শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

’৪৭-এ যেভাবে ভারত-পাকিস্তান ভাগ করেন সিরিল র‌্যাডক্লিফ

‘অন্তত ৮ কোটি মানুষ আমাকে দেখবে ক্ষোভ নিয়ে’

| প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সত্তর বছর আগে একজন ব্রিটিশ আইনজীবীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে ভাগ করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা ঠিক করার জন্য। কাগজে কলমে ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে ভাগ করতে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছিলো তাকে। কিন্তু যে সীমানা তিনি এঁকেছিলেন ভারত ও পাকিস্তানের, তা আজো উপমহাদেশে বড় উত্তেজনার মূল কারণ। এই ব্রিটিশ আইনজীবীর নাম সিরিল র‌্যাডক্লিফ। ব্রিটিশ ভারতে তখন জনসংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন অনেকটা তড়িঘড়ি করেই ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে একই সাথে তারা মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৪৭ সালের আগস্টে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানের উদ্ভব হয়।
অন্যদিকে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ছিলো দুটি বড় প্রদেশ, যেখানে মুসলিম ও অমুসলিমরা ছিলো প্রায় সমান সংখ্যক। এর একটি হলো পূর্ব দিকে বাংলা আর পশ্চিম দিকে পাঞ্জাব। র‌্যাডক্লিফের দায়িত্ব ছিলো এই দুটি প্রদেশের মধ্যে বিভক্তি লাইন টেনে দেয়া, যা ছিলো অত্যন্ত জটিল কাজ। এ কাজটি করতে তাকে নির্ভর করতে হয়েছে কিছু অনড় উপদেষ্টা, একটি পুরনো মানচিত্র আর জনসংখ্যার ভুল চিত্র সম্বলিত তথ্য। শত বছর ধরে পাশাপাশি বসবাস করে আসছে এমন কোন স¤প্রদায়কে সোজা লাইন টেনে বিভক্ত করার সুযোগ ছিলো না। তখন এ নিয়ে উত্তেজনা ছিলো চরমে এবং র‌্যাডক্লিফ নিজেও জানতেন যে এটা কতটা ঝুঁকির কাজ ছিলো। তার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়েছিলো ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার কয়েকদিন পর। এতে লাখ লাখ মানুষ স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপন শুরু করে যদিও তারা নিজেরাই জানতোনা যে তারা ঠিক কোন দেশের অধিবাসী হতে যাচ্ছেন। অনেকেই আবার বিস্মিত হয়েছিলেন।
১ কোটি ২০ লাখ মানুষ র‌্যাডক্লিফের আঁকা বিভক্তি লাইন যেটি পরে র‌্যাডক্লিফ লাইন নামে পরিচিতি পায় সেই লাইন অতিক্রম করতে হয় নিজের বসবাসের জন্য। শুরু হয় ধর্মীয় সহিংসতা, আর তাতে প্রাণ হারায় প্রায় ৫ থেকে ১০ লাখ মানুষ।
এটি ছিলো একটি ভয়াবহ ট্রাজেডি যা এখনো রক্তাক্ত করে চলেছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ককে। তবে সিরিল র‌্যাডক্লিফ দেশভাগ শেষ করে ভারত ছাড়ার আগেই পুড়িয়ে ফেলেন তার সব নোট। পুরস্কার স্বরূপ দেশে ফিরে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে নাইট উপাধি পান। তবে তার মনে কোন সন্দেহ ছিলো না যে পাঞ্জাবী আর বাঙ্গালীরা তার সম্পর্কে কী চিন্তা করবে বা তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবে। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘অন্তত ৮ কোটি মানুষ আমাকে দেখবে ক্ষোভ নিয়ে’।
তবে স্যার সিরিল র‌্যাডক্লিফ আর কখনোই ভারত ও পাকিস্তানে আসেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
জেসমিন ৩ আগস্ট, ২০১৭, ২:০৬ এএম says : 0
এর কারণেই উপমহাদেশের আজকে এই অবস্থা
Total Reply(0)
Miah Muhammad Adel ৩ আগস্ট, ২০১৭, ৪:৪০ এএম says : 0
ভারত বিভক্ত না হলে পাকিস্তান হতো না। আর পাকিস্তান না হলে স্বাধীন বাংলাদেশ হতো না। মুসলমানদের ্তো আর্থ-সামিজিক উন্নতি হতো না। "যেখানে মুসলিম ও অমুসলিমরা ছিলো প্রায় সমান সংখ্যক। এর একটি হলো পূর্ব দিকে বাংলা আর পশ্চিম দিকে পাঞ্জাব" বিবৃতিটা কতদূর সত্য তা সংখ্যা দিয়ে প্রমাণ প্রয়োজন। আমার অনেক বয়োজেষ্ঠ সহকর্মীর চাচা ছিলেন টাঙ্গাইল থেকে সংসদ সদস্য। কলকাতা সংসদ অধিবেশনে তারা যখন মুসলমান ছাত্রের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা পৃথক আবাসিক হলের প্রস্তাব করেন, বিন্দুরা প্রতিবাদ করছিল যে তারা য়াকাতে মিনিমেক্কা তৈরী করতে যাচ্ছে। মুসলমানদের বেশীর ভাগের পরিচয় ছিল নিম্নমানের চাকুরি -চৌকিদার, দফাদার, ইত্যাদি- করা আর হিন্দুদের গরুর ঘাষ সরবরাহ করা। মুসলমানদের শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। পাকিস্তান জন্মের পর ১৯৪৮ আমাদের গ্রামে মুসলিম লীগের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় একটা প্রইমারি বিদ্যালয়। এরই বদৌলতে ঐ গ্রামে প্রায় ঘরে ঘরে এখন একাধিক গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রীধারী লোকজনের বাস। এস, এস, সি পাশ তো ভুরি ভুরি। এরকম অনেক অবদান মিলবে এখনকার বাংলাদেশে। মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার দারুণ অভাব ছিল। পাকিস্তান হওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজির পর মিলেছিল সিংড়ায় একজন বি, এ পাশ ব্যক্তির যাকে করা হয়েছিল নাটোর মহকুমার এসডিও। তাঁর অফিসে তখন বসার আসন ছিল বাঁশের মাচা। ডঃ কামার হোসেনই টিভি অনুষ্ঠানে স্বীকার করলেন যে পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন