শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উত্তরে সবজি চাষেও বিপ্লব

মাঠে চলছে বিরামহীন চাষাবাদ

মহসিন রাজু, বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উপর্যুপরি ৩য় দফার বন্যার পরে প্লাবিত ফসলের জমি থেকে পানি নেমে যাবার সাথে সাথেই সচল হয়েছে উত্তরের কৃষি ক্ষেত্র। বড়, মাঝারি, প্রান্তিক, বর্গা ও ক্ষুদ্র চাষীরা নেমে পড়েছে মাঠে। কেউ কোথাও বসে নেই। সর্বত্রই শুধু কাজ আর কাজ। বগুড়া থেকে থেকে সোজা উত্তরে পঞ্চগড় এবং পশ্চিমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত সর্বত্রই ফসলের মাঠে শুধু সবুজের সমারোহ। কৃষি বিভাগের মতে মধ্য আশ্বিন পর্যন্ত নদী তীরবর্তি এলাকাগুলোতে জেগে ওঠা চরে গাইঞ্জা জাতের আমন সহ বিভিন্ন নাবি (বিলম্বিত) জাতের ধানের চারা রোপন করলেও স্বাভাবিক ফলন পাওয়া যাবে। তাদের প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তমতে দেখা যাচ্ছে আমনের চাষের জন্য যে টার্গেট নিয়েছিল কৃষি বিভাগ তার লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের প্রায় কাছাকছি পৌঁছে গেছে।
অপরদিকে আমনের পাশাপাশি উত্তরে এখন চলছে শীতকালীন সবজির চাষ। শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোর পাশাপাশি বেগুন, মরিচ ইত্যাদির চারা উৎপাদনের প্রক্রিয়াও চলছে জোড়েশোরে। শীতকালীন সবজির চারা এখন আর বিচ্ছিন্ন ভাবে নয়। আম, জাম, লিচু সহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ চারার উৎপাদক নার্সারির মতো সবজির চারাও এখন নার্সারিতেই উৎপাদিত হচ্ছে ।
সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বগুড়া সদরের মহাস্থান গড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু নার্সারি। এই নার্সারিগুলোতে এখন বছরে কোটি কোটি টাকার সবজির চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত এই সবজির চারা বগুড়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলাতো বটেই এমনকি দেশের অন্যান্য অন্যান্য অঞ্চলেও চলে যাচ্ছে নিয়মিত ভাবে।
সম্প্রতি বগুড়া সদরের মহাস্থান গড় এলাকায় গিয়ে ফলদ ও বনজ গাছের পাশাপাশি সবজির চারা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর নার্সারিতে গিয়ে দেখা গেল নিবিষ্ট মনে শীতকালীন সবজির চারা তৈরীর জন্য ‘বেড’ প্রস্তত করছে একদল শ্রমিক। শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে পাওয়া গেল প্রতিষ্ঠানের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেনকেই। নিজের নার্সারিতে শ্রমিকদের সাথে কর্মরত জাহাঙ্গীর হোসেন বিভিন্ন প্রশ্নের জানালেন, চলমান মওসুমে তার টার্গেট মরিচ, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটো মিলিয়ে ৫০ লাখ চারা উৎপাদন করবেন। টার্গেট পূরণ হলে টাকার অঙ্কে তার ব্যবসার পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার। ইতোমধ্যে তিনি কমবেশি ৬০ লাখ টাকার সবজির চারা বগুড়ার পাশ্ববর্র্তী, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও গাইবান্ধার সবজি চাষীদের কাছে বিক্রি করেছেন। প্রতিদিনই বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সবজি চাষীরা চারা বুকিং দিচ্ছে। ৪ বিঘা জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত এই নার্সারির মালিক জাহাঙ্গীর জানালেন, তিনি একজন মাঝারি মানের নার্সারি মালিক। তার চেয়েও ১০/ ১৫ জন বড় এবং অসংখ্য প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র নার্সারির মালিক বগুড়ায় আছেন। অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বললেন, বগুড়ার মহাস্থান গড় এলাকার ২৫/৩০টি ক্ষুদ্র, প্রান্তিক, মাঝারি ও বড় নার্সারি মালিক এবার কম পক্ষে ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার সবজির চারা পাইকারি দরে বিক্রি করবেন।
এদিকে বগুড়ার সোনাতলা, গাবতলী, সারিয়াকান্দি এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, মাঠে মাঠে আমনের পাশাপাশি সবজি চাষের প্রস্ততি। বন্যার পরে পলিমিশ্রিত নরম জমিতে এবার তুলনামুলক কম সার ব্যবহার করেই বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশা করছেন আমন ও সবজি চাষীরা ।
এদিকে ইতোমধ্যে সবজি বাজারে আগাম জাতের পাতাকপি, ফুলকপি, মুলাসহ বেগুন ও শিমের আগমন ঘটেছে। কয়েকটি সবজির পাইকারি বাজারে এবং রংপুর ভায়া বগুড়া ঢাকা মহাসড়কের পাশের মোকামতলা ও চন্ডিহারা সড়কের হাটের আড়তগুলোতে দেখা গেছে, পেঁপে মুলা, লাউ, শসা, কুমড়োর বিশাল বিশাল স্তুপ। সবজির বাজারে সবচে সস্তা এখন আলু ও পেঁপে। আলু ও পেঁপের নিম্ন মুল্যের কারণে এবার সবজির বাজার এখনও অনেকেটাই গরীব ও মধ্যবিত্ত¡ শ্রেনীর ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই আছে। এতে এই শ্রেনীর মানুষেরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন