মহিউদ্দিন খান মোহন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া একটি অনন্য সাধারণ নাম। আপন মহিমায় তিনি ভাস্বর। আপাদ-মস্তক রাজনীতিক ছিলেন তিনি। রাজনীতি ছাড়া তিনি কিছু করেন নি, বুঝেন নি। রাজনীতি ছিল তাঁর ধ্যান জ্ঞান। তাঁর সে রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা ছিল জনগণ এবং তাদের অধিকার নিয়ে। ‘জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার’ ছিল তাঁর কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়। তিনি যেমন ছিলেন গণতন্ত্রে পূর্ণ বিশ্বাসী, তেমনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে গেছেন। গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অবিচল আস্থা, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধাবোধ তাঁকে নিয়ে গেছে ভিন্ন রকম উচ্চতায়। আর সেজন্যই এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী’Ñপ্রিয় যাদু ভাই।
১৯২৪ সালের ৯ জুলাই রংপুর (বর্তমান নীলফামারী) জেলার ডিমলা উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া। তাঁর বাবার নাম ওসমান গণি এবং মা আবিয়ন নেছা। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ের একজন অগ্রসর নারী। তিনি ‘অল বেঙ্গল উইমেন ফেডারেশনের’ সভানেত্রী ছিলেন।
ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন যাদু মিয়া। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তিনি পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নেতাজী সুভাস বসুর আহ্বানে বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) যান এবং সেখানে ‘লিবারেশন ফোর্সে’ যোগ দেন। ১৯৪৩ এর মহাদুর্ভিক্ষের সময় মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া বৃহত্তর রংপুরের চরাঞ্চলে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নেন। ওই সময় মহামারী আকারে ‘প্লেগ’ ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্লেগ আক্রান্ত রোগীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর এ মানবকল্যাণমুখী কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ভূরুঙ্গামারী সংলগ্ন একটি চরের নাম ‘যাদুর চর’ রাখা হয়েছে।
১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য জনগণকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করেন। দাঙ্গার ভয়াবহতা ও নৃশংসতা সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার উদ্দেশ্যে তিনি একটি বুলেটিন প্রকাশ করেন। তাতে ‘দাঙ্গার বিবরণ ও নিহতদের লাশেল ছবি উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে’-এ অভিযোগ এনে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। দিল্লি কোর্টে অনুষ্ঠিত ট্রায়ালে যাদু মিয়া নিজেই আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। তাঁর ক্ষুরধার বক্তব্য, তীর্যক মন্তব্য ও অকাট্য যুক্তির মুখে কোর্ট তাঁকে সসম্মানে মুক্তির আদেশ দেন। তিনি ফিরে আসেন নিজ এলাকা নীলফামারীতে। তাঁর ঐকান্তিক ও নিরলস প্রচেষ্টায় সেখানকার দাঙ্গা প্রশমিত হয়।
বিংশ শতাব্দীর চল্লিশ দশকের শেষের দিকে তিনি জউঝঅ (জঅঘএচটজ উওঝঞজওঈঞ ঝচঙজঞঝ অঝঝঙঈওঅঞওঙঘ)-এর অনারারি সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। তিনি জউঈঈঝ (জঅঘএচটজ উওঝঞজওঈঞ ঈঙঘ-ঝটগঅজঝ ঈঙঙচঊজঅঞওঠঊ ঝঙঈওঊঞণ)-এর গ্রেটার রংপুরের অনারারি সেক্রেটারি নির্বাচিত হন ১৯৫৪-৫৮ সালে এবং পরবর্তী সময়ে সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখেন পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে। ওই সময় তিনি পর পর দু’বার রংপুর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি ছিলেন বয়সের হিসেবে সর্বকনিষ্ঠ চেয়ারম্যান।
১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান যুব উৎসবের প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান হন মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া। নানারকম প্রতিবন্ধকতা এবং মহল বিশেষের বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে যুব উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
একই বছরে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আহুত ‘ঐতিহাসিক কাগমারী’ সম্মেলন সফল করতে যাদু মিয়া বলিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং বিরোধী দলের উপনেতা হন। একই বছর পাকিস্তানের প্রথম উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সরকারি প্রতিনিধি দলের উপনেতা হিসেবে গণচীন সফর করেন। উল্লেখ্য যে, ওই সফরের প্রধান দলনেতা মওলানা ভাসানী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চীনের একটি হাসপাতালে ভর্তি হলে দলের দায়িত্ব মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়ার ওপর ন্যাস্ত হয় এবং তিনি অত্যন্ত সূচারুরূপে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া প্রগতিশীল রাজনীতিকদের সারিতে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের পূর্ব পাকিস্তানের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন, শোষণ, বঞ্চনায় ক্ষুব্ধ যাদু মিয়া প্রতিবাদী হন। সে সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে স্বোচ্চার হন। স্বায়ত্ত্বশাসনের এ দাবি রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় এক সময় স্বাধিকার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান সরকার মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়াকে গ্রেফতার করে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার কারণেই স্বৈরাচার আইয়ূব সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি। ১৯৬৬ সালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে যে গণ আন্দোলনের সূচনা হয়, মশিয়ূর রহমান সে আন্দোলন সংগঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠনে মওলানা ভাসানীর পাশে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ষাটের দশকের শেষের দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্বৈরাচার আইয়ূব সরকারবিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসন ও মুক্ত গণতন্ত্রসহ এ অঞ্চলের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত মওলানা ভাসানীর ১৪ দফা এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। পার্লামেন্টের ভেতরে বাইরে মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া উল্লিখিত দাবির পক্ষে কঠোর অবস্থান নেন। স্বৈরাচার আইয়ূব খান সরকারের দমননীতির প্রতিবাদে মওলানা ভাসানীর আহ্বানে যাদু মিয়া পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য পদে ইস্তফা দেন। সে সময় ন্যাপের এক সমাবেশে তিনি তাঁর জাতীয় পরিষদ সদস্য পদের সনদপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। একই বছর পশ্চিম পাকিস্তানের লায়ালপুরে এক সমাবেশে তিনি তীব্র ভাষায় সামরিক সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে ‘গাদ্দার’ অভিহিত করায় তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সামরিক আদালতে প্রহসনমূলক বিচারে তাঁকে সাত বছর কারাদ- দেয়া হয়।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ ন্যাপের উদ্যোগে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় মশিয়ূর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই তিনি দেশ ত্যাগ করেন। ভারতের কলকাতায় অবস্থানকালে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সমর্থনে একটি জাতীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগসহ সেখানে অবস্থানরত প্রগতিশীল ধারার নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা শুরু করেন এবং সর্বদলীয় সরকার গঠনের ডাক দেন। মওলানা ভাসানী তখন ভারতে গৃহবন্দী। কিন্তু তখনকার ভারতীয় কংগ্রেস সরকার এবং একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এই উদ্যোগে শুধু বাধাই দেয়নি বরং তাঁর জীবননাশেরও চেষ্টা করে। বাধ্য হয়ে তিনি কলকাতা ত্যাগ করেন। সেখান থেকে ডিমলা যাওয়ার পথে জলপাইগুড়ির কাছাকাছি দেওয়ানগঞ্জে তাকে কংগ্রেসের গু-া বাহিনীর নেতা শম্ভু মুখার্জীর দল গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। অল্পের জন্যে তিনি প্রাণে রক্ষা পান।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব সরকার মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়াকে গ্রেফতার করে। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রক্তাক্ত রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সংঘটিত হয়। একই বছরের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আর্বিভাব ঘটে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের। সে সময় বাংলাদেশে সৃষ্টি হয় বিশাল এক রাজনৈতিক শূন্যতা। অভিজ্ঞ রাজনীতিক মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া সে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের উপায় উদ্ভাবনের চিন্তায় নিমগ্ন হন।
১৯৭৬ সালে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিলের ডাক দেন। মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া মজলুম জননেতার পাশে ছায়াসঙ্গীর মতো অবস্থান করে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চকে সফল করতে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেন। তিনি লংমার্চ সফল করার লক্ষ্যে গঠিত সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ইন্তেকাল করেন। তারপর মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া ন্যাপের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
সামরিক শাসনের অবসান ও গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যাদু মিয়া তাঁকে গণতন্ত্রে উত্তরণ ও বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতি পুনঃপ্রবর্তনে পরামর্শ দেন।
বস্তত ওই সময়টা ছিল মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট। সময়টা ছিল সিদ্ধান্ত নেয়ার। তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। প্রাজ্ঞ রাজনীতিক মশিয়ূর রহমান সামরিক শাসনের অবসান এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে থাকেন। প্রেসিন্টে জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভায় তিনি অংশ নেন। সে সভায় মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়ার দীর্ঘ বক্তৃতা ছিল বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতির ‘দিক নির্দেশনা’। তাঁর সে ঐতিহাসিক বক্তৃতা সে সভায় উপস্থিত অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যেমন সমর্থন করেছিলেন, তেমনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও তাঁর (যাদু মিয়ার) বক্তব্যের মর্মার্থ গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। তারপরই তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের উপায় উদ্ভাবনে মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরামর্শ শুরু করেন।
১৯৭৮ সালে ন্যাপ, জাগদলসহ ছয়টি রাজনৈতিক দল সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠিত হয়। এ ফ্রন্ট গঠনের নেপথ্যে মশিয়ূর রহমানের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়, তিনি ছিলেন প্রক্রিয়ার মূল নিউক্লিয়াস, ওই একই বছরের ৩ জুন দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া সে নির্বাচনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। এক কোটিরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান তাঁর মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করলে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়াকে ‘সিনিয়র মন্ত্রী’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের ক্ষেত্রে মশিয়ূর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টা এবং নিরলস পরিশ্রমের ফলে সামরিক শাসক থেকে জিয়াউর রহমান একজন গণতান্ত্রিক রাজনীতিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ওই সময় মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক যে রাজনীতির গোড়া পত্তন করেন প্রেসিডেন্ট জিয়া, সেখানে মশিয়ূর রহমানের ভূমিকা অনন্য। এটা স্বীকার করতেই হবে যে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁর রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়ার মতো একজন অভিজ্ঞ এবং সৎ পরামর্শক পেয়েছিলেন বলেই দ্রুত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া এ দল গঠনে পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৪ জুলাই ন্যাপের বিশেষ কর্মী সম্মেলন ডেকে সবার মতামতের ভিত্তিতে ন্যাপ ‘বিলুপ্ত’ করে বিএনপিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হন জিয়াউর রহমান। ভাইস-চেয়ারম্যান হন মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া।
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবগঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনোত্তর সময়ে যখন নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল, সে সময় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ১২ মার্চ ইহলোক ত্যাগ করেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী, জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অন্যতম পথিকৃৎ মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া একটি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তাঁর নীতি-আদর্শের আলোক বিচ্ছুরণ আজও এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে আলোকিত করে চলেছে। তাঁর রাজনৈতিক পথ চলা আমাদেরকে অণুপ্রাণিত করে। আজ তাঁর ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ দিনে আমরা তাকে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধায়। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, ভাসানী-মশিয়ূর পরিষদ
সড়যড়হ৯১@ুধযড়ড়.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন