বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ঐক্যবদ্ধ বিএনপি আ’লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ

কুমিল্লাা-৯ : লাকসাম-মনোহরগঞ্জে বইছে নির্বাচনী হাওয়া

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে কোন বিরোধ নেই। তৃণমূলে মান অভিমান ক্ষোভ চলছে ভেতরে ভেতরে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলোতে ত্যাগী ও তৃণমুলের নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় একটি গ্রæপ এমপি তাজুল ইসলামের বিরোধীতায় গোপনে সক্রিয় রয়েছে। ওইসব অভিমানী নেতাকর্মীদের ঘিরে আগামী নির্বাচনে টানাপোড়েনে পড়তে পারে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে দ্ব›েদ্ব আক্রান্ত বিএনপি শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হলে জয়ের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে আওয়ামী লীগ। কেননা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী কর্ণেল অব. আনোয়ারুল আজিমের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে মাত্র ৪৫৮ ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হোন তাজুল ইসলাম। আসন্ন একাদশ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ বিএনপিতে হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলে আওয়ামী লীগের জন্য আসনটি রক্ষা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কুমিল্লা-৯ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে এমন ইঙ্গিতই বহন করছে।
শিল্প, বাণিজ্য আর কৃষিতে উন্নত উপজেলা লাকসামের ৭টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৯ সংসদীয় আসন। লাকসাম-মনোহরগঞ্জের এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি থেকে জালাল আহমেদ, নুরুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম হিরু, এটিএম আলমগীর হোসেন, তাজুল ইসলাম, কর্ণেল অব. এম আনোরুল আজিমের নেতারা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সময়ের বিবর্তনে এ আসনে জাতীয় পার্টির অস্তিত্বে অনেকটা ভাটা পড়লেও আধিপত্য ধরে রেখেছে বিএনপি-আওয়ামীলীগ। নব্বইয়ের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ওই অঞ্চলে বিএনপির ব্যাপক জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়। সেই জনপ্রিয়তার পথ ধরে ৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এটিএম আলমগীর হোসেন জয়লাভ করেন। কিন্তু এরপর সেনাবাহিনীর অব. কর্মকর্তা কর্ণেল এম আনোয়ারুল আজিম বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠলে এমপি এটিএম আলমগীরের সাথে দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হয়। আর এ দ্ব›েদ্বর বিরূপ ফল পড়ে ৯৬ সালের নির্বাচনে। যেখানে বিএনপি প্রার্থী এটিম আলমগীরকে মাত্র দুই হাজার আটশো ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগের তাজুল ইসলামের কাছে পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আসনটিতে বিএনপিকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসে আনোয়ারুল আজিম। ফলে ওই বছরের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী তাজুল ইসলামকে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটে হারিয়ে এমপি হোনে বিএনপির আনোয়ারুল আজিম। এরিমধ্যে এটিমএম আলমগীর দলে অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের রাজনীতিতে উঁকি দেন চৈতি গ্রæপের কর্ণধার শিল্পপতি আবুল কালাম ওরফে চৈতি কালাম। শুরু হয় বিএনপিতে নতুন দ্ব›দ্ব। আর এ দ্ব›েদ্ব ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির কলিজায় মরণ কামড় দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে জয় পায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাজুল ইসলাম। আর কলিজা ফাটা মাত্র ৪৫৮ ভোটে হেরে যান বিএনপির আনোয়ারুল আজিম। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আবারও এমপি হোন তাজুল ইসলাম।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে লাকসাম-মনোহরগঞ্জে এমপি তাজুল ইসলাম তার একক নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে তোলেন। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলো এমপি তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। লাকসাম-মনোহরগঞ্জে এমপি তাজুল ইসলামের বিকল্প কোন নেতৃত্ব সৃষ্টি না হলেও সংগঠনের ত্যাগী ও তৃণমুল নেতাদের মান-অভিমান রয়েছে এমপির ওপর। এসব নেতাদের অনেকেই কমিটিগুলোতে স্থান না পাওয়ায় এবং তাদের মূল্যায়নের জায়গাটি তৈরি না হওয়ায় কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। যদিও এসব ক্ষোভ প্রকাশ্যে ঝাড়তে পারছেননা পদ-পদবী বঞ্চিত নেতারা। আড়ালে আভডালে থাকা বিরোধী গ্রæপটি এমপি তাজুল ইসলামের মনোনয়ন প্রাপ্তিতে বাধা হয়ে না দাঁড়ালেও তারা আসন্ন একাদশ নির্বাচনে গোপনে বিরোধীতা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলের অনেকেই। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয় পেতে হলে দলীয় ঐক্য সুসংহত করতে হবে। না হয়, বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে হেভিওয়েট প্রার্থী দিলে তা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কেননা ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের জোয়ারের সময়ে এ আসনে তাজুল ইসলাম মাত্র ৪৫৮ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। তবে দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, আগের প্রেক্ষাপট অনেক পাল্টে গেছে। গত ৯ বছরে লাকসাম মনোহরগঞ্জে অবকাঠামোগত উন্নয়ন দুই উপজেলাবাসীর মনে আওয়ামী লীগের প্রতি অনেক বিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ভোটের অংকে আওয়ামী লীগের পাল্লাই ভারী থাকবে বলে আশাবাদী লাকসাম-মনোহরগঞ্জের নেতারা।
এদিকে লাকসাম মনোহরগঞ্জে ব্যক্তি ও সাংগঠনিক দ্ব›েদ্ব আক্রান্ত হয়ে পড়েছে বিএনপি। এমনিতেই ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সারাদেশে ব্যাপক ভরাডুবির পর এখন পর্যন্ত দলটি নানাভাবে কোনঠাসা। তার ওপর দলীয় কোন্দল প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের শক্ত অবস্থান তৈরি করে দিচ্ছে। লাকসাম-মনোহরগঞ্জে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিম ও কেন্দ্রিয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম ওরফে চৈতি কালামের গ্রæপিংয়ের রাজনীতিতে জড়িয়ে রয়েছেন। লাকসাম-মনোহরগঞ্জে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছেন সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিম। লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম হিরু নিখোঁজ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপিতে গ্রæপিং করার সুযোগ পায়নি কেউ। দলে আনোয়ারুল আজিমের নেতৃত্বকে হিরু বেশ পছন্দ করতেন। ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে হিরু এবং লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি পারভেজ নিখোঁজ রয়েছেন। অভিভাবকহীন লাকসাম বিএনপির হাল ধরার জন্য আনোয়ারুল আজিম লাকসাম উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করেন চৈতি গ্রæপের আবুল কালামকে। ব্যাস, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদ পেয়ে আগের দ্ব›দ্ব জোরালো করে আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধেই মাঠে নামেন চৈতি কালাম। আনোয়ারুল আজিম ও হিরুর ঐক্যবদ্ধ লাকসাম বিএনপিকে ভাঙ্গনের পথে নিয়ে যান চৈতি কালাম। বেশ কিছুদিন আগে আনোয়ারুল আজিমের সাথে পরামর্শ বা যোগাযোগ না করেই লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি দেয় চৈতি কালাম। কমিটিতে বেশিরভাগই কালাম অনুসারি। এসব ঘটনা নিয়ে লাকসাম-মনোহরগঞ্জ বিএনপিতে নানা ঘটনা ঘটেছে। কালাম তিক্ততায় বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে পত্রও দিয়েছেন আনোয়ারুল আজিম। যদিও দল সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। এখনো চরম দ্ব›দ্ব চলছে বিএনপিতে।
আসন্ন একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আনোয়ারুল আজিম ও অনুসারি নেতাকর্মীরা যেখানে মাঠ গোছাচ্ছেন সেখানে চৈতি কালাম ও তার অনুসারিরা পদ-পদবী নিয়ে ব্যস্ত। লাকসাম-মনোহরগঞ্জের তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী দিতে হবে। আর হেভিওয়েট প্রার্থী বলতে সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিমের বিকল্প নেই। এলাকায় তিনি ক্লিন ইমেজ ও ন¤্র স্বভাবের মানুষ হিসেবে পরিচিত। তৃলমূল নেতারা আরও জানান, গত ৯ বছর ধরে বিএনপি কঠিন সময় পার করছে। নিজেদের দ্ব›েদ্ব প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে সুযোগ করে দেয়ার মতো ভুল করা যাবেনা। তাই ঐক্যবদ্ধ বিএনপির হাত ধরে কুমিল্লা-৯ আসন পুনরুদ্ধার করতে হবে। অপরদিকে আসন্ন একাদশ নির্বাচনে কর্ণেল অব. আনোয়ারুল আজিম যেমন মনোনয়ন প্রত্যাশি তেমনি লাকসাম উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম ওরফে চৈতি কালাম, মনোহরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইলিয়াছ পাটেয়ারি, যুবদল কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক রশীদ হোসাইনী মনোনয়ন প্রত্যাশি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন