বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়

ইজতেমা ময়দানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মুসল্লিদের ইবাদত বন্দেগী

মো: দেলোয়ার হোসেন ও মোঃ হেদায়েত উল্লাহ, টঙ্গী থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম দিনে গতকাল শুক্রবার লাখো মুসল্লি একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। নিয়মিত তাবলিগ জামাতের জামাতবন্দী মুসলি ছাড়াও ঢাকা-গাজীপুর ও আশপাশ এলাকার কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে জুম্মার নামাজে অংশ নেন। গতকাল শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লি বয়ান, তাশকিল, তাসবিহ-তাহলিলে অংশ নেন।
তীব্র শীতের কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুসল্লিদের প্যান্ডেলের বাইরে যেতে দেখা যায়নি। এদিকে মাওলানা সা’দ ইজতেমা ময়দানে আসছেন না এ খবর মুসলিদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মাওলানা সা’দ ইজতেমা ময়দানে আসা না আসার কোন প্রভাবই ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের মাঝে দেখা যায়নি।
এবারই প্রথমবারের মতো ইজতেমার আম বয়ান আরবিতে দেওয়া হয়। বয়ানের বাংলা তরজর্মা করেন, মাওলানা সালেহ। বাদ জুম্মা বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন, বাদ আসর বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল বারী ও বাদ মাগরিব বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ রবিউল হক। আগামীকাল রোববার পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বীরা আখলাক, ঈমান ও আমলের ওপর বয়ান করবেন বলে ইজতেমা সূত্রে জানা গেছে। ইজতেমা ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজে খুতবা পাঠ শুরু হয় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে। নামাজ শুরু হয় ১টা ৪০ মিনিটে। ইমামতি করেন রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলে হাজির হন। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমার পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে যায়। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন পাটি, চটের বস্তা ও খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হন।
জুমার নামাজে মুসলিদের সাথে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও গাজীপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ হাসান রাসেল।
এর আগে বাদ ফজর জর্ডানের মাওলানা শেখ ওমর খতিবের বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার মূল কাজ শুরু হয়। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মুরব্বি আব্দুল মতিন। প্রথম পর্বে দেশের ১৪ জেলার মুসল্লিদের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক ও জর্ডানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন।
ইজতেমা আয়োজক কমিটি সূত্র জানায়, ইজতেমার প্রথম দিনেই অংশ নিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার বিদেশি মুসল্লি। তাবলিগ জামাতের তিন দিনব্যাপী এই বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে প্রথম দিন শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৭৯টি দেশের ৩ হাজার ৯১৯ জন মুসল্লি ইজতেমা মাঠে পৌঁছেছেন। ইজতেমার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য রক্ষায় ইজতেমায় প্রতিদিন ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই পর্বে পরিচালিত হচ্ছে।
বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বলেন, বিদেশি মুসল্লিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে আলাদা খিত্তার ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরায় বিদেশিদের জন্য ৪টি খিত্তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
টঙ্গী থানার অফিসার্স ইনচার্জ ফিরোজ তালুকদার জানান, টোকাই, হকার, পকেটমার, ফকির ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। গতকাল ১০/১৫জন ফকিরকে ইজতেমা ময়দান এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রথম পর্বের ইজতেমায় রাজধানী ঢাকাসহ ১৪ জেলার মুসল্লিরা ইজেতেমায় অংশ নিয়েছেন। সকাল থেকেই সড়ক পথ, রেলপথ ও নৌপথসহ সব পথেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে ঢল নামে মুসল্লিদের।
এবারে প্রথম দফায় বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের জন্য পুরো ময়দানকে ২৭টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তায় নির্দিষ্ট জেলার মুসল্লিরা অবস্থান নিচ্ছেন।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারী জেলাগুলোর মধ্যে হল- ঢাকা (১-৮নং, ১৬নং, ১৮নং, ২০নং ও ২১নং খিত্তা), নারায়ণগঞ্জ (১২নং ও ১৯নং খিত্তা), মাদারীপুর (১৫নং খিত্তা), গাইবান্ধা (১৩নং খিত্তা), শেরপুর (১১নং খিত্তা), লক্ষীপুর (২২-২৩নং খিত্তা), ভোলা (২৫-২৬নং খিত্তা), ঝালকাঠি (২৪নং খিত্তা), পটুয়াখালী (২৮নং খিত্তা) , নড়াইল (১৭নং খিত্তা), মাগুরা (২৭নং খিত্তা), পঞ্চগড় (৯নং খিত্তা), নীলফামারী (১০নং খিত্তা) ও নাটোর (১৪নং খিত্তা। প্রতিটি জেলার জন্য রয়েছে নির্ধারিত স্থান। প্রত্যেকেই স্ব-স্ব খিত্তায় অবস্থান করবেন।
এ বছর ১৬০ একর এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল চটের সামিয়ানা। বিদেশি মেহমানদের জন্য ইজতেমা ময়দানের উত্তর পশ্চিম কর্ণারে তৈরি করা হয়েছে ৪ কামরা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক নিবাস।
এবারের ইজতেমা ময়দানের রয়েছে ১৭টি প্রবেশ পথ। ইজতেমা ময়দানের চারদিকে ১৫টি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। মাঠ জুড়ে রয়েছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের কড়া নজরদারি।
গাজীপুরে মুসল্লিদের গাড়ি পার্কিং :
গাজীপুর জেলা তথ্য অফিসার এসএম রাহাত ও ট্রাফিক বিভাগের এএসপি মো. সালেহ উদ্দিন আহমদ জানান, ইজতেমা চলাকালীন সময় জয়দেবপুর চান্দনা-চৌরাস্তা হয়ে আগত মুসুল্লিদের বহনকারী যানবাহনের জন্য টঙ্গীস্থ কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস কম্পাউন্ড, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের সামনের রাস্তার উভয় পাশে, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি মাঠ প্রাঙ্গণ, জয়দেবপুর থানাধীন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠ, চান্দনা-চৌরাস্তা হাইস্কুল মাঠ, জয়দেবপুর চান্দনা-চৌরাস্তা ট্রাক স্ট্যান্ড এবং নরসিংদী-কালীগঞ্জ হয়ে আগত মুসল্লি বহনকারী যানবাহন টঙ্গীস্থ কে-টু নেভী), সিগারেট ফ্যাক্টরী সংলগ্ন খোলা জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
টঙ্গীতে যানজট
গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের এএসপি মো. সালেহ উদ্দিন আহমদ জানান, দুপুরে জুমার নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লীদের ও গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল সাময়িক বিঘিœত হয়। জুমার পরে একসঙ্গে ফিরতে গিয়ে টঙ্গী ও আশেপাশের এলাকায় গাড়ির চাপ বেড়ে যায় এবং দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে অনেকে পায়ে হেঁটে টঙ্গী এলাকা অতিক্রম করে দক্ষিণে আব্দুল্লাহপুর এবং উত্তরে চেরাগালী এলাকায় গিয়ে গাড়িতে উঠেন। প্রায় সাড়ে তিনটার পর যানজট অনেকটা স্বাভাবিক হয়।
ইজতেমা চলাকালীন গাজীপুরে যানচলাচল নির্দেশনা
ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য ১১জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা হতে উত্তরবঙ্গ হতে আসা টঙ্গী-ঢাকাগামী যানবাহন চান্দনা-চৌরাস্তা হয়ে কোনাবাড়ি, চন্দ্রা-ত্রিমোড়, বাইমাইল, নবীনগর, আমিনবাজার হয়ে চলাচল করবে। এছাড়া ১১-১৩ জানুয়ারি ও ১৮-২০জানুয়ারি পর্যন্ত বাস্তুহারা থেকে টঙ্গী ব্রীজ পর্যন্ত মহাসড়ক, স্টেশন রোড ওভারব্রীজ হতে টঙ্গী রেলগেট ও মন্নু ট্রেক্সটাইল মিল হতে কামারপাড়া ব্রীজ পর্যন্ত সড়কে মোটরযান ব্যাতিত রিকশা, ভ্যান ইত্যাদি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আখেরী মোনাজাতের দিন :
আগামী ১৪ জানুয়ারী প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতের দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা-চৌরাস্তা হতে টঙ্গী ব্রীজ পর্যন্ত কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কের মাজুখান ব্রীজ হতে স্টেশন রোড ওভারব্রীজ পর্যন্ত এবং কামারপাড়া ব্রীজ হতে মন্নু টেক্সটাইল মিলগেট পর্যন্ত সড়কপথ বন্ধ থাকবে বলে জানান গাজীপুর জেলা ট্রাফিক বিভাগ। এরআগে ১৩জানুয়ারি এবং ২০ জানুয়ারি রাত ১০টা হতে টঙ্গীর নিমতলী রেলক্রসিং, কামারপাড়া ব্রীজ ও ভোগড়া বাইপাস দিয়ে ইজতেমাস্থলের দিকে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে মুসল্লিদের নিয়ে ইজতেমাস্থলের দিকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত শ্যাটল বাস চলাচল করবে। তবে বিকল্প হিসেবে ভোগড়া বাইপাস দিয়ে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা হয়ে এবং বিপরীত দিকে ৩০০ফুটের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে।
নৌযান চলাচল নির্দেশনা:
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ১২ জানুয়ারী থেকে ২১জানুয়ারি পর্যন্ত কামারপাড়া সেতু থেকে টঙ্গী সেতু পর্যন্ত তুরাগ নদীতে সকল প্রকার নৌযান চলাচল ও নোঙ্গর বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে নৌযানসমূহ টঙ্গী সেতুর পূর্ব পাশে এবং কামারপাড়া ব্রীজের উত্তর পাশে নোঙ্গর করতে পারবে। নারায়নগঞ্জ ছাড়াও সদরঘাট থেকে ৬টি ওয়াটার বাস টঙ্গী পর্যন্ত মুসল্লিদের পরিবহণ করতে পারবে।
এদিকে গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল জানান, এবছর ১৫টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের অজু-গোসলের জন্য প্রতিদিন প্রায় চার কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেট ও গোসলখানা স্থাপন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, ইজতেমা এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, অশ্লীল পোস্টার অপসারণ এবং হোটেল রেস্তোরায় বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মুসল্লিদের যাতায়তের জন্য তুরাগে ৭টি ভাসমান ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। তুরাগে নৌটহল ছাড়াও ডুবুরীদল মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমার পরিবেশ রক্ষায় প্রতিদিন ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই পর্বে পরিচালিত হবে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ জানান, মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও ইবাদত বন্দেগী নির্বিঘœ করতে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা এলাকায় ৭ হাজার পুলিশ সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা ৮ ভাগে ভাগ হয়ে পাঁচস্তরে মুসল্লিদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন। মুসল্লিদের প্রবেশ পথে সন্দেহভাজনদের মেটাল ডিটেক্টর, ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার ও ৪১টি সিসি ক্যামেরা থেকে পুরো ইজতেমাস্থল পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সাদা পোশাকে প্রতি খিত্তায় ৬জন করে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদেরও ইজতেমা মাঠে প্রবেশে নজরদারি করা হচ্ছে। বিশ্ব ইজতেমা এলাকায় হকার ও ভিক্ষুক মুক্ত রাখা হবে। ইজতেমার শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাজীপুর জেলা পুলিশ সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ইজতেমা ময়দানগামী সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের ১৮শ সদস্য দায়িত্বপালন করছেন। এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদাভাবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র‌্যাব, ও ফায়ার সার্ভিসের কন্টোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এমএ মান্নান জানান, ইজতেমায় আগত মুসলিদের ইবাদত বন্দেগী নির্বিঘœ করতে ২৬টি ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশক নিধনের ঔষধ ¯েপ্র করা হচ্ছে। ২১টি গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে ইজতেমা ময়দান থেকে বর্জ অপসারণ, ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা ও ময়দান এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনী বিøচিং পাউডার সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে বিদেশী ক্যাম্পে রান্নার জন্য ১৩৬টি গ্যাসের চুলা স্থাপন করা হয়েছে।
ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. গাউস আল মুনির জানান, ইজতেমা চলাকালে বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে এবং প্রতিটি ট্রেন টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে দুই মিনিট করে যাত্রা বিরতি করবে।
বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইজতেমা এলাকায় মুসলিদের মাঝে পাঁচটি ফিডারের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি-৪৮, রেফার্ড-৩
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ১১শ ৪২জন মুসুল্লী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন ও ৪৮জন ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
গাজীপুর সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল হক জানান, টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে বার্ণ ইউনিট, অর্থোপেডিক ও ট্রমা, চর্ম-যৌন সার্জারী, অ্যাজমা, কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ ছাড়াও তাদের তিনটি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্পে শতাধিক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও অফিসসহায়ক ২৪ঘন্টা দায়িত্ব পালন করবেন। মুসল্লিদের সেবা দিতে জরুরী ভিত্তিতে ১৪টি অ্যাম্বলেন্স স্ট্যান্ডবাই রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ৪৫টি ফ্রি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব সেবা কেন্দ্র দুই পর্বের ইজতেমায় মুসলিদের ফ্রি চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
বিশ্ব ইজতেমায় ২ মুসল্লির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমা শুরুর আগের রাতে কাজী আজিজুল হক (৬৫) নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি মাগুড়া জেলার শালিখা থানার খরিশপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আজিজুল হক ২৯নং খিত্তায় পেটের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রæত টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। গতকাল শুক্রবার ফজরের নামাজের পর ইজতেমা ময়দানে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ পাঠানো হয় তার গ্রামের বাড়িতে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়িচাপায় নিহত হন (৩৩) বছর বয়সী আব্দুল মামুন মনা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। গুরুতর আহত মনাকে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই রাস্তায় মারা যান তিনি। নিহত মনা ঢাকার আগারগাঁও নিবাসী কেরামত আলীর ছেলে।
ড্যাবের ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প উদ্বোধন
টঙ্গী বিশ^ ইজতেমায় আগত মুসলিদের চিকিৎসা সেবা দিতে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প চালু করেছে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। ইজতেমা ময়দানের পূর্বপাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষে টঙ্গী ফায়ার স্টেশন সংলগ্ন গতকাল শুক্রবার এ ক্যাম্প চালু করা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার যৌথভাবে ফিতা কেটে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন।
টঙ্গী থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেন ফারুকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ডা. আব্দুল কুদ্দুস, ড্যাবের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ড্যাবের সিনিয়র যুগ্নমহাসচিব রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, গাজীপুর জেলা ড্যাবের সভাপতি ডা. এ.বি.এম মুসা, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহজাহান সিরাজ, ডা. মো. খায়রুজ্জামান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর টঙ্গী থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেন ফারুকের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিশ^ইজতিমা চলাকালীন সময়ে বন্ধ রেখে সেখানে ড্যাবের ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প চালু করা হয়। উক্ত ক্যাম্পে ইজতিমার মুসলিদের বিনা মূল্যে ওষধ বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মাঠে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১সাল থেকে টঙ্গীতে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম বছর যারা (যে ৩২ জেলার মুসল্লি) টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন তারা পরবর্তী বছর ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন না। ২০১৫সাল থেকে প্রতিবছর টঙ্গীর বিশ্বইজতেমার পাশাপাশি জেলায় জেলায় আঞ্চলিক ইজতেমাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ বছর গতকাল শুক্রবার বাদ ফজর থেকে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বীদের আম বয়ানের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। আগামী ১৪ জানুয়ারী প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজত অনুষ্ঠিত হবে। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে আগামী ১৯ জানুয়ারী থেকে তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু হবে। ২১ জানুয়ারী রোববার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমা।
বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তায় ৭ হাজার পুলিশ সদস্য প্রস্তুত
-পুলিশ সুপার গাজীপুর
বিশ্ব ইজতেমায় দায়িত্ব পালনের জন্য ৭ হাজার পুলিশ সদস্য প্রস্তুত রয়েছে। তাবলিগ জামাতের দ্বন্ধের কোনো প্রভাব ইজতেমায় পড়বেনা। অর্ধশতাধিক অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশের এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। গতকাল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ। পুলিশ সুপার আরো বলেন, ইজতেমা ময়দানে যাতে মুসল্লিরা নির্বিঘেœ আসতে পারেন সেজন্য যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি তুরাগ নদীতে নৌ-পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। ইজতেমা ময়দানের প্রতিটি খিত্তা ও ময়দানের আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। ময়দানের আশপাশের এলাকা হকার ও ভিক্ষুকমুক্ত করা হয়েছে। ইজতেমায় আগত বিদেশি মেহমানদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
তাজরিয়া ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:৪৯ এএম says : 0
হে আল্লাহ এই বিশ্ব ইজতেমার উছিলায় আমাদের দেশের প্রতি রহমত নাযিল করো।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন