সারাদেশের সাথে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মাদক বিরোধী অভিযান চলামান রয়েছে। এ অভিযানে জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা থেকে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ পর্যন্ত মাদক বিরোধী অভিযানে জিরো টলারেন্সে থাকলেও মাদক বিক্রি কোন অংশে থেমে নেই। অভিযানে মাদক বিক্রির ধরন পাল্টেছে বলে সংশ্লিষ্টরা ইনকিলাবকে জানিয়েছেন। সম্প্রতি জেলার ৭ উপজেলার মধ্যে ৪ উপজেলার শীর্ষ ৪ মাদক বিক্রেতাকে ক্রস ফায়ারে দেয়া হলেও মূলত মাদক বিক্রি বন্ধ হয়নি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে অভিযানের পর থেকে জেলার শীর্ষ মাদক বিক্রেতারা গা ঢাকা দিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত প্রায় ১ মাস পূর্ব থেকে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করে। সেই কারণে উপজেলার শীর্ষ মাদক বিক্রেতাসহ খুচরা মাদক বিক্রেতারা গা ঢাকা দিতে শুরু করে। এ অভিযানে উপজেলায় মাদক বিক্রেতাদের মুষ্টিমেয় কয়েকজন আটক হলেও শীর্ষরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযানের শুরুর দিকে মাদক বিক্রি যৎসামান্য কম থাকলে ধীরে ধীরে মাদক বিক্রি পূর্বের অবস্থানে স্থান করে নিতে শুরু করেছে। অভিযান মধ্যে মাদক বিক্রির ধরন পাল্টেছে মানে মাদক বিক্রেতার স্থান আর কৌশল পাল্টেছে এক কথায় নিতান্ত পরিচিত ক্রেতা ছাড়া মাদক বিক্রি করছে না বিক্রেতারা।
হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিকভাবে মাদক বিরোধী অভিযান সমসময় চলে আসছে। তবে কঠোরভাবে মাদক নিয়ন্ত্রনের জন্য মাদক বিরোধী অভিযান চলছে প্রায় ১ মাস ধরে। এই ১ মাসে শুধু হাজীগঞ্জ থানা ১ হাজার ৭শ ১৭ পিস ইয়াবা, ৮শ ৫০ গ্রাম গাঁজা আর ৫ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় বিক্রেতা আর সেবনকারী আটক হয়েছে ২৫ জন আর মামলা হয়েছে ২৪টি। শুধু এই হিসেব মিলালে দেখা যায়, পুলিশ মাদক বিক্রেতা আর সেবীদের গ্রেফতারে যতটা তৎপর তেমনি মাদক বিক্রেতা বা সেবীরা কম তৎপর নয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায, মাদক বিক্রেতারা মাদক বিক্রির ধরন পুরোটা পাল্টেছে। একেবার প্রথম শ্রেনীর মাদক বিক্রেতারা চাচ্ছে যে কোন উপায়ে জেলে গিয়ে বসবাস করতে। কারন পুলিশের হাতে আটক হলে ভিন্ন ভয়ের চিন্তার ছেয়ে জেলে থাকা নিরাপদ মনে করছে তারা। আবার পুলিশের হাতে আটকে ভিন্ন চিন্তা কাজ করছে বিধায় পুলিশের মাধ্যমে জেলে যাওয়াটাও নিরাপদ মনে করছে না তারা। হাজীগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর খোরশেদ আলম ভুটো তার আপন ভাইসহ রামগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে ১শ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়। এটা হাজীগঞ্জের এই শীর্ষ মাদক বিক্রেতার বিশেষ কৌশল বলে হাজীগঞ্জের অনেকেই মনে করছেন। হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে আটক না হয়ে কৌশলে রামগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে আটক হওয়াটা ভুট্টোর নিজস্ব কৌশল বা তার বড় ভাইয়ের কৌশল বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। আবার পালিয়ে থাকলে কোন না কোন ভাবে পুলিশ আটক করবে আর ক্রস ফায়ারে পড়ে যেতে পারেন তার ছেয়ে অন্য জেলায় আটক হয়ে জেলে থাকা তার জন্য নিরাপদ বলে এই কৌশল করেছেন বলে হাজীগঞ্জের আমজনতাকে বলাবলি করতে শুনা যাচ্ছে।
অন্যদিকে মাদক বিক্রির ধরনে মধ্যে প্রথমত মাদক বিক্রেতারা এখন আর তাদের নিজ বাড়িতে থাকছে না। দ্বিতীয়ত এরা এখন আর নিতান্ত পরিচিত কাষ্টমার ছাড়া মাদক বিক্রি করছে না। তুতীয়ত নিজেরা সরাসরি মাদক পৌঁছে না দিয়ে বিশ^স্তকে দিয়ে মাদক পৌঁছে দিচ্ছে, চতুর্থত বিক্রেতারা তাদের পূর্বের মোবাইল সিম পাল্টে নতুন সিম ব্যবহার করছে আর সম্প্রতি সময় মাদক বিক্রিতে নারীকে ব্যবহার করছে। হাজীগঞ্জের টোরাগড় এলাকা থেকে কয়েকজন নারীকে ইয়াবার বড় চালানসহ গ্রেফতার করে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জাবেদুল ইসলাম জানান, আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে আর আমরা মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্সে রয়েছি। তবে উপজেলাবাসীর প্রতি অনরোধ রইলো মাদক বিক্রেতা বা সেবনকারীকে দেখামাত্র পুলিশে খবর দিতে, আমরা তথ্য প্রদানকারীর নাম পরিচয় অবশ্যই গোপন রাখবো।
একই বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) আফজাল হোসেন মুঠোফোনে ইনকিলাবে বলেন, পুরাতনরা এলাকা ছেড়েছে এটা নিশ্চিত আর এ কারনে মাদক বিক্রি প্রায় পুরোটা কমে গেছে। এ যারা গ্রেফতার হচ্ছে তারা মূলত নতুনভাবে মাদকে জড়াচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন