শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে গ্রামের মানুষ

অ্যান্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহার ও নানা ভুল ধারণা

| প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মো: হাবিবুল্লাহ-নেছারাবাদ (পিরোজপুর) থেকে : অবাধ এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও নানা ভুল ধারণায় দিন দিন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। সামান্য ঠান্ডা, সর্দি, কাশিসহ শরীরে বড় ধরনের কোন রোগের উপসর্গ থেকে মানুষ অসুস্থতায় পড়ে অবাধে সেবন করছে এন্টিবায়োটিক। নিজ ইচ্ছা আবার কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রামে যত্রতত্র চেম্বার নিয়ে বসা গ্রাম্য চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে কিছু অসচেতন ও দরিদ্রসীমার মানুষেরা নির্বিচারে শরীরে প্রবেশ করাচ্ছে বেশি এন্টিবায়োটিক ওষুধ। গ্রাম্য হাটে বাজারে চেম্বার নিয়ে বসা কিছু অসাধু গ্রাম্য চিকিৎসক অতি মুনাফার আশায় সহজ সরল মানুষদের অযথা এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইপড করে দিচ্ছে। আবার কোন কোন জন সামান্য সর্দিজ্বর, ঠান্ডা, কাশি নিয়ে দোকানে এসে স্ব-ইচ্ছায় এন্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে নিজের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছে। ওইসব এন্টিবায়োটিক কিনে অহরহ শরীরে প্রবেশ করিয়ে রেজিস্ট্যান্স হয়ে পড়ছে দেহে। ফলে পরবর্তীতে কোন অসুস্থতায় পড়ে।
পুনরায় এন্টিবায়োটিক খেয়ে আরোগ্যর পরিবর্তে উল্টো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। ডাক্তারদের প্রেসক্রিপড করা এন্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স সম্পন্ন না করা, সামান্য সর্দি কাশিতে শরীরে অযথা গণহারে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করায় ব্যাকটরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষমতা হারাচ্ছে এন্টিবায়োটিক। একারণে ওই সব জনের দেহে বেড়ে যাচ্ছে ক্ষতিকর ব্যাকটরিয়া সংক্রমনজনকের আশঙ্কা। এতে ক্রমেই বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি।
নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা: আসাদুজ্জামান জানান, সাধারণত একজন রোগী নিউমনিয়া জ্বর নিয়ে আসলে রোগের ব্যাকটেরিয়া ধবংস তাকে সাতদিনের এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশেষ করে কিছু অসচেতন লোকসহ গ্রামের সাধারণ মানুষ ওষুধ কিনে শরীরে দুইদিনের ডোজ প্রবেশ করালে রোগ সারলে তিনি বাকি পাঁচদিনের ডোজ থেকে বিরত থাকেন। বাকি পাঁচদিনের ডোজ সম্পন্ন না করে তিনি ওষুধ থেকে বিরত থাকেন। এতে তার শরীরে ব্যাকটেরিয়া রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়। এঘটনার বার বার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ব্যাকটেরিয়া পরবর্তীতে ওই এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ তৈরি করে দেহে রোগের বিস্তার ঘটায়।
ইন্টারনেটে পাওয়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজরিপে, নির্বিচারে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারের প্রবণতা ও এ সংক্রান্ত নানা ভুল ধারণায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ। জেনেভায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির কর্তা ব্যক্তিরা জানান, অধিক মাত্রায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষমতা হারাচ্ছে এন্টিবায়েটিক। যা বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের আশঙ্কা। দরকারে অদরকারে খেয়াল খুশিমত এন্টিবায়োটিক গ্রহণে প্রাণি দেহে উৎপাদিত হচ্ছে এন্টি রেজিস্ট্যান্ট সুপারবাগ। যার ফলাফল হচ্ছে ভয়াবহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এতে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষমতা হারাচ্ছে এন্টিবায়োটিক। ১২টি দেশের ১০ হাজার মানুষের উপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে সংস্থা বলছে ৬৪ শতাংশ মানুষই বিশ্বাস করেন, পেনিসিলিন ও এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ ঠান্ডা ও ফ্লু প্রতিরোধে কার্যকারী। যদিও এটি একটি ভুল ধারণা। এসব রোগ প্রতিরোধে এজাতীয় ওষুধের কোনো ক্ষমতা নেই।
সম্প্রতি রক্ত পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আসেন এক লোক। তার রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, ওই রোগীর শরীরে প্রত্যেকটি এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে আছে। অর্থাৎ ওই রোগের ব্যাকটেরিয়া তার দেহে এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এক্ষেত্রে তার শরীরে এন্টিবায়োটিক দিলে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়বেন তিনি।
নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা: হাফিজ আহম্মেদ ফাইয়াজ বলেন, কারণে-অকারণে এন্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহারে ক্রমেই মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। যেমন কোন রোগীকে যদি এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনি কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতিতে কোর্স সম্পন্ন না করেই এন্টিবায়োটিক গ্রহণ ছেড়ে দেন। অনেক রোগী বিশেষ করে অসচেতন ও গ্রামের দরিদ্র আয়ের মানুষেরা এরকম ভুল করে থাকেন বেশি। এতে তাদের শরীরে ওই সকল এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে কোন ওষুধই কাজে আসছে না ওই সকল মানুষের দেহে। এতে দিন দিন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে তারা।
ডাক্তার আসাদুজ্জামান বলেন, এ থেকে বাঁচতে অবশ্যই এন্টিবায়োটিকের ফুল কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। আর ছোট খাট রোগের জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। ডাক্তারি পরামর্শ/চিকিৎসা ছাড়া কোনক্রমেই এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা যাবে না। আর এন্টিবায়োটিক ওষুধ যথাযথ ব্যবহার করার জন্য সামাজিকভাবে যথেষ্ট প্রচার-প্রচারণা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন