শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারনে সহশ্রাধিক কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:১৯ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার পল্লী এলাকায় প্রায় ২৫ লাখ গ্রহকের ঘরে বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থার মান উন্নয়ন সহ আধুনিকায়নে প্রায় ১ হাজার ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। দেশীয় তহবিলের এ প্রকল্পটির কাজ চলতি অর্থবছর থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারন করে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থা আরো নির্বিঘœ ও নিরবিচ্ছিন্ন হবে বলে আশা করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল।
প্রকল্পের আওতায় বরিশাল,পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলার ৪২টি উপজেলার বিভিন্ন স্তরে ১৮টি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন নির্মান ছাড়াও ৮টি বিদ্যমান সাব-স্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া ৪০৮ কিলোমিটার ৩৩ কেভি ভ’গর্ভস্থ লাইন নির্মানের পাশাপাশি আরো ১০৩ কিলোমিটার ৩৩ হাজার ভোল্ট লাইনের মান উন্নয়ন করা হবে। একই সাথে ১১ হাজার ভোল্টের ৭৬২ কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মানের পাশাপাশি ভ’গর্ভস্থ লাইনও নির্মিত হবে ।
প্রকল্পটির আওতায় বিদ্যমান ১৬শ কিলোমিটার দীর্ঘ উন্মুক্ত ঝুকিপূর্ণ লাইনে ইনসুলেটেড তার প্রতিস্থাপন করা হবে। একই সাথে সাড়ে ৪শ কিলোমিটার ১১ হাজার ভোল্টের লাইন আধুনিকায়ন সহ প্রতিস্থাপন করা হবে। দেড় হাজারর কিলোমিটার .০৪ কেভি লো-টেনশন লাইনকে হাই টেনশন লাইনে রূপান্তর করার কথা রয়েছে। সাড়ে ৬শ কিরলোমিটার ১১ কেভী সিঙ্গেল ফেজ লাইনকে ৩ ফেজে উন্নীত করার ফলে আরো অধিক সংখ্যক গ্রাহককে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে বলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে ১১ কেভী লাইনে প্রায় সাড়ে ১২শ সেট ‘ফল্ট লোকেটর’ স্থাপন করা হবে। ফলে সুদুর পল্লী এলাকায় যেকোন বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে চিঞ্হিত করে দ্রুততম সময়ে ত্রুটি দুর করে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবারহ পুণঃ স্থাপন করা সম্ভব হবে। একইভাবে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইনের জন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সংগ্রহের মাধ্যমে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন, সরবারহ ও বিতরন ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করার পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আরো ৯টি রিভার ক্রসিং টাওয়ার নির্মানের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আরো নির্বিঘœ হবে।
প্রকল্পটি বাস্তাবায়িত হলে দক্ষিণাঞ্চলের সুদুর পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা আরো নির্বিঘœ ও নিশ্চিত হবে বরে আরইবি’র দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধিভ’ক্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৪২টি উপজেলার ৪ হাজার ৭৭২টি গ্রামের ইতোমধ্যে ২৪ লাখ গ্রাহকের ঘর আলোকিত করার মাধ্যমে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করেছে। ফলে নিকট অতীতে সন্ধার পরে ঘুমিয়ে পড়া দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামগুলো এখন গভীর রাত পর্যন্ত সাধারন মানুষের পদচারনায় মুখরিত। ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে নানামুখি কুটির শিল্পও গড়ে উঠছে পল্লী এলাকায়। ঘুরছে অর্থনীতির চাকা। কৃষির পাশাপাশি নানামুখি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গ্রামঞ্চলে বেকার সমস্যাও অনেকাংশে লাঘব করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো। এমনকি নদ-নদী বেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের দূর্গম ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলেও নদী তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করছে আরইবি। তবে সুদুর পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌছে দেয়ার পরেও দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গড় সিষ্টেম লস ১০%-এরও নিচে।
ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, কুয়েত উন্নয়ন তহবিল,জাপান উন্নয়ন সংস্থা ও মার্কিন সাহায্য সংস্থা সহ কয়েকটি দাতা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দক্ষিণাঞ্চলের ২৪ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সবিধা পৌছে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। আগামী জুনের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে গ্রাহক সংখ্যা ২৫ লাখ অতিক্রমের সম্ভবনার কথাও বলেছে আরইবির দায়িত্বশীল মহল।
শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ধারনা ও প্রচেষ্টায় ১৯৭৭ সালে গঠিত বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ঐ বছরই ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিÑ১’এর কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের সূচনা করে। দক্ষিণাঞ্চলে ১৯৮২ সালের ৮ মে সর্ব প্রথম পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তার পরিচালন কার্যক্রম শুরু করে। সে থেকে ক্রমান্বয়ে বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিÑ১ ও ২ এবং পটুয়াখালী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, ভোলা ও ঝালকাঠী জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়।
বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ইতোমধ্যে ৩৩ কেভি, ১১ কেভি এবং এলটি সহ ৫৭ হাজার কিলোমিটার লাইনের সাহায্যে প্রায় ৩৮৫টি ইউনিয়নের ৫ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবারহ করছে সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো। এ অঞ্চলের প্রায় ২৪ লাখ গ্রাহকের জন্য ৯৫৭ এমভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন ৭০ টি সাব-স্টেশনের মাধ্যমে পীক আওয়ারে ৪৩০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবারহ করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো।
সদ্য অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তাবায়িত হলে দক্ষিণের পল্লী এলকায় ১ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবারহের সক্ষমতা অর্জন করবে আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমতিগুলো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন