শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

খুলনার ‘অবিশ্বাস্য’ আরিফুল

ইমামুল হাবীব বাপ্পি | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ৭:১২ পিএম

পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে খুলনা অধিনায়কের মুখের প্রথম শব্দটাই হলো- ‘অবিশ্বাস্য’। যে বিশেষণের একক দাবিদার তারই সতীর্থ আরিফুল হক। আরিফুলের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং বীরত্বেই তো রাজশাহী কিংসকে ২ উইকেটে হারিয়েছে খুলনা টাইটান্স।

শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য দরকার ৩৬ রান, হাতে মাত্র ২ উইকেট। হোসেন আলীর করা ১৮তম ওভারে ১৮ রান তুলে নেন আরিফুল। মোহাম্মাদ সামির করা পরের ওভারে ঠাণ্ডা মাথায় নেন ৯ রান। ডোয়াইন স্মিথের শেষ ওভারে বাকি ৯ রানের হিসাব মিলিয়ে নেন প্রথম দুই বলেই, একটি করে চার-ছক্কায়; প্রথমে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে, এরপর স্কুপ শটে মিডিল ও লেগ স্ট্যাম্প বরাবর আসা ফুলটস বলটি শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করে। আরিফুলের বুনো উদযাপনে যোগ দিতে ততক্ষণে বাউন্ডারি লাইন থেকে হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসেন সতীর্থরা। গোমড়া হয়ে থাকা টাইটান্স কর্ণধার কাজী নাবিল আহমেদের মুখেও তখন হাসির ঝিলিক।

এই জয়ের পরও পয়েন্ট তালিকায় তৃতীয় স্থানেই রইলো খুলনা। সমান ৭ ম্যাচ ও ৪ জয়ে দুইয়ে থাকা ঢাকা ডায়নামাইটসের সমান ৯ পয়েন্ট হলেও নেট রান রেটে পিছিয়ে মাহমুদউল্লাহর দল। এক ম্যাচ কম খেলে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এই হারে ৭ ম্যাচে ২ জয় নিয়ে ছয়ে রাজশাহী কিংস।

মিরপুরে খুলনার লক্ষ্যটা যে এদিন খুব আহামরি ছিল তা কিন্তু না। লড়াইয়ের জন্য রাজশাহীর ১৬৮ রানের পুঁজিকেও আবার খাটো করে দেখার উপায়ও ছিল না। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৪৪ বলে ৫৬ রানের পরও যে লড়াইয়ে ১৭তম ওভার পর্যন্ত শুধু টিকেই ছিল না, ম্যাচ রাজশাহীর হাতের মুঠোতেই ছিল। কিন্তু কে জানত আটে নেমে আরিফুল ওমন ক্যারিয়ার সেরা বিধ্বংসী ইনিংস খেলে তাদের হাত থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেবেন!

এর আগে ১৩ রানে ২ উইকেট হারানো খুলনাকে পথে দেখায় মাহমুদুল্লাহ-রুশোর ৬৭ রানের জুটি। কিন্তু ২ উইকেটে ৮০ থেকে ৬ উইকেটে ১১৪ রানে পরিণত হয় টাইটান্স। ভরসা হয়ে থাকা কার্লোস ব্রেথওয়েটের বিদায় নেন পরের ওভারে। রাজশাহীর খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় তখন জয়ের প্রকাশ। কিন্তু আরিফুলের ‘অবিশ্বাস্য’ ইনিংসটি ভোজবাজির মত পাল্টে দিলো ম্যাচের চিত্র। ১৯ বলে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৪৩ রানের ইনিংসটি ছিল চারটি চার ও দুটি ছক্কায় সাজানো।

তীরে এসে তরী ডোবানোর এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা জানান রাজশাহী অধিনায়ক স্যামি, ‘এমন হার গলাধঃকরণ করা কঠিন। আমাদের জন্য এটা একটা শিক্ষা। শেষটা আমরা ভালো করতে পারিনি। আমাদের চেয়ে বেশি করে জিততে চেয়েছিল খুলনা। শেষ হাসিটা তারাই হেসেছে।’

টস হেরে ব্যাট করতে নামা ড্যারেন স্যামির রংপুরের শুরুটাও কিন্তু ছিল নড়বড়ে। দলীয় দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারেই মুমিনুল হক ও ইংলিশ অল-রাউন্ডার ড্যানিয়েল বেল-ড্রুমন্ডের উইকেট দুটি তুলে নেন পাকিস্তানি পেসার জুনায়েদ খান। পরের ওভারে আবু জায়েদের বলে জাকির হাসানের যে ক্যাচটি প্রসন্ন নেন তা টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচ হওয়ার দাবিদার।

চতুর্থ উইকেটে ওপেনার ড্যারেন স্মিথ ও মুশফিকুর রহিমের ৭৬ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে রাজশাহী। ৩৬ বলে ৭ চার ও ৪ ছয়ে ৬২ রান করে ফেরেন স্মিথ। ৩৩ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ৩ ছয়ে ৫৫ করে মুশফিক আউট হওয়ার পরেও রাজশাহীর হাতে ছিল ২৫ বল ও ৫ উইকেট। কিন্তু খুলনার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ ২৫ বলে মাত্র ২৫ রান তুলতে পারে রাজশাহী। ৮ উইকেটে ১৬৬ রানে থামে তাদের ইনিংস। ২৭ রানে ৪ উইকেট নেন জুনায়েদ। ২৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ (১২টি) উইকেট শিকারি বোলার বনে যান আবু জায়েদ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজশাহী কিংস : ২০ ওভারে ১৬৬/৮ (স্মিথ ৬২, মুমিনুল ৫, বেল-ড্রামন্ড ০, জাকির ০, মুশফিক ৫৫, ফ্র্যাঙ্কলিন ২৯*, স্যামি ৩, মিরাজ ৩, সামি ৩, নাঈম জুনিয়র ১*; জায়েদ ২/২৯, জুনায়েদ ৪/২৭, শফিউল ০/৩৫, ব্রেথওয়েট ১/৩৩, প্রসন্ন ০/১৫, আফিফ ১/২৩)।

খুলনা টাইটান্স : ১৯.২ ওভারে ১৬৮/৮ (ওয়ালটন ৪, রুশো ২০, প্রসন্ন ৬, মাহমুদউল্লাহ ৫৬, আফিফ ৫, ব্রেথওয়েট ১২, শান্ত ৪, আরিফুল ৪৩*, শফিউল ৫, জুনায়েদ ১*; সামি ৩/২৯, হোসেন ১/৩৮, ফ্রাঙ্কলিন ২/৩০, মিরাজ ১/২৪, নাঈম জুনিয়র ০/২০, স্মিথ ১/২৬)।

ফল : খুলনা টাইটান্স ২ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : আরিফুল হক (খুলনা)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন