শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

লিখিত সংবিধানে পরিচালিত গণতান্ত্রিক দেশে সংবিধানই পরম ও সার্বভৌম

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়-৯

| প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ষোড়শ সংশোধনীতে প্রদত্ত বিচারকদের অপসারণের বিধানে বিচারকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত অনুষ্ঠানের কোন বিধান রাখা হয় নি। (এই অনিয়ম রোধ করতে) সংবিধানে একটি গণতান্ত্রিক ধারা সংযোজন করা প্রয়োজন।
যাতে বলা থাকবে, একজন সর্বোচ্চ সিনিয়র বিচারক অভিযোগের তদন্ত করবেন। তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মত কিংবা সুপ্রিম জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি কিংবা স্বাধীন ট্রাইবুনাল হিসেবে এর নামকরণ করা যেতে পারে। হ্যামিল্টনের উদ্ধৃতিটি পূরাবৃত্তি হয়ে যেতে পারে। (তবে অপ্রাসঙ্গিক হবেনা।) তিনি বলেন, আজ লাভবান হলেও কেউই নিশ্চয়তা দিতে পারেন না যে, ন্যয় বিচারের চেতনায় তিনি ভিকটিম হবেন না। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য বিনষ্টকারী যেকোন বিষয় তথ্যবলে আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর প্রয়োজনীয় উপাদান ধ্বংস করে দিতে পারে।
রাষ্ট্রের সব অঙ্গই সংবিধান থেকে তাদের কর্তৃত্ব, এখতিয়ার ও ক্ষমতা পায়। এই আদালতও রাষ্ট্রের এমন একটি অঙ্গ যেটি বিচার বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। লিখিত সংবিধানে পরিচালিত একটি গণতান্ত্রিক দেশে সংবিধানই পরম ও সার্বভৌম। লিখিত সংবিধানে সৃষ্ট আইনসভাকে সংবিধানে বর্ণিত ক্ষমতার আওতায় এবং সংবিধানে দেয়া সীমা রেখা সাপেক্ষে কাজ করতে হবে। সন্দেহ নেই যে সংবিধান সংসদ কর্তৃক সংশোধিত হতে পারে। তবে তা সম্ভব হয়েছে সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের কারণে। কেবলমাত্র এই অনুচ্ছেদে নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদে দেয়া সীমা রেখা অনুযায়ী বৈধভাবে সংবিধানের সংশোধনী আনা যাবে। কেননা ৭(খ)অনুচ্ছেদ শুরু হয়েছে non-obstante clause দিয়ে।
১৪২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেঃ
[ ১৪২। এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্তে¡ও-(ক) সংসদের আইন-দ্বারা এই সংবিধানের কোন বিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণের দ্বারা সংশোধিত হইতে পারিবে। তবে শর্ত থাকে যে,
(অ) অনুরূপ সংশোধনীর জন্য আনীত কোন বিলের সম্পূর্ন শিরোনামায় এই সংবিধানের কোন বিধান সংশোধন করা হইবে বলিয়া স্পষ্টরুপে উল্লেখ না থাকিলে বিলটি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা যাইবে না;
(আ) সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত না হইলে অনুরূপ কোন বিলে সম্মতিদানের জন্য তাহা রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হইবে না;
(খ) উপরি-উক্ত উপায়ে কোন বিল গৃহীত হইবার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট তাহা উপস্থাপিত হইলে উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিবেন, এবং তিনি তাহা করিতে অসমর্থ হইলে উক্ত মেয়াদের অবসানে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।]
এবং ৭খ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেঃ
[৭খ।সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।]
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানও সমালোচনার উর্ধে নয়। ড. সরকার আলি আক্কাসের লেখা Independence and Accountability of Judiciary - A Critical Review বইয়ে এ বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যাবলী সম্পর্কে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় বেশ কয়েকটি বড় ধরণের ত্রুটি রয়েছে। প্রথমতঃ রাষ্ট্রপতি একজন বিচারকের ক্ষমতা ও আচরণের ব্যাপারে তদন্ত অনুষ্ঠানের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল (এসজেসি)-কে নির্দেশ দিয়ে শাস্তিমূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নিতে পারেন। সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের আওতায় রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে কাজ করতে বাধ্য। [এ অনচ্ছেদে বলা হয়েছেঃ এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্টপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করিয়াছেন কি না এবং করিয়া থাকিলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।]
ফলে সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারকের বিরদ্ধে শাস্তিমূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ নির্বাহীর ওপর নির্ভর করে। সুতরাং বিচারকদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্বাহীর রাজনৈতিক ইচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দ্বিতীয় ত্রুটিটি হচ্ছে, একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কোন সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই। বর্তমান পদ্ধতিতে কোন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার প্রক্রিয়া সুগম নয় এবং একে অনুপযোগী বলা যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি এসজেসি’র কাছ থেকে কিংবা ‘অন্য কোন সূত্র থেকে’ কোন বিচারকের বিরুদ্ধে অসামর্থ্যতা কিংবা অসদাচরণ সম্পর্কে তথ্য পেতে পারেন। ‘অন্য কোন সূত্র থেকে’ এই শব্দ বিন্যাস দ্বারা এটা স্পষ্ট নয় যে বাচরকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কছে কি ধরণের সূত্র গহণযোগ্য হবে কিংবা প্রবেশাধিকার প্রবেশাধিকার পাবে। অভিযোগ করার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির অনুপস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকের পক্ষে কোন বিচারকের অসামাথ্যতা কিংব অসদাচরণের বিষয় রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা সম্ভব নাও হতে পারে। এটি কেবলমাত্র নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে সুসম্পর্কিত ব্যক্তিদের পক্ষে সম্ভব হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন