বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন শুধু মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ের সংগঠন নয়। এটা একটা অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন। দেশের ভিতর থেকে গড়ে ওঠা এবং সমাজের সাথে মিশে থাকা একটি সংগঠন। এই সংগঠন কারো তাঁবেদারী করে না। শুরু থেকেই এই সংগঠন মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মাদরাসা শিক্ষক/কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি-এখন সময়ের দাবি। আমারা সরকারকে কোন চাপ দিতে চাই না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষা প্রসারে ও আধুনিকায়নে যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা আশা করব এই শিক্ষার উন্নয়নকল্পে শিক্ষক/কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।
তিনি গতকাল মঙ্গলবার রংপুরের ধাপ সাতগাড়া বায়তুল মুকাররম মডেল কামিল মাদরাসায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ মাদরাসা শিক্ষক ও কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আয়োজিত বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন রংপুর জেলা শাখার সভাপতি প্রিন্সিপ্যাল আ, ন, ম হাদীউজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব আলহাজ্ব মাঃ মোঃ সাব্বির আহমেদ মোমতাজী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি প্রিন্সিপ্যাল মাওঃ হাসান মাহমুদ, কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি প্রিন্সিপ্যাল নুর বখত, পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি প্রিন্সিপ্যাল ডঃ আব্দুর রহমান, ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি প্রিন্সিপ্যাল মাওঃ মাজহারুল ইসলাম, নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি প্রিন্সিপ্যাল মাওঃ এ,বি,এম মনসুর আলী, লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি প্রিন্সিপ্যাল মাওঃ মোসলেম উদ্দিন, গাইবান্ধা জেলা শাখার সম্পাদক প্রিন্সিপ্যাল মাওঃ ইউসুফ আলী এবং দিনাজপুর জেলা শাখার সম্পাদক প্রিন্সিপ্যাল মাওঃ আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় রংপুর রিপোটার্স ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের রংপুর জেলা সংবাদদাতা হালিম আনছারী এবং সাধারণ সম্পাদক ও ৭১টিভির রংপুর ব্যুরো প্রধান শাহ বায়েজীদ আহম্মেদ, যুগ্ম সম্পাদক ও চ্যানেল ৯ এর রংপুর প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ও এশিয়া টিভির রংপুর প্রতিনিধি বাদশা ওসমানী এবং সদস্য ও দৈনিক নয়াদিগন্তের রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নানের নেতৃত্বে রিপোর্টার্স ক্লাবের নেতৃবৃন্দ দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
প্রধান অতিথি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ড। মাদরাসা শিক্ষা জাতীকে সুন্দর করতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই মাদরাসা শিক্ষার অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। এতে দেশের সম্মান বেড়েছে। দেশে মাদরাসা শিক্ষা প্রসারে এবং মাদরাসার শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বিগত দিনে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মাদরাসা শিক্ষার উন্নতি করতে হলে শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। তাই শিক্ষক/কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ ছাড়া এর বিকল্প নেই। এবতেদায়ীসহ মাদরাসা শিক্ষক/কর্মচারীগণের চাকরি জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। তিনি অনতিবিলম্বে এবতেদায়ীসহ মাদরাসা শিক্ষক/কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা আশাবাদী বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ করে তিনি উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখবেন। ইতিমধ্যে আমাদের অনেক দাবি পূরণ হয়েছে। আরো হবে। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের আগেই আমাদের আরো একটি ভালো খবর দিবেন।
তিনি বলেন, আলেম-ওলামাদের চিন্তা-ধারার বাইরে গিয়ে কোন সরকার ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সউদীতে ইতিমধ্যে পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়ে গেছে। ২০১৮ সালে একটা বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে। বিশ্বে মুসলিমদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। আগামী ৫০ বছরের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ২শ’ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এই ২শ’ কোটির নেতৃত্বে যারা থাকবেন, তারাই হবেন বিশ্বনেতা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশও একটা অবস্থানে যাবে।
তিনি মায়ানমারে মুসলমানদের উপর জুলুম-অত্যাচারের কথা স্মরণ করে বলেন, যুগ যুগ ধরে এদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান একসঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে বসবাস করে আসছে। অন্য ধর্মের লোকজন এখানে মায়ের কোলে বাস করছে। মায়ানমারে মুসলমানদের উপর এত জুলুম নির্যাতনের পরও বাংলাদেশে কোন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর কোন প্রকার হামলা নির্যাতন হয়নি। কোন মুসলমান হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করতে পারে না আগুন লাগাতে পারে না। হিন্দুদের বাড়িতে কারা আগুন লাগাচ্ছে-এটা সঠিক তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে। অনেক ধরণের ষড়যন্ত্র হতে পারে। এজন্য আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্মেলন সফল করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, যুগোপযোগী সিলেবাস, আধুনিক কারিকুলামসহ মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সম্মেলনের প্রধান বক্তা আলহাজ প্রিন্সিপ্যাল মাওঃ সাব্বির আহমেদ মোমতাজী বলেন, মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকার এদেশের ইসলাম প্রিয় জনগণের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ভ‚য়সী প্রশংসা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে তিনি নিরীহ মাদরাসা শিক্ষক/কর্মচারীদের প্রাণের এই দাবি দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি জানান।
তিনি বলেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমরা লালন করছি তা পূরণ করতে হলে এ দেশের মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারিদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করতে হবে। অন্যথায় এ স্বপ্ন যথাযত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
তিনি বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের অতীত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রতিষ্ঠাতা আলেম কুল শিরমনি জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা এম.এ মান্নান (রহঃ)র বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এ দেশের বঞ্চিত, অবহেলিত মাদরাসা শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য যে সব সুযোগ-সুবিধা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মাধ্যমে এনে দিয়েছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। মরহুম মাওলানা এম.এ মান্নান (রহঃ) এর সুযোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ১৯৮২ সালে বেসরকারী শিক্ষকদের সর্ব প্রথম ৩০% মহার্ঘ ভাতা লাভ করে। ১৯৮৪ সালে ইনক্রিমেন্ট, হাউস রেন্ট ও মেডিকেল এলাউন্স প্রদান করা হয়। এরপর থেকে একে একে বিভিন্ন দাবি আদায় হতে থাকে। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর সুযোগ্য সন্তান বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সুযোগ্য সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এদেশের মাদরাসা শিক্ষক ও পীর মাশায়েখদের নয়নের মনি আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন তাঁর বাবার সকল অর্জনকে টিকিয়ে রাখতে এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলোকে সমাপ্ত করার লক্ষ্যে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের অনেক দাবি পূর্ণ হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে। তার অক্লান্ত পরিশ্রম আর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের বিনিময়ে সমগ্র বাংলাদেশের মাদরাসার শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পতাকাতলে সমবেত হয়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তবে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করে আমাদেরকে নানানভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বর্তমান সুযোগ্য সভাপতির বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস রেখে কোন প্রকার ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষা প্রসারে এবং এর মানোন্নয়নে অতীতে যে ভুমিকা রেখেছেন, তা এদেশের মাদরাসার শিক্ষক/কর্মচারী ও আলেম-ওলামাগণ স্মরণ রাখবেন। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে অতীতের ন্যায় আগামীতেও তিনি শিক্ষক/কর্মচারীদের প্রাণের দাবি ‘চাকরি জাতীয়করণে’ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সম্মেলনটি সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত চলে এবং এতে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার প্রায় ৫ শতাধিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন