পাউবো নদী ও খাল খননে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি : সেচনির্ভর হয়ে পড়ছে ইরি-বোরো মৌসুম
শুরু হয়েছে ইরি বোরো মৌসুম। প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানি পাম্পের সাহায্যে জমিতে দেয়া হচ্ছে। দিন যাবে পানির ব্যবহারও বাড়বে। এ অঞ্চল মূলত সেচনির্ভর। পানির বিকল্প উৎসগুলো নানা কারণে নষ্ট হচ্ছে। পাউবো নদী খননে দীর্ঘ মেয়াদি কোনো প্রকল্প চালু করছে না। চলতি বোরো মৌসুমে তিন হাজার কোটি ঘনফুটের ওপর ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার হবে। কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ এ সম্পর্কিত কোনো বিশেষ প্রকল্প গত এক যুগেও গ্রহণ করেনি। পাউবোর দু-একটি প্রকল্প রুটিন ওয়ার্কের মতো চলছে। তবে শাসক দলের কর্তৃত্ব থাকায় এসব প্রকল্পে পিসিরা লুটপাট করছে কাজের চেয়ে বেশি। মরা নদী বা খাল খননের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দু’পাশের মাটি কোনোরকম কেটে পাড় তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নদী বা খাল খনন হয়নি। চাল-গম আর প্রজেক্টের অর্থ ব্যয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ ধরনের কর্মকান্ডের মধ্যে খুলনার নালুয়া নদী, ডুমুরিয়ার কপোতাক্ষ নদ, মাংঙ্গা নদী, বটিয়াঘাটার ঝপঝপিয়া নদী অন্যতম। এ ছাড়া বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের কয়েক হাজার খাল সংস্কারের অভাবে এবং পলি পড়ে পানি সংরক্ষণের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খালগুলোর অধিকাংশই এখন প্রভাবশালীদের দখলে। অনেক খাস খাল ও জলাখাল এখন ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু খালের অস্তিত্ব বর্ষাকালে থাকলেও শীতকালে বা শুষ্ক মৌসুমে খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে পানির উৎস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বিগত এক দশকের ব্যবধানে খুলনাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহারে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে বলে পরিবেশবিদরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে চাষি অধিক মাত্রায় বোরো চাষে ঝুঁকছেন। গত বোরো মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার কোটি ঘনফুট ভ‚গর্ভস্থ পানি ব্যবহার হয়েছিল। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বোরো চাষে গড়ে একরে ৮০ ইঞ্চি পানির প্রয়োজন হয়। ওই হিসাব অনুযায়ী এক একরে দুই লাখ ৮৩ হাজার ১৪০ ঘনফুট পানির প্রয়োজন পড়ে। সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলায় প্রায় পৌনে এক লাখ অগভীর (শ্যালো মেশিন) এবং ছয় শতাধিক নলক‚প সেচ কাজে ব্যবহারে হচ্ছে। আমাদের অঞ্চলের চাষিরা অবৈজ্ঞানিক উপায়ে যত্রতত্র নলক‚প স্থাপন করায় সমস্যা আরো ঘনীভ‚ত হয়। পাশাপাশি কৃষি বিভাগেরও রয়েছে যথেষ্ট উদাসীনতা। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ’১২ সালের এ অঞ্চলে প্রায় পৌনে ৩০০টি গভীর এবং প্রায় ১৮ হাজার অগভীর নলক‚প (শ্যালো মেশিন) সেচ কাজে ব্যবহার হয়েছিল। বোরো ধানের চারা রোপণের পর থেকে বোরো ক্ষেতে সেচদান শুরু হয়। বিপুল পরিমাণ ধান চাষে পানির চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানি ভান্ডারে টান পড়েছে। পানির স্তর প্রতি বছর বোরো আবাদকালে নিচে নেমে যায়। বোরো চাষ মৌসুমে কমে যায়। এ পানি ভান্ডারপূর্ণ হয় বৃষ্টি ও নদীর পানিতে। কিন্তু এবার যথেষ্ট বৃষ্টিপাত আশার আলো দেখালেও জমিতে খালের মতো রিজার্ভ ট্যাংকি না থাকায় এই সময় সঙ্কট সৃষ্টি হয়। অপর দিকে, ফারাক্কার প্রভাবে এ অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলো আজ মৃত। নদীতে পানি থাকে না। কোনো কোনো নদীতে একটা ক্ষীণধারা বহমান থাকে। কোথাও হাঁটু বা কোথাও কোমর পানি থাকে। নদীগুলোর বুকজুড়ে ধান চাষ হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে হলে প্রয়োজন ভূগর্ভস্থ পানির উৎস বৃদ্ধি করা। আর এ জন্য দরকার মৃত নদীগুলোকে জীবিত করা। কিন্তু মৃত নদীগুলোকে ফের জীবিত করতে সমন্বিত পানি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাতে এ অঞ্চলে পানি সম্পদ উন্নয়নে তেমন কোনো বাস্তবমুখী প্রকল্প নেই।
খুলনার নাগরিক নেতা শেখ আশরাফ উজ জামান ইনকিলাবকে বলেন, সবকিছুই হতে হবে পরিকল্পনা মাফিক। অন্যথায় পানির স্তর খুব তাড়াতাড়ি নিচে নেমে যাবে। যা ভবিষ্যতের জন্য হবে চরম হুমকি সরূপ। বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির মহাসচিব মো. আজগর হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বাস্তবমুখী প্রকল্প এখনই গ্রহণ না করলে গোটা বৃহত্তর খুলনাঞ্চল জুড়ে যে সঙ্কট সৃষ্টি হবে তা আগামী ৫০ বছরেও উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হবে না। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে যথাসময়ে ভ‚মিকা রাখতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন