শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে মন্ত্রিসভায় ক্ষোভ

| প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রায়ের বিষয়ে জনমত গড়ে তুলুন -মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী 

আপত্তিকর শব্দগুলো বাদ দেয়ার দাবি জানানো হবে
পঞ্চায়েত হাবিব : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে ব্যবহার করা কয়েকটি শব্দ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। আর এসব শব্দ এক্সপাঞ্জ (বিলোপ বা বাতিল) করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে সংক্ষুব্ধ সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রায়ের বিষয় জনগণকে জানানোর জন্য মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রায় তো ওনারা দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আপনাদের হাতে এসেছে। এখন আপনারা রায়ের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ নিয়ে কথা বলুন। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলুন। জনগণ যেন বুঝতে পারে, ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায়ে তারা কী মন্তব্য করেছেন। রায়ের কোথাও কোথাও সরকার এবং জনগণ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে। কাজেই আপনারা যেখানেই সুযোগ পাবেন, সেখানে এসব বিষয় জনগণকে জানাবেন। কারণ, আমরা জনগণের প্রতিনিধি। জনগণের এসব বিষয় জানার অধিকার আছে। এদিকে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়ে আগামী ১০ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। প্রায় দুই ঘণ্টা মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত ৪০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রায়টির বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।
সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিয়মিত আলোচনা হয়। আলোচনার একপর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। এরপর বেলা আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠকে উপস্থিত ৪০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রায়টির খুঁটিনাটি বিষয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। মন্ত্রিসভার আলোচনা শেষে রায়ের ভেতরের অসঙ্গতি ও আপত্তিকর শব্দগুলো বাদ দেয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার বিষয়ে একমত হন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। অবশ্য বৈঠকে অংশ নেয়া মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানান, বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সবার সামনে তুলে ধরেন। এরপর তিনি মন্ত্রিসভাকে জানান, রায়টিতে অনেক আপত্তিকর শব্দ রয়েছে। এ সময় একজন সিনিয়র সদস্য আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, আপত্তিকর শব্দগুলোর মধ্যে কী কী রয়েছে? জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, এখানে সংসদ সংসদের ইমম্যাচিউরড (অপরিপক্ক), জনগণের প্রতিনিধিত্বহীন এবং প্রশ্নবিদ্ধ বলা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় এক পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে সংসদ সম্পর্কে লেখা এসব শব্দ বাদ দিতে সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেন মন্ত্রিসভার।
প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রায়ের আপত্তিকর বিষয়গুলো জনগণের জানার অধিকার আছে, তাই এগুলো জনগণকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। রায়ের বিষয়ে জনগণকে অবহিত করতে আগামী দু-একদিনের মধ্যেই আইনমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করবেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানান, মন্ত্রীদের সবার বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রায়ের বিষয়টি অনুধাবন করে জনগণ যেন বিভ্রান্ত না হয়, তা বোঝাতে মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন। মুজিবুল হক চুন্নু প্রশ্ন রেখে বলেন, যদি সংসদ ইমম্যাচিউরড হয়, প্রশ্নবিদ্ধ হয়, জনগণের প্রতিনিধিত্ব না করে থাকে, তাহলে এই সংসদ যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছে, সেই প্রেসিডেন্টও ইমম্যাচিউরড, তিনিও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছেন না। আর যে প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি কী? তিনিও ইমম্যাচিউরড ও প্রশ্নবিদ্ধ হবেন না কেন? মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমি প্রশ্ন করেছি। আমি রায় দেখেছি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে সংসদকে ইমম্যাচিউরড ও প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়া হয়, যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল। পরে ২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। একই বছর ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। চলতি বছরের গত ৩ জুলাই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। আর গত ৩ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে।
আপত্তিকর শব্দ প্রত্যাহারে আবেদন করবেন আইনমন্ত্রী ঃ এদিকে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়ে আগামী ১০ আগস্ট সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। গতকাল সোমবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার দিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, এমপি মহোদয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। মন্ত্রী জানিয়েছিলেন পূর্ণাঙ্গ রায়টি পড়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন। তিনি আগামী ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে সরকারের অবস্থান তুলে ধরবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
তানিয়া ৮ আগস্ট, ২০১৭, ২:৪৬ এএম says : 3
এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট
Total Reply(1)
Nesar ৮ আগস্ট, ২০১৭, ১১:২৬ এএম says : 4
The Man of Principle
Salim Raza ৮ আগস্ট, ২০১৭, ১১:১৩ এএম says : 0
লাভ নাই।
Total Reply(0)
মেহেদী হাসান ৮ আগস্ট, ২০১৭, ৩:২৪ পিএম says : 0
কিছু বিষয় জনগনের নিকট ছেড়ে দিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন