বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গ্রামীণ জনপদে চলছে মাছ ধরার উৎসব

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল : চলমান শুকনো মওসুম শুরু শুরু থেকেই কুমিল্লার খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-ডোবার পানি দ্রæত হ্রাস পাচ্ছে। সেই সঙ্গে কুমিল্লার চান্দিনার বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে মাছ ধরার ধুম পড়েছে। প্রতিটি গ্রামগঞ্জেই এখন মাছ ধরার উৎসব চলছে। ভোর হতে না হতেই শুরু হয় মাছ ধরার পালা। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবণিতা সকলেই মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠে। সকলেই উড়াইন্যা জাল, ঠ্যালা জাল, উইন্যা, পলো প্রভৃতি নিয়ে এবং শিশু-কিশোররা খালি হাতেই খালে-বিলে নেমে পড়ে। যেখানে হাঁটু পানি সেখানে সেচের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর মৎস্য শিকারীরা খালে-বিলে নামছে। দুপুর পর্যন্ত চলে মাছ ধরার এই প্রক্রিয়া। পরে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ হাটবাজারে বিক্রি করে দেয়।
পুরো শীত মৌসুমেই গ্রামগঞ্জে মাছ ধরার এই চিত্র চোখে পড়ে। আর মাছ ধরায় সামিল হতে পেরে শিশু-কিশোরদের আনন্দ আর আনন্দ। কাদা-পানিতে সারা শরীর মাখামাখি করে তারা মাছ ধরার আনন্দে বিভোর থাকে। কৈ, শিং, মাগুর প্রভৃৃতি দেশি জাতের জিয়ল মাছই ধরা পড়ে বেশি। তাছাড়া টেংরা, পুঁটি, খইলসা, শোল, টাকি, বোয়াল, চিকরা, বাইন, কাতলা, সিলভার কার্প প্রভৃতি মাছ তো রয়েছেই। বর্ষাকালে ফিশারিসহ বিভিন্ন জলমহালের মাছ ভেসে গিয়ে ডোবা-পুকুর, খাল-বিল এবং নিচু জালাভ‚মিতে আশ্রয় নেয়। পরে শুকনো মওসুমে সেইসব মাছ ধরা পড়ে। বর্তমানে গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যাচ্ছে এবং অন্যান্য সময়ের তুলনায় দামও এখন অনেক সস্তা। এদিকে কুমিল্লা জেলার চান্দিনাসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন খালে-বিলে অহরহ ছোট ছোট জাল ও চাই (ফাঁদ) দিয়ে ছোট-বড় কই, শিং, মাগুর, ভেদি, বায়লা, পাবদা, চিংড়িসহ দেশি মাছ শিকার দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন না হওয়ায় ওই সব মাছের প্রজাতি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, দেশি কই, শিং, মাগুর, ভেদি, বায়লা, পাবদা, চিংড়ি ইত্যাদি মাছের প্রজননের সময় মা মাছেরা ডিম ছাড়ার জন্য বৃষ্টির পানিতে ভেসে গিয়ে ধান ক্ষেত, ডোবা, নালা, খাল-বিলে আশ্রয় নেয় এবং ডিম ছাড়ে। চান্দিনার খাল, বিল, ডোবা, নালায় এখন ছোট বড় হরেক প্রজাতির দেশি মাছ বড় হয়ে ওঠার অপেক্ষায়। কিন্তু চান্দিনাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে ছোট ছোট জাল ও চাঁই (ফাঁদ) পেতে ছোট ছোট মাছসহ ডিমঅলা মাছগুলো ধরে অহরহ বিক্রি করছে হাট-বাজারে। সরেজমিনও জেলার চান্দিনা উপজেলা শুহিলপুর এলাকায় চাঁই দিয়ে মাছ ধরার হিড়িক চলতে দেখা গেছে। বাঁশ দিয়ে তৈরি ওই ফাঁদে মাছ একবার ঢুকে পড়লে আর বের হতে পারে না। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে মৎস্য শিকারীরা বাঁশের তৈরি ওই বিশেষ ফাঁদ কিনে নিয়ে জমির রোপা ধানের ফাঁকে ফাঁকে এবং ছোট ছোট নালায় পেতে রাখেন এবং পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পরপর ওই সব জায়গা থেকে ফাঁদ তুলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করা হয়। এতে নিন্ম আয়ের মানুষরা তিন বেলা পরিবারের খাওয়ার পরও এক থেকে দেড়শ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারছেন। আনোয়ার নামের এক কৃষক জানান, যে দিন বেশি বৃষ্টি হয় সেই দিন ওই চাইতে বেশি মাছ ধরা পড়ে। তবে মাছের ওই মরণফাঁদে ছোট ছোট বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়ায় মাছের প্রজনন সঙ্কট দেখা দিচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন