শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

হজের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে

প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ গোলাম হোসেন
গত হজের সময় মিনায় পদদলিত হয়ে শাহাদাতবরণকারী বনি আদমের সংখ্যাটি কারও কারও মতে কম-বেশি দুই হাজার। ঘটনাটি উম্মাহর জন্য শুধু দুঃখজনক নয়, বিব্রতকরও। অন্যান্য অনেক ইস্যুর মতো মিনার বেদনাদায়ক ঘটনা নিয়ে ইরান, সৌদি বিতর্ক হয়তো চলবে আরও কিছুদিন। অথচ সদিচ্ছা ছাড়া বিতর্ক কোনো সমাধান দেয় না বরং বিভাজনের পথটাই সুগম ও প্রশস্ত করে মাত্র। হজের আনুষ্ঠানিকতাগুলো যাতে আরও সহজ ও নিরাপদ হয় সেই লক্ষ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তৎপর রয়েছেন এবং সেই একই লক্ষ্যে নিবেদিত আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটিও।
আল্লাহর মেহেরবানীতে ২০১১ সালে হজ করার সুযোগ হয়েছিল। বিধিবদ্ধ আনুষ্ঠানিকতার ফাঁকে অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা ছিল সব সময়ই। দেশে ফিরে কিছু লিখব বলে ডায়রিতে প্রয়োজনীয় নোট নিলেও নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। স্মৃতিতে ভাস্বর অভিজ্ঞতা ও ডায়রিতে সংরক্ষিত তথ্যের ভিত্তিতে হজের আনুষ্ঠানিকতাগুলো আরও গতিশীল ও নিরাপদ করার প্রত্যাশাই এই আলোচনার উৎস। সন্দেহ নেই, এটি একটি জটিল ও সংবেদনশীল বিষয়। তদুপরি যত না তাত্ত্বিক তার চেয়ে ঢের বেশি ব্যবহারিক। তারপরও আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা আছে বলেই আলোচনায় সাহস পাচ্ছি।
প্রথমত, বিপর্যয় ও ক্লেশের সম্ভাব্য কারণগুলো চিহ্নিত করা যাক: ১। ব্যবস্থাপনাজনিত ত্রুটি বা দুর্বলতা, ২। সুযোগসন্ধানী ইবলিশের অপতৎপরতা, ৩। নিয়তি, যার কাছে জ্ঞান-বুদ্ধি সবই অসহায়।
হজের আমলসমূহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানগুলো হলোÑপবিত্র কাবা ও মসজিদে হারাম এরিয়া, মিনা, আরাফাত এবং মুজদালিফা। আমরা এখানে পবিত্র কাবা ও মিনাকেন্দ্রিক সমস্যাগুলোর দিকে দৃষ্টি দেব। বিশাল বিশাল স্থাপনা ও পাহাড়ঘেরা পবিত্র কাবার চারদিকে তাওয়াফের জন্য যে উন্মুক্ত চত্বরটি রয়েছে তা যথেষ্ট নয় বিবেচনায় বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হলেও ভূমি সমতলে ভিড় লেগেই থাকে সবসময়। কাবাকেন্দ্রিক উপ-বৃত্তাকার চত্বরটি স্থানবিশেষে আনুমানিক ৩০ থেকে ৬০ মিটার এবং আয়তন কম-বেশি ৬ হাজার বর্গমিটারের মতো। লক্ষ লক্ষ তাওয়াফকারীর জন্য তা মোটেও যথেষ্ট নয়। তা ছাড়া ব্যাসার্ধ কোথাও ৬০ মিটার কোথাও আবার ৩০ মিটার হওয়ায় তাওয়াফকারী জন¯্রােত ৬০ থেকে ৩০ মিটারে এসে এক প্রচ- ভিড় ও চাপের মুখে পতিত হয়। অন্যদিকে ধারণ ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জন¯্রােত নিয়ন্ত্রণে কোনো নিয়ম বা ব্যবস্থা না থাকায় পৌনঃপুনিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে হাজীদের কষ্ট ও সময়ের কোরবানি। তাওয়াফ শুরু ও শেষ করার নির্ধারিত স্থানটি (সবুজবাতি) এই সংকীর্ণ পরিসরেই অবস্থিত বলে তাওয়াফকারীদের অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী প্রবণতায় এখানে সদা ত্রিমুখী এক সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখে। বৃদ্ধ, রুগ্ন, প্রতিবন্ধী ও নারীদের জন্য এই পরিস্থিতি মোকাবেলা বেশ কষ্টকর। মাকামে ইব্রাহীম তথা উত্তর-পূর্ব চত্বরটি প্রশস্ততার দিক থেকে ৬০ মিটারের মতো হলেও জমজমের পানি পান এবং দুই রাকাত নামাজ আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট বলে তাওয়াফের স্থানটি এখানে সংকীর্ণ হয়ে গেছে অর্ধেকের মতো। ফলে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা এখানে গেলেই থাকে। আবার তাওয়াফ শেষে জমজমের পানি পানের সুবিধার্থে অনেকে এই স্থানটিকেই বেছে নেন বের হওয়ার জন্য। ফলে এখানেও একটা বিশৃঙ্খলা লেগে থাকে।
হাযরে আছওয়াদ চুম্বন বা স্পর্শ একটি সুন্নাত আমল হলেও তা পালনে একটি ঐকান্তিক আগ্রহ থাকে সবার মধ্যেই। সুতরাং সুন্নাত আমল বলে এটি পেশিশক্তির ওপর ছেড়ে দেয়া যায় না বলেই মনে করি। মশা-মাছিকেও কষ্ট দেয়া যেখানে হারাম সেখানে হাযরে আছওয়াদকে ঘিরে একটি মারমুখী ও কষ্টদায়ক পরিস্থিতি বিরাজ করবে তা কেমন করে হয়? হেন আশঙ্কা অমূলক নয় যে, ইবলিশ এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে ঘটাতে পারে একটি ভয়াবহ বিপর্যয়।
ঐতিহাসিকভাবে অপতৎপরতার জন্য মিনাকেই বেছে নিয়েছে যেন ইবলিশ। বারবার আগুনে পুড়ে মরার ঘটনা ঘটলেও পিকনিক পার্টির আমেজে তেল-গ্যাসের চুলায় রান্নাবান্নার দৃশ্য নজরে পড়ার মতো। নিয়ন্ত্রণহীন অযুত মানুষের জামারামুখী মিছিল চলে আগের মতোই। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার ব্যবস্থাটি যথেষ্ট নয় বলেই মনে হয়েছিল। ক্রমবর্ধমান হাজীর সংখ্যা, নিরাপত্তাজনিত নিত্যনতুন ইস্যু ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিবেচনায় নিñিদ্র নিরাপত্তার বিষয়টি গভীর মনোযোগের দাবি রাখে।
মুখ্য সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণে চেষ্টার পর এবার সম্ভাব্য প্রতিকারের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক।
১। পবিত্র কাবা তাওয়াফে ভূমি সমতলের উন্মুক্ত চত্বরটিকে যথাসম্ভব সমানুপাতিক হারে বিন্যাসপূর্বক ৬০ মিটার ও ৩০ মিটারের ব্যবধান কমিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
২। তাওয়াফ সহজ, নিরাপদ ও দ্রুততর করার লক্ষ্যে ধারণ ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মূল চত্বরে তাওয়াফকারীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয় মনে হয়।
৩। হাযরে আছওয়াদ চুম্বন বা স্পর্শের সুযোগটি পেশিশক্তির ওপর ছেড়ে না দিয়ে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আশা দরকার।
৪। তাওয়াফের কাজটিকেও একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে এলে সময়, কষ্ট ও নিরাপত্তার ঝুঁকি লাঘব হয়।
উল্লিখিত সমস্যাগুলো নিরসনে মাত্র ৩০/৪০ মিটার দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভারই যথেষ্ট হতে পারে। রুকনে শামী ও রুকনে ইয়ামেনির মধ্যবর্তী চত্বরটি তুলনামূলকভাবে প্রশস্ততর। এই চত্বরটিতে সুবিধাজনক স্থানে মসজিদে হারাম থেকে কাবার দিকে প্রলম্বিত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা যেতে পারে। এটি এমন হওয়া বাঞ্ছনীয় যাতে পদদলে বা চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে যুগপৎ ১ম তলা ও ২য় তলা থেকে সহজে ব্যবহার করা যায়। তাওয়াফের সুবিধার্থে বর্তমানে পবিত্র কাবা ঘিরে বৃত্তাকারে যে দ্বিতল ব্যবস্থাটি নেয়া হয়েছে তা সুন্দর ও প্রত্যাশিত। ছবি দেখে প্রতীয়মান হয় যে এই দ্বিতল বৃত্তাকার ব্যবস্থাটির ১ম ও ২য় তলার মাঝে শূন্য স্থানটি ২০/২৫ ফুটের মতো। সুতরাং প্রস্তাবিত ফ্লাইওভারটি এই ফাঁকাটি ক্রস করে অনায়াসে স্থাপন করা সম্ভব। ফ্লাইওভারটি কাবা দেয়ালের সমান্তরালে এমনিভাবে ভূমিতে নেমে আসবে যাতে করে ফ্লাইওভার থেকে কাবা দেয়ালের দূরত্ব ফ্লাইওভারের প্রশস্ততার সমানুপাতিক হয়। অর্থাৎ ফ্লাইওভারটি ২০ মিটার প্রশস্ত হলে কাবা দেয়াল থেকে ২০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে সেটি মাটি স্পর্শ করবে। ভূমি সমতলে তাওয়াফ করতে বা হাযরে আছওয়াদ চুম্বন করতে ইচ্ছুক হাজীগণই কেবল ফ্লাইওভার দিয়ে তাওয়াফ করতে যাবেন। ভূমি সমতলে অবতরণের পর সবুজ বাতি পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে তারা তাওয়াফ গণনা শুরু করবেন। যারা হাযরে আছওয়াদ সংশ্লিষ্ট আমলটিতে আগ্রহী তাদের জন্য ফ্লাইওভারের বাম পাশ বরাবর রেলিং দিয়ে আলাদা করা যেতে পারে, যা হাযরে আছওয়াদ পর্যন্ত প্রলম্বিত হবে। দ্রুততর সঙ্গে প্রতি মিনিটে যত জনের পক্ষে হাযরে আশওয়াদ স্পর্শ বা চুম্বন করা সম্ভব সেই অনুপাতে তাদের ফ্লাইওভারে ওঠার সুযোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হাযরে আছওয়াদ স্পর্শ বা চুম্বন শেষে তারাও অন্য তাওয়াফকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাওয়াফ গণনা শুরু করবেন। প্রতি তাওয়াফের পর তাওয়াফকারীগণ স্ক্রুর প্যাঁচের মতো ক্রমশ ডানে সরে যাবেন, যেন ৭ম তাওয়াফ শেষে কোনো ধরনের ধাক্কাধাক্কি ছাড়াই জমজমের পানির কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন। এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে অন্তত হজের মৌসুমে কোনো হাজীকে হাযরে আছওয়াদ স্পর্শ বা চুম্বনের সুযোগ একবারের অধিক দেয়া যাবে না। এ জন্য মোয়াল্লেম কর্তৃক ইস্যুকৃত পরিচয়পত্রটি সঙ্গে নিয়ে আসা এবং তাতে পাঞ্চ করে দেয়া যেতে পারে। পরামর্শটির বাস্তবতা এখানে একটি গাণিতিক পর্যবেক্ষণ দেয়া গেল। শরিয়াহ যদি আপত্তি না করে হাযরে আছওয়াদ মুক্ত অবস্থায় একটি টেবিলের ওপর রেখে দুই পাশ দিয়ে হাজীদের শুধু ছুঁয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে প্রতি মিনিটে অন্তত ১২০ জনের পক্ষে এই আমলটি সহজে সম্পাদন সম্ভব। এই হিসাবে দুর্বল, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য দুই ঘণ্টা বাদ দিয়ে দৈনিক ২২ ঘণ্টায় দেড় লাখেরও অধিক জনের পক্ষে এই সুযোগ নেয়া সম্ভব। দুর্বল প্রতিবন্ধী সমেত সংখ্যাটি দাঁড়াবে ১ লাখ ৬০ হাজার বা তারও অধিক। এই হিসাবে ১ম ফ্লাইট থেকে শেষ ফ্লাইট পর্যন্ত মোটামুটি ৭০ দিনে সংখ্যাটি দাঁড়াবে কম-বেশি ১ কোটি ১২ লাখ বা বর্তমান হজযাত্রীর মোট সংখ্যার ৪ গুণ বা তারও বেশি। পক্ষান্তরে হাযরে আছওয়াদ বর্তমান অবস্থানে অপরিবর্তিত রেখেও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ হাজার হাজী এই সুযোগ নিতে পারেন। এতে ৭০ দিনে মোট অংক দাঁড়ায় কম-বেশি ৪০ লাখ। অথচ বর্তমান বিশৃঙ্খল অবস্থায় দৈনিক ৪/৫ হাজার লোকও এই সুযোগটি পাচ্ছে কিনা সন্দেহ।
৫। হজের পূর্বাপর কয়েকটি দিন তাওয়াফকারীদের প্রচ- ভিড় লক্ষ করা যায়। সময়, সাশ্রয়, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে যেসব দেশের হাজীর সংখ্যা ২০ হাজারের অধিক সেসব দেশের জন্য (কাবা চত্বরে) তাওয়াফের সময় নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
৬। মিনায় তাঁবুতে রান্নাবান্না নিষিদ্ধকরণ এবং হাজীদের কষ্ট না হয় এমন সমন্বিত বিকল্প ব্যবস্থা জরুরি।
৭। মিনাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টি একটু বিস্তারিত আলোচনা করার দাবি রাখে বৈ-কি। মুজদালিফা থেকে সুড়ঙ্গসদৃশ পথে মিনা অভিমুখী নিযুত মানুষের বিশাল মিছিলটি অপরিকল্পিত ও অরক্ষিত অবস্থায় চলতে দেয়াটা যে কোনো সময় চরম বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। সন্ত্রাসী কর্মকা-ের আশঙ্কা ছাড়াও একটি গুজব এমনকি অবাঞ্ছিত কোনো শব্দ আতঙ্ক একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। বিশাল এই জন¯্রােতে বৃদ্ধ, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী মোটেও থাকবে না এমনটি নয়। আবার অপ্রত্যাশিতভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন কেউ কেউ। এহেন ব্যক্তিকে উদ্ধার ও সেবাদান জীবনের ঝুঁকি নিয়েও প্রায় অসম্ভব। এ ছাড়াও রয়েছে পিপাসা ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন। মাঝে মাঝে শৌচাগার থাকলেও ভিড় অতিক্রমপূর্বক সেখানে পৌঁছানো অনেক সময় দুঃসাধ্য ব্যাপার। পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকলেও নজরে পড়ার মতো নয়, শঙ্কা রয়েছে আগুনের মতো বিপর্যয়েরও। বারবার দুর্ঘটনাকবলিত এ স্থানটি অনেকের কাছে এমনিতেই আতঙ্কের কারণ। এখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় আমাদের পরামর্শগুলো পেশ করা হলো।
(ক) কংকর নিক্ষেপের কাজটি দুর্বল, অসমর্থ, রুগ্ন ও প্রতিবন্ধীদের পক্ষ থেকে অন্যের আদায় করে দেয়ার সুযোগ রয়েছে। নারীদের জন্য দিনের শেষে রাতেও কংকর নিক্ষেপের সুযোগ রয়েছে। সুতরাং এ বিষয়গুলো মেনে চলার জন্য ব্যাপক প্রচার ও উৎসাহ জোগানো বিশেষ জরুরি।
(খ) ব্যাগ, মালসামানা নিয়ে এই জন¯্রােতে শামিল না হওয়ার জন্য উৎসাহ জোগানোর এমনকি প্রয়োজনে বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত।
(গ) সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে রাস্তায় ধাবমান যানবাহনগুলো যেমনি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে তেমনি মিনার সুড়ঙ্গসদৃশ পথটিতে ২০-২৫ লাখ মানুষের একক মিছিলটিকে খ- খ- মিছিলে পরিণত করে দেয়া যেতে পারে। কাজটি একেবারেই সহজ অথচ ঝুঁকি মোকাবেলায় অনন্য। এ লক্ষ্যে প্রতি ৫/১০ মিনিট পর পর সুড়ঙ্গসদৃশ পথে প্রবেশ ১/২ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখা যেতে পারে। এতে একক মিছিলটি শতাধিক খ- মিছিলে পরিণত হবে। ফলে অনায়াসে হালকা ও ভীতিমুক্ত হয়ে যাবে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও কষ্ট নেমে আসবে প্রায় শূন্যের কোঠায়। প্রস্তাবটির বাস্তবতা সম্পর্কে একটি গাণিতিক পর্যবেক্ষণ দেয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ৫ মিনিট পর ১ মিনিট বিরতি দিয়ে জন¯্রােতটি নিয়ন্ত্রণ করা হলে প্রতি ৫+১=৬ মিনিটে মোটামুটি ২০ হাজার হাজী পথটি অতিক্রম করতে সক্ষম হবেন। তাতে ১২ ঘণ্টায় কম-বেশি ২৪ লাখ হাজী এই পথ অতিক্রমে সক্ষম হবেন। এই সংখ্যাটি নারী, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী ছাড়াই। আবার অনেকে ভিন্ন পথেও যাবেন। ফলে হাজীর সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হলেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি ক্ষমতাও বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
৮। পুরো পথটিতে অন্তত ১০০ মিটার অন্তর দুই পাশে আড়াআড়িভাবে পর্যবেক্ষণ চৌকি থাকা দরকার, যেখানে বিশুদ্ধ পানি, প্রাথমিক চিকিৎসা ও অগ্নিনির্বাপণের সামগ্রীসহ আশু প্রয়োজনীয় জিনিস মজুদ থাকবে।
৯। হাজীদের প্রতি সৌদি কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ নাগরিকগণের আচরণ সন্দেহাতীতভাবে সহানুভূতিপরায়ণ ও মানবিক। আতিথেয়তার বিষয়ে আরবদের অতীত ঐতিহ্য আজও যে অটুট তা হজের এই বিশাল আয়োজনের মধ্যেও উপলব্ধি করা যায়। তারপরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আরও সচেতনতার দাবি রাখে। হজের মৌসুম বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের একটি বড় উৎস অবশ্যই। বৈধ ও মানবিক বিবেচনার মধ্যে তা হোক এতে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুযোগসন্ধানী অতি লোভীরা হাজীদের থেকে গলাকাটা লাভ আদায়ে তৎপর থাকেন। আর এটি ঘটে সেলুন থেকে পরিবহন সব ক্ষেত্রেই। সরকার এক্ষেত্রে ন্যায্যমূল্য নির্দিষ্ট করে দিতে পারে এবং যা টাঙিয়ে রাখা বাধ্যতামূলকও করতে পারে। বিশেষ করে বাড়ি ভাড়া ও পরিবহন ক্ষেত্রটি। দূরত্ব ও ভাড়া সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ৫/১০ গুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মানসিকতাও দেখা যায় অনেকের মধ্যে। অতিরিক্ত আয়ের সুবাদে হাজীদের সাশ্রয়ী মূল্যে সেবাদানই যেখানে কাম্য হওয়া উচিত সেখানে বিপরীতমুখী বাস্তবতা কষ্টদায়ক। সৌদি কর্তৃপক্ষের সুনাম ও ঐতিহ্যের স্বার্থেই এই বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়া আবশ্যক।
১০। দীর্ঘমেয়াদি ও নিরাপদ ব্যবস্থা হিসেবে জামরা অভিমুখী রাস্তাটিকে বহুতলবিশিষ্ট একটি ফ্লাইওভারে রূপান্তর করা যেতে পারে।
সর্বোপরি আল্লাহর ইচ্ছায় হজের অনুষ্ঠানগুলো আরো প্রাণবন্ত, নিরাপদ ও সহজ হোকÑএটাই প্রত্যাশা।
 লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন