থমন্ত্রী বিষয়টি যথাযথভাবে উপলব্ধি করেই মন্তব্য করেছেন। তার এ মন্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ কম।
সব দেশেই কম-বেশি দুর্নীতি হয়। তবে আমাদের দেশে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়, তা খুব কম দেশেই হয়। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে কীভাবে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠবে। দেশের স্বার্থে সবার আগে দুর্নীতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। আজকের যে মালয়েশিয়া তার উন্নয়নের পেছনে রয়েছে, দুর্নীতিকে কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করা। মাহাথির মোহাম্মদ এ কাজটি দৃঢ় পদক্ষেপে করতে পেরেছিলেন বলেই দেশটি সমৃদ্ধ হয়েছে। আমাদের দেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তা শুরু করতে হবে। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি প্রতিহত করতে হবে। এদের প্রতিহত করতে হলে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। সংস্থাটির সক্ষমতা কতটুকু, তা একজন সাধারণ মানুষও জানে। ফলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাকিদ দিলেই হবে না, দুর্নীতির বিষয়টি মনিটর করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতিবাজরা যতই প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের উচ্চপদে পদায়ন করতে হবে। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়কে যদি দুর্নীতিমুক্ত করা যায়, তবে তার প্রভাব সর্বত্র পড়তে বাধ্য। পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য তাদের সামনে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন