পঞ্চায়েত হাবিব : চলতি বন্যায় সারাদেশে ৪৫১টি স্থানে ১৬৫ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার বাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব বাঁধে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। আগামী আগস্টে দেশে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা প্রকাশ করা হলেও এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর মেরামত ও সংস্কারে ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার ও মেরামতের বরাদ্দ চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিস থেকে মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয়ের চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয় বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোঃ মাহফুজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের বিভিন্ন জোনের ৪৫১টি স্থানে ১৬৫ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার বাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব তথ্য আমাদের কাছে এসছে। আরো কিছু এলাকায় বাঁধ ভাঙ্গনের আশঙ্কা রয়েছে। আমরা এগুলো প্রথমিকভাবে মেরামতের ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী মাসে বন্যা হওয়ার আগে কিছুটা হলেও ভাল হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জোনের চিঠি বলা হয়েছে, চলতি বছরে জুন মাসে শেষার্ধ থেকে দেশের প্রধান প্রধান নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদী সুরমা- কুশিয়ারার পানি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার অতিক্রম করে। একই মাসে সুরমা- কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মৌলভীবাজার ও সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলায় বন্যা দেখা দেয়। এর পরে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ঘাঘট, ব্রক্ষপুত্র-যমুনাসহ বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। এ সময় বিভিন্ন এলাকার বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে কুড়িগ্রাম, লালমনিহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। এ বন্যার সময় এসব এলাকায় লাখ লাখ মানুষ নদী ভাঙ্গনেকবলের শিকার হয়। এদিকে বন্যার পানি কমানোর সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় তীব্র নদীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অবকাঠামো রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের অফিস গুলো সীমিত মাত্রায় জরুরী আপদকালীন কাজ বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন। এদিকে আগামী শুস্ক মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত বন্য নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও অন্যান্য অবকাঠামো গুলো মেরামত না করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবকাঠামো ও জনসম্পদ রক্ষা করা দুরুহ হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
চলবি বছর যেসব জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ভেঙ্গেছে ক্ষতিগ্রস্থ শিকার হয়েছে সে জেলা গুলো হচ্ছে,ঢাকা পওব বিভাগ-২ ঢাকা সাভার ও গাজীপুরে ৩টি স্থানে ১১ দশমিক৭০ কিলোমিটার বাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল বিভাগের ফরিদপুর পওব বিভাগের ফরিদপুর, সদর চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা উপজেলা, রাজবাড়ী সদর, বালিয়া কান্দি, ও পাংশা উপজেলায়,কুটিষ্টা পওব বিভাগের কুষ্ঠিা সদর, কুমারখালী ও খোকসা জোনে মোট ৩১টি স্থানে ৫দশমিক ১৪৫ দৈর্খ্য কিলোমিটার বাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। পুর্বাঞ্চল কুমিল্লা ব্রাক্ষণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বিভাগ এলাকার মধ্যে ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর, আখাউড়া, ফেনী, ফুলগাজী, পশুরাম, সোনাগাজী, নোয়াখালী, কোম্পানীগঞ্জ এবং হাতিয়া এলাকায় ২৪টি স্থানে ৩ দশমিক ২৯৬ দৈর্ঘ্য কিলোমিটার হাইড্রলিক ও স্ট্রাকচার বাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। উত্তর-পর্বাঞ্চল সিলেট জোনের সিলেট সদর, কানাঘাট, হব্গিঞ্জ সদর,চুনারুঘাট, মাধবপুর, মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, জুড়ী এবং বড়লেখা এলাকায় ৩৩টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে হাজার হাজার ঘর বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। উত্তর-পশ্চিবমাঞ্চল রাজশাহী জোনের, বগুড়া, সারিয়াকান্দি, ধনুট, সিজারগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি ও শাহাজানপুর,চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জ এলাকায় ১০টি স্থানে ২ দশমিক ৩৫৫ বাঁধ গেঙ্গে গেছে। উত্তরাঞ্চলের রংপুর জোনের, রংপুর,গংগাছড়া, লালমনিরহাটের সদর উপজেলা, হাতিবান্ধা, কুড়িগ্রাম জেলা সদর, উলিপুর, রাজাহাট. চিলমারী, রোৗমারী, রাজিবপুর, ফুলবাড়ি,নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারি, গাইবান্ধা জেলার সদর , সুন্দরগঞ্জ, ফুলবাড়ি, সাঘাটা. ডালিয়া পওব এলাকার নীলফামারী, লালমনিহাট ডিমলা, জলঢাকা ও হাতীবান্ধা এলাকার ৯৬টি স্থানে ২০ দশমিক ৭৩ দৈর্ঘ্য কিলোমিটার বাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এসব বাঁধে আশ্রয় নেয়া অসহায় গরীব মানুষ গুলো বিভিন্ন এলাকার চলে গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জোনের খুলনা, দাকোপ. বটিয়াঘাটা, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, আশাশুনি, শ্যামনগর, কয়রা, বাঘের হাটের সদর উপজেলা, যশোর সদর, মনিরামপুর, বেশবপুর, ডুমুরিয়া, নড়াই জেলার সদর উপজেলা, লোহাগড়া, ও কালিয়া উপজেলা মোট ৪১টি স্থানে ৯ দশমিক ৭১ দৈর্ঘ্য কিলোমিটার বাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
দক্ষিণ- পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম জোনের চট্টগ্রাম. আনোয়ারা, হাটহাজারী,ফটিকছড়ি,পটিয়া. সাতকানিয়া. বাঁশখালী,স›দ্বীপ,রাউজান, রাঙ্গুনীয়া, কাক্সবাজার, কুতুবদীয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, বান্দরবান জেলার সদর উপজেলা, রামু, টেকনাফ এবং মহেশখালী এলাকায় ১১৪টি স্থানে ৭৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। দক্ষিণনাঞ্চলের বরিশাল জোনের বরিশাল সদর, বাবুগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ,হিজলা, গৌরনদী, মুলাদী, উজিপুর, আগৈলঝড়া, বরগুনা জেলার সদর উপজেলা, বামনা, পাথরঘাটা, বেতাগী ও আমতলী, পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলা, গলাচিপা, মির্জাগঞ্জ, কলা পাড়া ও রাঙ্গাবালী এলাকায় ৯৯টি স্থানে আংশিক ১৭ দশমিক ১৩৭ দৈর্ঘ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলের আগষ্ট মাসের শেষ দিকে দেশের প্রধান নদ-নদী গুলো পানি বৃদ্ধি পেয়ে বড় ধরনে একটা বন্যা দেখা দিতে পারে।
পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দেশে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বড় বন্যা হয় যখন যমুনা, পদ্মা ও মেঘনার পানি একসঙ্গে বৃদ্ধি পায়। এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সতর্ক করা হয়েছে। বন্যার আগে বাঁধগুলো মেরামতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন