শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রাজধানীবাসী

বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান ৫ম হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন-২০১৯ সালে ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু হ নগরে মেগা উন্নয়নকাজে বায়ুদূষণরোধের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ আবারও বাড়ছে। বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান এবার পঞ্চম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, দূষিত বায়ুর কারণে ২০১৯ সালে রাজধানী শহরে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
জীবন ও জীবিকার তাগিদে ধারণক্ষমতার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি মানুষ বসবাস করছে ঢাকায়। সেই সঙ্গে পরিকল্পিত নগরায়ণের লক্ষ্যে চলছে উন্নয়নকাজ। ফলে চাপ বাড়ছে ঢাকার পরিবেশের ওপর। সবচেয়ে বেশি দূষণ ঘটছে বায়ুর। ধুলোয় ধূসর ঢাকার বায়ুদূষণ দিন দিন বেড়েই চলছে। অক্সিজেনসমৃদ্ধ বাতাসে এখন ভাসছে বিষ, যা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকছে শরীরে। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীবাসী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণের কারণে সারাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। ঢাকায় কমছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। অর্থাৎ ঢাকায় বায়ুদূষণ না থাকলে একজন নাগরিক আরও প্রায় সাত বছর সাত মাস বেশি বাঁচতে পারতেন। সেই সঙ্গে বায়ুবাহিত রোগে প্রতি বছর দেড় লাখেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। কিডনি, হৃদরোগসহ ক্যানসার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। নষ্ট হচ্ছে নারী-পুরুষের প্রজনন ক্ষমতাও। অতি বায়ুদূষণের ফলে পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ুর। উত্তপ্ত হচ্ছে বায়ুমণ্ডলের ওজনস্তর। পরিবেশ দূষণরোধে আইন থাকলেও তা মানার বালাই নেই সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষেরই। নগরে মেগা উন্নয়নকাজে বায়ুদূষণরোধের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানই সরকারি। পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা এদের বিরুদ্ধে কঠোর না হওয়ায় কমছে না বায়ুদূষণ।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ু পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১১৭টি দেশের মধ্যে বায়ুদূষণের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দূষিত বায়ুর শহর হিসেবে বিশ্বের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমানের প্রতিবেদনেও দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বাতাসের মান বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের আগের তুলনায় বাড়বে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
অন্যদিকে গত ১০ বছরে উন্নয়নকাজের ফলে রাজধানীতে বেড়েছে খোঁড়াখুঁড়ির পরিমাণ। বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, নির্মাণাধীন স্থাপনা ও কলকারখানার বর্জ্য, নিয়মিত রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করাসহ নানা কারণে দূষিত হচ্ছে ঢাকার বাতাস।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা শহরে যে বায়ুদূষণের চিত্র আমরা দেখি সেটি অত্যন্ত ভয়াবহ। অথচ বায়ুদূষণরোধে সরকার আন্তরিক নয়। পরিবেশ দূষণরোধে আইন থাকলেও তা মানার বালাই নেই সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষেরই। নগরে মেগা উন্নয়নকাজে বায়ুদূষণরোধের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানই সরকারি। পরিবেশ অধিদফতর কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের ‘এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন সিটিস’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলা হয়, ঢাকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে বার্ষিক গড় সূক্ষ্ম বস্তুকণার (পিএম২.৫) উপস্থিতি ৭১ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম। আর নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের (এনও২) উপস্থিতি ২৩ দশমিক ৬ মাইক্রোগ্রাম। এ ছাড়া বাংলাদেশে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ৭৬.৯। সূক্ষ্ম বস্তুকণা হলো বাতাসে ভেসে থাকা সব কঠিন ও তরল কণার সমষ্টি, যার অনেকই স্বাস্থ্যের বিপজ্জনক। এ জটিল মিশ্রণে জৈব ও অজৈব উভয় কণা অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন, ধুলাবালু, পোলেন, ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট কালো গুঁড়া, ধোঁয়া ও তরল ড্রপলেট।

নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের মতো বায়ুদূষণ প্রধানত পুরোনো যানবাহন, বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং আবাসিকে রান্না ও কিছু গরম করার জন্য প্রায়শই পোড়ানো জ্বালানি থেকে সৃষ্টি হয়। যেহেতু শহরের বাসিন্দারা প্রচুর যানবাহন চলে এমন ব্যস্ত সড়কের কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন, তাই তারা প্রায়শই গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দাদের তুলনায় অধিকহারে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের দূষণের শিকার হন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বায়ুমান নির্দেশিকা অনুসারে, প্রতি ঘনমিটারে বার্ষিক পিএম২.৫ উপস্থিতি ৫ মাইক্রোগ্রাম আর নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি ১০ মাইক্রোগ্রাম সহনীয় মাত্রা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় শহর ও শহর এলাকাগুলোয় বায়ুমান সবচেয়ে খারাপ। এতে সাত হাজারেরও বেশি শহরের বায়ুদূষণ ও স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানি ও কাঠ পোড়ানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া, ইটভাটা ও ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশের শহরগুলোর খারাপ বায়ুমান প্রায়শই বৈশ্বিক শিরোনাম হয়। বাংলাদেশে শুধু ঢাকার বাসিন্দারাই নয়, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীসহ অন্যান্য শহরের বাসিন্দারাও বায়ুদূষণের শিকার। ডব্লিউএইচওর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বায়ুদূষণে বিশ্বে প্রতিবছর ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন