শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বড় জয়ে সিলেটের যাত্রা

লজ্জার হারে শুরু চ্যাম্পিয়ন ঢাকার

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

লড়াইটা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বনাম স্বাগতিকদের। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেটের উদ্বোধোনী ম্যাচে ঘরের দর্শকদের উচ্ছ¡াসে উজ্জীবিত সিলেট সিক্সার্স হারিয়ে দিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটসকে! স্বাগতিকদের জয়টিও বিশাল, ৯ উইকেটের! গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সিলেটের বোলারদের সামনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি ঢাকার ব্যাটসম্যানরা। বিস্ফোরক সব ব্যাটসম্যানে ঠাসা সাকিব আল হাসানের দলটি নির্ধারিত ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে তোলে মাত্রও ১৩৬ রান! ১৩৭ রানের লক্ষ্য এমনিতেই যথেষ্ট ছিল না। আন্দ্রে ফ্লেচার ও উপল থারাঙ্গা মিলে সেটিকে বানিয়ে ফেলেন আরো ছোটো। যেটি ১৬.৫ ওভারে মাত্র এক উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় নাসির হোসেনের দল (১৩৭/১)। বিপিএল ভেন্যু হিসেবে সিলেটের যাত্রা শুরু হলো গ্যালারি ভরা দর্শকের সামনে ঘরের দলের দারুণ এক জয় দিয়ে।
টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারা। মাঠের বাইরে সবচেয়ে দাপুটে দল। ক্রিকেটীয় শক্তিও এবার অনেক বেড়েছে কাগজে-কলমে। দলে তারার মেলা। কাকে রেখে কাকে খেলানো হবে, সেই মধুর সমস্যায় শুরু থেকেই ছিলেন কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। অথচ সেই ঢাকার শুরুটাই হলো তিক্ত। ফেভারিটদের উড়িয়ে দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করল নতুন দল সিলেট। গ্যালাররি ১৮ হাজার দর্শকের সিংহভাগই ছিল স্বাগতিক শিবিরের দখলে। তবে ঢাকা ডায়নামাইটসকে সমর্থন করতে এক হাজার দর্শক গতকালই নিজ খরচে সিলেট নিয়ে গিয়েছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কর্মকর্তারা। তাতে খুব একটা উজ্জীবিত করা যায়নি সাকিবের দলকে।
২০১৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে ৬টি ম্যাচ এখানে খেলা হয়েছিল সিলেটে। সেই হিসেবে পরিসংখ্যান হাতে পেতেও খুব একটা বেগ পেতে হয়নি সিলেট অধিনায়ক নাসিরের। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র একটি জয়ের বীপরিতে ৫টি জয় পরে ব্যাট করা দলের। যে কারণে প্রথমে বল হাতে নেয়াটা যে যৌক্তিক তার প্রমাণও দিলেন অধিনায়ক। স্পিন দিয়ে বোলিংয়ের শুরুটাও করেন নিজেই। প্রথম ওভারে দলকে সাফল্যও এনে দেন নাসির। ওভারের শেষ বলটা উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মেহেদী মারুফ (০)। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়েছিলেন এভিন লুইস ও কুমার সাঙ্গাকারা। তবে রানের চাকা খুব গতিময় ছিল না। দুজনই আউট হয়েছেন সেই গতির খোঁজেই। লুইসকে (২৪ বলে ২৬) ফিরিয়ে এ জুটিও ভাঙেন নাসির। ¯øগ সুইপে তাকে বিশাল একটি ছক্কা মারার পরের বলে আরেকটি ছক্কায় চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন ক্যারবীয়ান ব্যাটিং দানব। ১০ রানের মধ্যে ফিরে যান সাঙ্গাকারাও। কয়েকটি ডট বলে চাপে পড়ে যাওয়া সাবেক এই লঙ্কান ওপেনার লিয়াম প্লাঙ্কেটকে তুলে মারতে গিয়ে ফেরেন মিড অফে ক্যাচ দিয়ে (২৮ বলে ৩২)।
ঢাকার ব্যাটিং লাইন আপে এরপরও কাইরন পোলার্ডের মত নাম ছিল। টিকে ছিলেন সাকিবও। কিন্তু আবুল হাসান রাজু ও প্লাঙ্কেটের দারুণ বোলিংয়ে ডানা মেলতে পারেননি কেউ। চোখের সমস্যা কাটিয়ে গত জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মোসাদ্দেক হোসেন ফিরেছেন রান আউটে। শেষ দিকে ক্যামেরন ডেলপোর্ট ১৩ বলে ২০ রান করে ঢাকার রান নিয়ে যান ১৩৬ পর্যন্ত। চার ওএবং পাঁচ নম্বর বোলার হিসেবে বল হাতে নিয়ে অসাধারণ বোলিং করেছেন রাজু ও প্লাঙ্কেট। দুজনের গতি বৈচিত্রে খাবি খেয়েছে ঢাকার ব্যাটসম্যানরা। ৪ ওভারে ২৪ রানে দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন আবুল হাসান, ২০ রানে দুটি প্লাঙ্কেট। তবে সেরা বোলার নি:সন্দেহে ছিলেন নাসির। নতুন বলে শুরু করে মাত্র ২১ রান দিয়ে ফেরান ঢাকার দুই ওপেনারকে।
ধুন্ধুমার টি-২০ ক্রিকেটের হিসেবে ছোট্ট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই মারমুখি ছিলেন সিলেটের দুই ওপেনার উপুল থারাঙ্গ ও আন্দ্রে ফ্লেচার। পাওয়ার প্লেতেই দুজন তুলে ফেলেন ৫১ রান। জুটি এগিয়ে যায় এরপরও। দারুণ ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ঢাকার বোলিংও ছিল ধারহীন। ২১ রানে থারাঙ্গাকে রান আউট করার সুযোগ ছাড়া আর কোনো সুযোগই আদায় করতে পারেনি ঢাকা। এক জুটিতেই যখন জয়ের কাছে সিলেট, ঢাকা পায় উইকেটের দেখা। ভাঙে ১২৫ রানের জুটি। আদিল রশিদকে ছক্কা মারার চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ হয়ে ফেরেন ফ্লেচার। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় এই ক্যারিবিয়ান করেছেন ৫১ বলে ৬৩। এরপর সিলেটের আইকন সাব্বির রহমানকে (২*) নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছুতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি থারাঙ্গার (৬৯*)। লঙ্কান ওপেনারের ৪৮ বলের অপরাজিত ইনিংসটি ৫টি চার ও ২ ছক্কায় সাজানো। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন থারাঙ্গা।
স ং ক্ষি প্ত স্কো র

ঢাকা ডায়নামাইটস : ২০ ওভারে ১৩৬/৭ (মারুফ ০, লুইস ২৬, সাঙ্গাকারা ৩২, মোসাদ্দেক ৬, সাকিব ২৩, পোলার্ড ১১, দেলপোর্ত ২০*, রশিদ ৩, আবু হায়দার ৭*; নাসির ২/২১, শুভাগত ০/২৭, সান্টোকি ০/৩৬, আবুল হাসান ২/২৪, প্লাঙ্কেট ২/২০, তাইজুল ০/৫)। সিলেট সিক্সার্স : ১৬.৫ ওভারে ১৩৭/১ (ফ্লেচার ৬৩, থারাঙ্গা ৬৯*, সাব্বির ; সাকিব ০/২৩, শহিদ ০/১৪, সাকলাইন ০/২৩, আবু হায়দার ০/২৭, রশিদ ১/৩১, ডেলপোর্ট ০/৭, পোলার্ড ০/১২)।
ফল : সিলেট সিক্সার্স ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : উপুল থারাঙ্গা (সিলেট সিক্সার্স)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন