মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দুই দশকেও নতুন ফেরি ও ইঞ্জিন সরবারহ হয়নি

দক্ষিণাঞ্চলের ফেরি সার্ভিসের বেহাল দশা

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দক্ষিণাঞ্চলের জনগুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে জরাজীর্ণ ফেরিগুলো এখন জোড়াতালি দিয়েও চালিয়ে রাখতে পারছেনা সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। নদ-নদী নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক মহাসড়কই এখনো ফেরি নির্ভর। আর এসব সড়ক মহাসড়কের কোন ফেরিই ভাল নেই। গত দুই দশকেও দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কোন ফেরি ঘাটে নতুন ফেরি কিংবা ভালমানের ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়নি। তবে তদবীরের যোরে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ফেরি সেক্টরে উন্নত ফেরি ও ইঞ্জিন দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা/মোংলা মহাসড়কের বেকুঠিয়া ফেরি সেক্টরে যানবাহন পারাপার নিয়েও চরম দুর্ভাবনায় সড়ক অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন প্রকৌশলীবৃন্দ। দুই দশকেরও বেশী পুরনো ইঞ্জিন ও লক্করমার্কা ফেরি নিয়ে ঐ মহাসড়কটির বেকুঠিয়ায় কঁচা নদীতে যানবাহন পারপারের নিরন্তর চেষ্টা করেও জনদুর্ভোগ হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছেনা। এমনকি এ সেক্টরে গত দশ বছরেও কোন ভালমানের ফেরি মোতায়েন করেনি সড়ক অধিদফতর। উপরন্তু চলমান ফেরি দুটির সার্চ লাইট সহ সিগন্যাল বাতিগুলোও প্রায় অকার্যকর। বিদ্যমান ফেরিগুলোর ইঞ্জিনের মত এর ডেকিং সহ পন্টুন ও গ্যাংওয়ের অবস্থাও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও পদে পদে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে কঁচা নদীতে ৯টি যানবাহন নিয়ে পারি দেয়ার সময় একটি অজ্ঞাত অয়েল ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় একটি ইউটিলিটি ফেরির তলা ফেটে ডুবে যাবার উপক্রম হলে চালক কঁচা নদীর কিনারার চড়ায় তুলে দিয়ে কোনমতে তা রক্ষা করতে সক্ষম হন। তবে ঐ দুর্ঘটনায় ৩টি বাস ও ট্রাক নদীতে পড়ে যায়। দুর্ঘটনায় অন্তত পাঁচ যাত্রী আহত হয়েছে। অয়েল ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় ফেরিতে থাকা যানবাহনের মধ্যে সংঘর্ষে কম বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় সব বাস-ট্রাক ও পীকআপগুলো।
চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগ ছাড়াও দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ এ ফেরি সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল। অথচ বেকুঠিয়ার চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে নতুন ইঞ্জিন সমৃদ্ধ ফেরি মোতায়েন করা হয়েছে গত কয়েক বছরে। বেকুঠিয়া সেক্টরের ৩টি ইউটিলিটি ফেরির একটিতে এখন কোন ইঞ্জিনই নেই। অন্য দুটি ফেরি দু যুগেরও বেশী পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে চালানের ব্যর্থ চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি ইতোপূর্বে এখান থেকে একটি ভাল ফেরি ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে নিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত বর্ষা মওসুমের তিন মাসে প্রবল শ্রোতে বেকুঠিয়ার লক্করমার্কা ফেরির ইঞ্জিনগুলো দফায় দফায় বিকল হয়েছে। নজিরবিহীন দুর্ভোগের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে বেকুঠিয়া ফেরি সেক্টর। ঐ ফেরি সেক্টরের দুই পারে যানবাহনের লম্বা লাইন সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলছে প্রতিনিয়ত। প্রায়ই মাঝ নদীতে ফেরি বিকল হয়ে পড়ছে বেকুঠিয়াতে। ফলে মাঝ নদীতে বিকল ফেরি কঁচা নদীর প্রবল স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাবার ঘটনাও ঘটছে।
গত মঙ্গলবার মধ্য রাতের দুর্ঘটনার পর থেকে বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ফেরি পারপার বন্ধ ছিল বেকুঠিয়া ফেরি সেক্টরে। পরে নিকট দূরের চরখালী থেকে একটি বিকল্প ফেরি এনে দুপুরের মধ্যে যানবাহন পারপার স্বাভাবিক করে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। বুধবার সন্ধার মধ্যে কচাঁ নদীর তলদেশ থেকে এবং দুর্ঘটনা কবলিত ফেরিটির ৭টি যানবাহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে আরো একটি ট্রাক উদ্ধার করার পরে শুক্রবারের মধ্যে সর্বশেষ ট্রাকটিও নদী থেকে তুলে আনা সম্ভব হয়েছে।
তবে এ পর্যন্ত দুর্ঘটনার শিকার ফেরিটি উদ্ধার কাজ শুরু করাই হয়নি। সড়ক অধিদফতর দুর্ঘটনা কবলিত ফেরিটি উদ্ধারে প্রানপন চেষ্টা করলেও বিষয়টি খুব সহজ হবেনা বলে মনে করছেন দায়িত্বশীল মহল। এক্ষেত্রে বিআইডবিøউটিএ’র উদ্ধারযান নিয়োগ করাও সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারন ফেরিটি কঁচা নদীর চড়ায় তুলে দিয়ে রক্ষ করা হয়েছে। সেখানে বিআইডবিøউটিএ’র উদ্ধার যান ‘নির্ভিক’এর পৌঁছানো সম্ভব হবেনা বলে মনে করছেন দায়িত্বশীল মহল। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফেরিটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হতে পারে।
বেকুঠিয়ার এ দুর্ঘটনা সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় কতটুকু গুরুত্বের সাথে দেখছে তা জানা না গেলেও এ ধরনের পরিস্থিতি যেকোন সময় আবারো ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কারন বেকুঠিয়া সহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি ফেরি সেক্টরে বর্তমানে যে ২৫টি ইউটিলিটি ফেরী রয়েছে, তার সবগুলোই দীর্ঘদিনের পুরনো। এর ইঞ্জিনগুলোও প্রায় চলতশক্তিহীন। এসব ফেরির অধিকাংশেই কোন সার্চ লাইট ও ফগ লাইট নেই। এমনকি এসব ফেরিতে অন্য যেসব সঙ্কেত বাতি থাকার কথা, তারও প্রায় সবই অকার্যকর। উপরন্তু কোন ফেরিতেই দক্ষ চালক পর্যন্ত নেই। গত মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার সময় ঘাতক অয়েল ট্যাঙ্কার ও ফেরিটিতে সার্চ লাইট বন্ধ ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। মধ্যরাতের মাঝারি কুয়াশায় ঘাতক নৌযানটিকে সনাক্ত পর্যন্ত করা যায়নি।
সড়ক অধিদফতরের ফেরিগুলো মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষণ করে ফেরি বিভাগ। কিন্তু তার পরিচালন স্ব-স্ব সড়ক বিভাগের ওপর। উপরন্তু সড়ক বিভাগগুলো এসব ফেরিসমূহ পরিচালন করে ইজারাদারের মাধ্যমে। ফলে ফেরিগুলোর মেরামত, রক্ষনাবেক্ষণ থেকে শুরু করে তার সুষ্ঠু পরিচালন কোন কিছুই নিয়ম মাফিক হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আর পুরো বিষয়টি সড়ক অধিদফতরের দুটি ভিন্ন পরিদফতর ছাড়াও রাজনৈতিক লেবাসধারী ইজারাদারের খেয়ালখুশির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় কোন নিয়মÑশৃঙ্খলার বালাই নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে বেকুঠিয়া ফেরি সেক্টরটি গত প্রায় বছরখানেক যাবত পিরোজপুর সড়ক বিভাগের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বুধবার প্রত্যুষেই বরিশাল ও পিরোজপুর থেকে সড়ক বিভাগের উর্ধতন প্রকৌশলীবৃন্দ দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান। দ্রæত উদ্ধার তৎপড়তা শুরু করা হয়। সড়ক অধিদফতরের দুটি মোবাইল ক্রেন ও অপর একটি ফেরির সাহায্যে দিনভর চেষ্টায় ডুবে যাওয়া ও ফেরিতে থাকা যানবাহনগুলো উদ্ধার করা হয়।
এসব বিষয়ে সড়ক অধিদফতরের যান্ত্রিক সার্কেলের তত্ববধায়ক প্রকৌশলী জানান, ‘যত দ্রæত সম্ভব পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা চলছে। বেকুঠিয়া পয়েন্টে আরো একটি ইউটিলিটি ফেরি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়ে মাস খানেকের মধ্যে নতুন ফেরি পরিচালন সম্ভব হবে’ বলেও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন