শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রাণের বইমেলার পর্দা উঠছে আজ

এহসান আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বছর ঘুরে বাঙালীর দুয়ারে আবার কড়া নেড়েছে প্রাণের বইমেলা। আজ থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮। সাধারণত বইপ্রেমীদের নিকট তা পরিচিত অমর একুশে বইমেলা নামে। চিন্তাশীল পাঠক থেকে শুরু করে সাহিত্য প্রেমী, ফিকশন প্রেমী, বা শিশুতোষ গ্রন্থপ্রেমিক সবার প্রাণের খোরাক জোগায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বর্ধমান হাউজের সামনে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার সূচনা করেন। এ ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের বই। ১৯৮৪ সালে বর্তমান অমর একুশে বইমেলার সূচনা হয়। নাম পরিবর্তন করে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ রাখা হয়। আজ বিকেল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত
থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এগনিস মিডোস (যুক্তরাজ্য), ড. জয়েস অ্যাসউনটেনটেঙ (ক্যামেরুন), ইব্রাহিম এলমাসরি (মিশর), অরনে জনসন (সুইডেন)। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান। স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
এছাড়াও উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ প্রদান করা হবে। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত আলোকচিত্রে বাংলা একাডেমির ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ শীর্ষক গ্রন্থটিও তুলে দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও ২২-২৩ ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ফ্রান্স, স্পেন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ ৮টি দেশের ১৫ জন কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী অংশগ্রহণ করবেন। বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৫ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিট; মোট ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১৯টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৫৫৩৬ বর্গফুট আয়তনের ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবারে ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটল ম্যাগাজিন কর্ণারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ সকল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ২৫% ছাড়ে বই বিক্রি করবে।
এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে এবং প্রতিবারের মতো ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হবে। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মেলায় এবারও থাকবে বিনামূল্যে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সুবিধা। বইমেলায় প্রবেশের জন্য টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের ৬টি পথ থাকবে।
বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। এছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে প্রতিবারের ন্যায়।
২০১৭ সালে বইমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৭ এর বইমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এছাড়া ২০১৭ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
এবার মেলার পরিসর বিস্তৃত হয়েছে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বড় পরিসরের ‘নতুন বইয়ের প্রদর্শশালা’ করা হয়েছে। এতে প্রতিদিন প্রকাশিত নতুন বই দিনভিত্তিক সাজানো থাকবে। শারীরিকভাবে অসুবিধাগ্রস্থ ও প্রবীণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে হুইল চেয়ারের সংখ্যা গতবারের চেয়ে এবার বৃদ্ধি পাবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩টি এবং বাংলা একাডেমি অংশে ২টি ক্যান্টিন চালু থাকবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে উদ্যান ও একাডেমি উভয় অংশের স্টলগুলোতে টিনের ছাউনি দেয়া হয়েছে। শিশু চত্বরে স্টলের সংখ্যা বেড়েছে। ১০০০ বর্গফুট জায়গায় টাইলস দিয়ে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ওজু ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বইমেলা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮:৩০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন