রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা যেন মরণ ফাঁদ। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে মাসের পর মাস ধরে চলছে ড্রেন নির্মাণের কাজ। তাতে দক্ষিণ দিকের সরু রাস্তাটি আরও সরু হয়ে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গাচোরা ওই রাস্তাটিই এখন রাজধানীতে প্রবেশের একমাত্র পথ। এই রাস্তার কারণে যানজট এখন ফ্লাইওভার ছাড়িয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে রায়েরবাগ পর্যন্ত দীর্ঘ হচ্ছে। আসন্ন ঈদে এই রাস্তার কারণে ঘরমুখি যাত্রীদের ভোগান্তি কয়েক গুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভুক্তভোগিরা জানান, মাসের পর মাস সময় নিয়ে এই ড্রেন নির্মাণের কাজ করায় বর্ষা মৌসুমে এ অবস্থার সুাষ্ট হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু বলেন, এই অংশের ঠিকাদার দুর্বল। তার যে জনবল তা কাজের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। সে কারণে মাসের পর মাস কেটে গেলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এ কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী থেকে শুরু হয়েছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। এর দু’পাশে রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়নি। ফ্লাইওভারের উত্তরে সড়ক ও জনপদের জায়গা থাকায় সেখানে রাস্তাটি কিছুটা বাড়ানো গেছে। কিন্তু উত্তরে যানবাহন চলাচলের জন্য জায়গাই রাখা হয়নি। মাত্র ১৫/২০ ফুট রাস্তার এক পাশে আবার ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে রাস্তাটি এখন এতোটাই সরু হয়েছে যে একটার বেশি গাড়ি ওই রাস্তায় চলার মতো অবস্থা নেই। একটা একটা করে গাড়ি চলতে গিয়ে পেছনে যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে যে সব গাড়ি ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে চায় সেগুলোও বাধার সম্মুখিন হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী এলাকার ভুক্তভোগি বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় এলাকার বাসিন্দারা জানতেই সে সময়কার রাস্তার উপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এর পরেওই দুপাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আলম হোসেন বলেন, সেভাবেই ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও এর পূর্ব দিকের মাথায় টোলঘরের আগে থেকে ইচ্ছেমতো জায়গা নেয়া হয়েছে। দুটি টোলঘরের জন্য ফ্লাইওভারের প্রায় চারগুণ জায়গা নিয়ে দুপাশে যানবাহন চলাচলের মতো পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়নি। এতে করে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে চলতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। তাতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রাবাড়ী আড়তের ব্যবসায়ী খলিল বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেন মহাসড়ক এসে মিলেছে কুতুবখালীতে। ফ্লাইওভার বাদ দিলে দক্ষিণ দিক দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের জন্য রাস্তাটির প্রস্থ মাত্র ১৪ ফুট। এই ১৪ ফুট রাস্তাটিই রাজধানীতে প্রবেশের একমাত্র পথ। এটা কিভাবে হলো? সরকার কেনো এদিকে নজর দিলো না-তা আমাদের বোধগম্য নয়। একটা ফ্লাইওভারের জন্য রাজধানীতে প্রবেশের পথ থাকবে না এটা কি মানা যায়?
গতকাল সরেজমিনে কুতুবখালী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কুতুবখালীর দিকে রাস্তার দক্ষিণে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এজন্য রাস্তাটির কিছু অংশ খুঁড়ে মাটি ফেলা হয়েছে রাস্তার উপরেই। একে করে সরু ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলতে গিয়ে বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। এর জের হিসাবে পেছনে শত শত গাড়ি দাঁড়িয়ে যচ্ছে। এতে রাতদিন ভয়াবহ যানজটে আটকে থাকছে শত শত গাড়ি। সকালের পর থেকে এই যানজট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে রায়েরবাগ পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বাস চালক আব্দুল মজিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে যে সময়ে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত আসা যায়, কাঁচপুর থেকে সায়েদাবাদ যেতে এখন এই সময় লাগে। তিনি বলেন, ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করে বেশি জায়গা নিয়ে সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তায় জায়গা রাখেনি। এটা তাদের ব্যবসার কৌশল। কিন্তু সরকার কেনো সেই ফাঁদে পা দিলো সেটাই আমাদের প্রশ্ন? তিনি বলেন, ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে আরও ৮ মাস আগে। এটা করতে বড়জোড় দুই মাস সময় লাগার কথা। কিন্তু এতোদিনেও কেনো হচ্ছে না।
জানতে চাইলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু বলেন, শুরু থেকেই এই কাজের গতি ছিল না। আমরা মেয়র সাহেবকে বলেছি। গত ঈদুল ফিতরেও মেয়র সাঈদ খোকন কয়েকবার এই এলাকায় পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার তাগিদও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও ঠিকাদার কাজে গতি আনতে পারছে না।
ফ্লাইওভারের উত্তর দিকের রাস্তার কাজ এখনও চলছে। এই রাস্তাটিও রাজধানী থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তা। অথচ এই রাস্তার কাজও শুরু হয়েছে ৮ মাস আগে। গত ঈদুল ফিতরে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে একটা বাস বের হয়ে এই রাস্তাটি পেরিয়ে ৮ লেন মহাসড়কে উঠতে সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি। ঘরমুখি যাত্রীদের ভোগান্তির বড় কারণ ছিল ফ্লাইওভারের উত্তর দিক ঘেঁষে এই রাস্তাটি। ভুক্তভোগিদের মতে, শুধু যাত্রী নয়, ফ্লাইওভারের দুদিকের রাস্তার বেহাল দশা এই এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দার ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হবে। তবে অনেকের মতে, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ যদি মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ঠিকাদারকে কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতো তাহলে আর এমন পরিস্থিতি হতো না। এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন