স্টাফ রিপোর্টার : দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই এখন মাদরাসায় পড়াশুনা করছে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এড্যা. আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা যে সিলেবাসে পড়াশুনা করছে সেই একই সিলেবাস পড়ানো হচ্ছে মাদরাসাতেও। ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো অভিন্ন থাকার পরও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কোরআন, হাদীসসহ অন্যান্য ধর্মীয় বিষয় পড়াশুনা করছে। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি মেধাবী না হলে এতোগুলো বিষয় পড়া তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ৯৩ শতাংশ মুসলমানের দেশে ৩০ শতাংশ ভোটার শুধু মাদরাসার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। আর আলেম সমাজই জনমত গঠনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে। ফলে আগামী দিনে এমন কোন শক্তির এদেশের ক্ষমতায় আসা সম্ভব হবে না, যারা আলেম-ওলামাদের সুযোগ সুবিধা কমাবে এবং বঞ্চিত করবে।
গতকাল (শনিবার) গাজীপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। গাজীপুর জেলার মাদরাসা প্রধানদের সমন্বয়ে মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়ন শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন গাজীপুর জেলা ও মহানগর শাখা।
আলোচনা সভায় বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধর্মীয় শিক্ষা বান্ধব উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের শতবছরের দাবি ছিল ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা ক্ষমতায় আসার আগে কথা দিয়েছিলাম এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। ক্ষমতায় এসে সেটি করেছি। মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দুর করা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এছাড়া আরও যেসব বৈষম্য তাও খুব অল্প সময়ে দূর করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। তবে এতো কিছুর পরও এক শ্রেণির লোক আওয়ামী লীগকে মুসলমানই মনে করে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোজাম্মেল হক বলেন, এক শ্রেণির লোক বলে আমরা নাকি ইসলামে বিশ্বাস করি না। তারা বলে আমরা প্রকৃত মুসলমান নই, মুসলমান নামধারী। এক সময় বলা হতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে আজান বন্ধ হয়ে যাবে। উলুধ্বনি দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সময়ে ফাজিল-কামিলের মানসহ কওমী মাদরাসার সনদ দেয়ার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন এই মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন, কোরআন তেলাওয়াত করেন। তিনি ধর্মকে মানেন। আর অন্যজন ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করেন। ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে তিনি বলেন, রায় ঘোষণার পর বিএনপি নেতারা উল্লোসিত হয়েছে। এখন তারা বলছেন বিচার বিভাগ স্বাধীন। এই বিচার বিভাগের অধীনের তাদের অনেক মামলার রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তখন তারা কি বলে সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদীরা মিলে সারা বিশ্বে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম ও এর অনুসারিদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আর তাদের এই ষড়যন্ত্রে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে ইসলামের অপব্যাখ্যায় পথভ্রষ্ট ব্যক্তি। এজন্য তিনি আলেম সমাজকে সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানান।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, সরকার মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য বিশাল বিশাল কার্যক্রম ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে এবং সবগুলো সাফল্যমন্ডিত হয়েছে। অতি অল্প সময়ে, স্বল্প সংখ্যক লোক এবং বাজেট নিয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্য দেখিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বৈষম্য নিয়ে আমরা কথা বলছি। এখন এটি সমাধানের কাছাকাছি। এবতেদায়ী শিক্ষকরা যে বৈষম্যের শিকার এবং মাদরাসা শিক্ষার আরও যে বিষয়গুলো বাকী আছে তা নির্বাচনের আগেই তা হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা একটা কমপ্লেক্স সমাজের মধ্যে আছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সহযোগী সংস্থাগুলো (বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন) যে অর্থ দেয় তা ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত যুক্ত ও নিয়ন্ত্রণ থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা অর্থ দিচ্ছে তারা মাদরাসা শিক্ষার অনুরাগী না। তারপরও এদেশে মাদরাসা শিক্ষার সাথে জড়িত প্রশাসনের ব্যক্তিরা প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করছেন এবং মাদরাসা শিক্ষাকে এগিয়ে নিচ্ছেন। সর্বোপরি মাদরাসা শিক্ষার অগ্রগতির জন্য মাদরাসা শিক্ষকদের সহযোগিতা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষার প্রতি অনেক বেশি আন্তরিক এবং অনুরাগী। সব সময় এই ধরণের অনুরাগী ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া যাবে না। এজন্য এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদরাসা শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে হবে। দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পলিসির কারণে কওমী কিংবা আলিয়া মাদরাসার নেতৃবৃন্দ, এটার সাথে সংশ্লিষ্টরা কাছে আসছেন। ল্যাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচের অনেক দেশে টাকা পয়সা আছে। কিন্তু একটা দক্ষ সমাজ রাষ্ট্র গঠন করতে পারে না। সারা দুনিয়াতে এতো যুদ্ধ হয়ে গেলো এবং এবছরে তা সমাপ্তির দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এই উত্তাল অবস্থার মধ্যে উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রশ্রয় পায় নাই। এ ব্যাপারে এদেশের সব মাদরাসা, মসজিদ ও আলেম সমাজ সরকারের সাথে আছে। বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ঘটে থাকলে ঘটতে পারে কিন্তু সার্বিকভাবে তারা সহযোগিতা করছে এবং করবে।
তিনি বলেন, সরকারকে আলেম সমাজকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। যেহুতু তারা জনমত ধরে রাখার মূল শক্তি। তাদেরকে নিয়ে সরকারের আরো কাছ থেকে কাজ করা উচিত। আগামী দিনের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা থেকেই প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদরাসার স্বীকৃতি ও তাদের কাছে টেনে নিয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা এবং ভোটের হিসাব বুঝতে পারছেন বলেই এটি হয়েছে। একইভাবে সমস্ত মাদরাসা শিক্ষক ও আলেম-ওলামাদের সম্মান বৃদ্ধি হয়েছে। আগামী দিনে এমন কোন শক্তি এদেশে আসা সম্ভব হবে না, যারা আলেম-ওলামাদের সুযোগ সুবিধা কমাবে এবং বঞ্চিত করবে। আগামীদিনের যত দুর্যোগ সবগুলোতে মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করবে এবং পাশে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে যে বাংলাদেশ দেখতে চান মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই সেই বাংলাদেশ অর্জিত হবে। তারাই সেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। কেননা আলেম সমাজকে এড়িয়ে বাংলাদেশে কোন কিছু করা সম্ভব হবে না।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের এবং জমিয়াতুল মোদার্রেছীন গাজীপুর জেলার সেক্রেটারি মাওলানা মোঃ জহিরুল ইসলামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম ছায়েফউল্লাহ, গাজীপুর জেলার শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ও গাজীপুর জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমেদ মোমতাজীর, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমানসহ গাজীপুর জেলা ও মহানগর জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ। ####
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন