শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ের রিভিউ করবে আওয়ামী লীগ

রায়ের পর্যবেক্ষণ অপ্রাসঙ্গিক, অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত

| প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে উচ্চ আদালত কিছু অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির মতে, আদালতের এ ধরনের পর্যবেক্ষণ অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত ও অপ্রাসঙ্গিক। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেয়া রায়ের রিভিউ কথা আওয়ামী লীগ ভাবছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু।
গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়। দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু এ প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মতিন খসরু বলেন, তারা দলীয়ভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। এজন্য একটি টিমও গঠন করা হয়েছে। তবে পুরো রায়ের পর্যালোচনা নাকি অনাকাঙ্খিত পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হবে, সেই বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
খসরু বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে কখনো বিতর্ক চলে না, রাজনীতিও চলে না। ইদানিং আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের প্রতিপক্ষরা রায় নিয়ে অপব্যাখ্যা দিচ্ছে। এটা দূর্ভাগ্যজনক। তারা উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা এটা করছে।
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। আমরা রায় নিয়ে দলগতভাবে পর্যালোচনা করছি, পর্যবেক্ষন করছি। দলীয়ভাবে আমরা পরে সিদ্ধান্ত নেব এই রায়ের রিভিউ করবো কি না।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল প্রসঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন সা¤প্রতিক বক্তব্যের জবাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, আদালতের অনাকাঙ্খিত পর্যবেক্ষণের সুযোগ নিয়ে এবং রায়ের বিকৃত ব্যাখা দিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিচার বিভাগকে দলমতের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুল মতিন খসরু বলেন, আপিল বিভাগের রায় নিয়ে কখনও বিতর্ক এবং রাজনীতি চলে না। রায় নিয়ে আমরা রাজনীতি করতে চাই না, কিন্তু বিএনপি রাজনীতি করছে। তাদের কোনও রাজনৈতিক ইস্যু নেই বলে এটাকে ইস্যু বানানো হচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির কতিপয় নেতারা এ রায় বিকৃত করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন। রায়ের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তারা রাজনীতি করতে চায়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের সমালোচনা করে খসরু বলেন, বিএনপির ফখরুল ইসলাম, মওদুদ সাহেবসহ কয়েকজন ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তারা বলছেন, সরকারে মুহুর্ত ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। তার(মওদুদ) মত সিনিয়র আইনজীবীর কাছ থেকে আমরা এই রকম বক্তব্য আশা করি না। এছাড়া ফখরুল সাহেবের মত একজন দায়িত্ববান লোক এই রকম বক্তব্য রাখতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে। কারণ তারা কোন আন্দোলনে নাই। তাই সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে তারা রাজনীতি করছেন।
আইনসভা ও বিচার বিভাগ মুখোমুখি অবস্থানে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আছে-একটা বিচার বিভাগ, একটা নির্বাহী বিভাগ এবং অন্যটি আইনসভা। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের সম্পর্কই সহায়কমূলক, পরিপূরক। আইনসভার কাজ আইন প্রনয়ন করা। এ আইন প্রনয়ন করার ক্ষমতা বিচার বিভাগের নেই। বিচার বিভাগের দায়িত্ব ন্যায় বিচার করা। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে কতগুলো পর্যবেক্ষণ আছে, যেগুলো আমাদের কাছে আপত্তিজনক।
এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ষোড়শ সংধোনীর কয়েকটি পর্যবক্ষেণ আপত্তিকর। রায়ের সঙ্গে এসবের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। তবে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। কিন্তু বিএনপি ভিন্ন উদ্দেশে আমাদেরকে সুপ্রিম কোর্টের প্রতিপক্ষ বানাতে চাচ্ছে।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যকে ব্যক্তিগত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় আইন সম্পাদক স ম রেজাউল করিম বলেন, রায়ের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার করে রাজনীতির মাঠকে উত্তপ্ত করছে বিএনপি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট যে বিষয়গুলো বলেনি ওগুলো নিয়ে তারা কথা বলছে। রায় বিকৃতির মাধ্যমে তারা আদালত অবমাননা করছে।
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সেল গঠন করা হয়েছে। রায়ের পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব রিভিউ করবো কিনা।
তিনি বলেন, একজন ব্যক্তিকে ঘিরে স্বাধীনতার নেতৃত্ব নিয়ে যে প্রসঙ্গটি রায়ে উঠে এসেছে সেটি অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত। একজন রাজাকারও বলবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। অনভিপ্রেত কথা কোনভাবে কাম্য ছিল না। এটাকে ভর করে রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে বিএনপি
রেজাউল করিম আরও বলেন, বিএনপি বলেছে এ সরকার বেআইনী। আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই ওপেন ডিবেটে আসুন। আদালত কোন জায়গায়, কোন বিধানে বলেছে সরকার বেআইনি। আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম তারা এর উত্তর দিতে পারবে না।
বিএনপিকে রায়ের অপব্যাখ্যার দায়ে আদালতে ডাকা উচিত দাবি করে তিনি বলেন, আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যার কারণে তাদেরকে আদালতে ডাকা উচিত। জিজ্ঞাসা করা উচিত কেন রায়ের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মিলন ১০ আগস্ট, ২০১৭, ৪:০৭ এএম says : 0
কোন লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
Total Reply(0)
S. Anwar ১০ আগস্ট, ২০১৭, ৭:০৬ এএম says : 0
অথৈ পানিতে সাঁতার না জানা কোন ডুবমান ব্যক্তি তার শেষ রক্ষা হবেনা জেনেও হাতের কাছে খড়কুটা যা পায় তাই আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। তবুও তার শেষ রক্ষা হয় না। আওয়ামী লীগেরও এখন সেই বেহাল দশা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন