রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে চলছে জমজমাট প্রচার-প্রচারণা। ৪ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পরপরই পুরোদমে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে নগরীর সকল অলি-গলি। সভা-সমাবেশের পাশাপাশি প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুশল বিনিময় করে ভোট ও দোয়া চাইছেন। ভোট যুদ্ধে বিজয়ী হতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ৭ মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলররা। তারা ভোটারদের মন জয় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
তবে ভোটার এবং বিশ্লেষকগন মনে করছেন এবারের নির্বাচনে ৭ জন প্রাথী মেয়র পদে প্রতিদ্ব্ি›দ্বতা করলেও মূলত লড়াই হবে লাঙ্গল আর নৌকার মধ্যে। তবে ইতিমধ্যেই প্রধান প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী দুই দল আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা পরস্পর বিরোধী অভিযোগ তুলেছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও কর্মী/সমর্থকরা আ’লীগ প্রার্থী শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং দলীয় চেয়ারম্যানকে কটাক্ষ করার অভিযোগ তুললে আ’লীগ তা প্রত্যাখান করেছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক এসএম ইয়াসির জানিয়েছেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষ থেকে একটি লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ভোট না দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। লিখিতভাবেও জানাবো। তিনি বলেন, আমরা যেখানেই যাচ্ছি। সেখানেই ব্যপক আওয়াজ পাচ্ছি। লাঙ্গলের পক্ষে ব্যপক জোয়ারে আমাদের প্রতিপক্ষ ভীত হয়ে কুৎসা রটাচ্ছে।
অন্যদিকে, ঝন্টুর নির্বাচনী মিডিয়া সেলের প্রধান রিয়াজ আহমেদ হিমন জানান, নৌকা প্রতীকের পক্ষে নগরীর প্রতিটি শ্রেনী পেশার মানুষ একাট্রা হয়েছে। লাঙ্গল প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়কের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা এধরণের কোন লিফলেট বিতরণ করিনি। কোথায় পেলেন সেটা আমরা জানি না।
এছাড়া, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে কটাক্ষ করার অভিযোগ এনেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
অন্যদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনের দেয়া কারণ দর্শানো নোটিশকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মন্তব্য করছেন বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা।
বুধবার দুপুরে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘সংলাপে নাগরিক অগ্রাধিকার’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ওই দুই মেয়র প্রার্থী।
বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা বলেন, কী কারণে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে একটি সূত্রে জানতে পেরেছেন, গত সোমবার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে একটি নির্বাচনী মত বিনিময় সভাকে ঘিরে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, প্রতীক পাওয়ার পর তিনি দলের ২৫/৩০ জন নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। এর বাইরে কিছুই করেননি। এটাকে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলা গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। গত মঙ্গলবার নগরীর মেডিকেল মোড়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মঞ্চ তৈরি করে সভা-সমাবেশ করলেও নির্বাচন কমিশন সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন। এটাকে তিনি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবং আমাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু আপত্তিকর কথাবার্তা বলছেন। লাঙলে ভোট না দিতে লিফলেট বিতরণ করায় তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। কারণ কোনো প্রার্থী বা দলের বিরুদ্ধে আক্রমণ করা নির্বাচনী আচরণ বিধির লঙ্ঘন। রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিফলেট পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আশা করি, তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিকে আক্রমণ করে ও দলের বিরুদ্ধে কথা বললে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ থেকে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশন আন্তরিক হলেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি বলেও মন্তব্য করেন জাপার এই প্রার্থী।
এর আগে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল’র আয়োজনে ‘সংলাপে নাগরিক অগ্রাধিকার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে নিজেদের কর্ম পরিকল্পনা, নগর উন্নয়ন ও সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির তিন মেয়র প্রার্থী।
তবে জাতীয় পার্টি প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার অভিযোগ সম্পর্কে রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, কোনো দলের পক্ষ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি আমার কাছে মৌখিক ভাবে এসেছে। এখনও লিখিতভাবে আমাকে জানানো হয়নি। তিনি বলেন, সকল সহকারি রিটানিং কর্মকর্তা এবং ভ্রাম্যমান আদালতের টিম মাঠে কাজ করছে। আমরা আচরণবিধি লংঘনের বিষয়ে কান ধরনের ত্রটি এলাউ করবো না। তিনি বলেন, তবে আমার মনে হয়, প্রার্থীদের মধ্যে একটা ভালো সমন্বয় আছে। এখন পর্যন্ত কেউ কারো বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ করেনি।
বিএনপি প্রার্থীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ধানের শীষ প্রতিকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম মিজু জানান, ধানের শীষের জন্য মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা মাঠে গিয়ে সেটা টের পাচ্ছি। ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হলে ধানের শীষ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামীলীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (হাতী), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গোলাম মোস্তফা (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম আখতার (আম) এবং বাসদের আব্দুল কুদ্দুস (মই) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশেনের প্রথম ভোট হয়। এবার প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই বাড়তি উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে প্রার্থী, ভোটার ও সমর্থকদের মধ্যে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন