ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
ফাজিল অনার্স কোর্সের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত স্টাফিং প্যাটার্নে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা
মাদরাসার ফাজিল শ্রেণীতে অনার্স কোর্স হবে এটা কেউ কল্পনাও করেনি। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা ও বদন্যতায় তা সম্ভব হয়েছে। পাঁচটি বিষয় (আল হাদিস, আল কোরআন, আদ্ দাওয়া, আরবি সাহিত্য, ইসলামের ইতিহাস) অনার্স কোর্সে মূল বিষয়ের ৩০০০ নম্বর ছাড়াও আনুষঙ্গিক বিষয় (বাংলা, ইংরেজি, ইসলামের ইতিহাস, ইসলাম পরিচিতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন, পরিবেশ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও বাংলাদেশ স্টাডিজ)সহ মোট ৪৩০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার কোর্স চলছে। বর্তমান ২০১৬ সাল থেকে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোর্স পরিচালিত হবে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২০ জন অধ্যাপক থাকলেও মাদরাসার জন্য একজন শিক্ষকও বরাদ্দ নেই। এ ছাড়া যে কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে, সমগ্র বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত স্টাফিং প্যাটার্ন না হলে মানসম্মত শিক্ষা হয় না। দুর্ভাগ্যবশত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফিং প্যাটার্ন মন্ত্রণালয়ে পেশ করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। তাই মানসম্মত শিক্ষার স্বার্থে সরকারের এ অবদানকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পেশকৃত প্যাটার্ন মঞ্জুর করা আবশ্যকীয়।
মাদরাসায় কলেজের সমসংখ্যক এমএলএসএস নিয়োগ করা
জমিয়ত শুকরিয়া সমাবেশে যেসব দাবি করেছে সবই যৌক্তিক। ¯œাতক পাস কলেজের দুটি শ্রেণীর জন্য এমএলএসএস (গার্ড/মালী/ঝাড়–দার) ৯ জন এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ইবতেদায়ী, দাখিল, আলিম, ফাজিল সাধারণ, ফাজিল অনার্স, কামিল পর্যন্ত মাত্র চারজন এমএলএসএস বরাদ্দ করা হয়েছে। বাস্তবে একটি ফাজিল মাদরাসার জন্য কমপক্ষে ৯ জন, ফাজিল অনার্সের জন্য কমপক্ষে ১১ জন ও কামিল মাদরাসার জন্য কমপক্ষে ১৩ জন এমএলএসএস প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্টাফের অভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
মঞ্জুরিপ্রাপ্ত নয় এমপিওভুক্ত মাদরাসাসমূহ এমপিওভুক্ত করা
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা, উচ্চতর শিক্ষার প্রতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগ্রহী করে তোলার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। সব আইনকানুন যাচাই করে মাদরাসা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মঞ্জুরি দেয়ার পরও বছরের পর বছর এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকগণ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শিক্ষা উন্নয়নের স্বার্থে বাঞ্ছিত মানে উন্নত প্রতিষ্ঠনসমূহকে এমপিওভুক্ত করা প্রয়োজন।
দাখিল ও আলিম পর্যায়ের সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদকে এমপিওভুক্ত করা
দাখিল ও আলিম মাদরাসায় একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদ এমপিওভুক্ত করা অতীব প্রয়োজন। কিতাবসমূহ আরবি, ফার্সি, উর্দু, ইংরেজি রেফারেন্স গ্রন্থ, পাঠ্যবই ও উপ-আনুষ্ঠানিক প্রয়োজনীয় গ্রন্থ সংরক্ষণের জন্য কমপক্ষে ফাজিল/কামিল পাস লাইব্রেরিয়ান প্রয়োজন। তবে বর্তমান নীতিমালা পরিবর্তন করে যোগ্যতার ক্ষেত্রে ¯œাতকের ক্ষেত্রে ফাজিল ¯œাতক সংযোজন করতে হবে।
সরকারি শিক্ষকদের ন্যায় বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করা
অভিজ্ঞ শিক্ষকের মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণের বয়স সীমা ৬৫ বছর করা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ যে কোর্স কারিকুলামের ভিত্তিতে পাঠদান করেন মাদরাসার ফাজিল ও কামিলের শিক্ষকগণও একই কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠদান করেন। অতএব যৌক্তিকভাবেই বেসরকারি শিক্ষকদের বয়সসীমা ৬৫ বছর করা যুক্তিযুক্ত।
শুকরিয়া সমাবেশের ঘোষণা
এ সমাবেশ মাদরাসার সব স্তরে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে নিজেদের অঙ্গীকার ঘোষণা করছে। জমিয়তের এ ঘোষণা অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। সরকার শিক্ষকদের স্কেল দেবে আর শিক্ষকগণ দায়িত্ব অবহেলা করবে এটা মোটেই সমীচীন নয়। তাই জমিয়ত চায় শিক্ষকগণ যোগ্যতা অর্জন করে আদর্শ দেশপ্রেমিক যোগ্য ওয়ারিশে নবী তৈরিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।
এ সমাবেশ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজেদের প্রত্যয় ঘোষণা করছে
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সমগ্র মানবতার অন্যতম সংকট। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে জমিয়ত শুরু থেকে অবস্থান নিয়েছে। জমিয়ত সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন ও বিপ্লবী মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি রূহুল আমীন খানসহ জমিয়তের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের বলিষ্ঠ ভূমিকায় জমিয়তের আওতাভুক্ত মাদরাসাসমূহে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসমুক্ত রয়েছে। জমিয়তভুক্ত গোটা শিক্ষাব্যবস্থার শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীগণের মধ্যে একজনকেও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত পাওয়া যায়নি। জমিয়ত জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অতীব জরুরি। জমিয়তের সঙ্গে সম্পৃক্ত পীর-মাশায়েখ, ইমাম, খতিব, কাজী, ওয়ায়েজ, লেখক, গবেষক সবাই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
এ সমাবেশ কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছে
৯২ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সম্প্রীতি সমগ্র বিশ্বের জন্য উদাহরণ হয়ে আছে। উগ্রবাদ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের স্থান ইসলামে নেই। মুসলমানের ঈমান, আকিদা হলো ইসলাম জীবনের সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। দিতে পারে সমৃদ্ধি, শান্তি ও প্রগতি। কোরআন-সুন্নাহর বিরোধী কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলে এদেশ অতি অল্প সময়ে সমৃদ্ধি লাভ করবে। ইসলামের সোনালি যুগে ১৯ দিন পর্যন্ত ঢোল পিটিয়ে বাইতুল মাল থেকে সদকা, যাকাত, ফেতরা গ্রহণ করার মতো কোনো লোক পাওয়া যায়নি। পরে হযরত ওমর বিন আবদুল আজিজ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিলামে বিদেশিদের কাছে এসব মাল বিক্রি করেছেন। কোরআন, সুন্নাহ মদ হারাম করেছে, কালোবাজারি, মুনাফাখোরি, সুদ, ঘুষ, মজুদদারি, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতিকে হারাম করেছেন। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের অশান্তি, দরিদ্রতা, স্বৈরাচারী, কার্যক্রম সবকিছুর সমাধান ইসলামে রয়েছে। তাই ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থেই জমিয়তের দাবি যুক্তিযুক্ত।
এক কথায় লাখ শহীদের রক্তে গড়া স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা একজন মুসলমান হিসেবে ঈমান আকিদা ঠিক রেখে নবী-ওলীদের প্রদর্শিত পথে গোটা জাতিকে দিকনির্দেশনা দেয়ার মহান ব্রত নিয়ে জমিয়ত এগিয়ে চলছে এবং চলতেই থাকবে ইনশা আল্লাহ। (সমাপ্ত)
লেখক : যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন