শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন ঘটনায় অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে অশান্ত করার পায়তারা

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন : পুরানো রাস্তায় হাটতে শুরু করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ীরা হত্যা, ধর্ষন ও নির্যাতনসহ যে কোন ধরনের সমস্যায় পড়লেই কোন তথ্য প্রমান ছাড়াই এর দ্বায় চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বাঙারীদের উপর। পার্বত্য অঞ্চলের চক্রান্তকারীরা শুধু বাঙালীদের উপর অপরাধ চাপিয়েই ক্রান্ত হচ্ছে তা নয়। ওই কুচক্রী মহল কৌশলে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের চক্রান্ত করে আসছে। মূল অপরাধীরা ধরা পড়ার পর প্রকৃত ঘটনা সকলের কাছে প্রকাশ হলেও গুলা পানিতে মাছ শিকার বন্ধ করছে না পাহাড়ী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, অন্যদেরকে হেয় বা ব্রিত করা, বিপদে ফেলা, বড় ধরনের সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি এবং এমনকি রাষ্ট্র বিরোধী প্রচারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি উদাহরণ পার্বত্য চট্টগ্রামেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাবলি নিয়ে এত বেশি মিথ্যাচার করা হচ্ছে যে, পুলিশি তদন্ত এবং জড়িতরা ধরা না পড়লে সত্য উদঘাটন সম্ভব হতো না। গত ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে খাগড়াছড়ি শহরের আরামবাগ এলাকার বাসায় সরকারী কলেজের ছাত্রি ইতি চাকমার গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় নিহতের দুলাভাই অটল চাকমা। হত্যাকান্ডের খবর প্রকাশের পরেই শুরু হয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জন, কালোব্যাজ ধারণ, মানববন্ধন, আলোচনা সভা, প্রতিবাদ মিছিল ইত্যাদি যা শুধু খাগড়াছড়িতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও।
বিশেষ করে, সোশ্যাল মিডিয়াতে বাঙ্গালিদের দায়ী করে প্রচুর পোষ্ট ছড়িয়ে পরে। একদম শুরু থেকেই কোন রকমের বাছ বিছার না করেই, এ হত্যাকান্ডের জন্যে বাঙালীদের দায়ী করে ফেসবুকে উস্কানীমুলক পোষ্ট দেয়া শুরু হয়। হাস্যকর হলেও সত্যি যে, এক বাঙ্গালীর সাথে ইতি চাকমার কিছু ছবি ফেসবুকে দিয়েও এ ঘটনার সাথে বাঙ্গালিদের দায়ি করা হয়। এখানেই শেষ নয়, অনলাইনে এমন দাবিও করা হয় যে, ইতি চাকমাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং এই হত্যাকান্ডের জন্যে বাঙ্গালী মুসলিম স্যাটেলার›রা দায়ী। আরো দাবি করা হয় যে, বাংলাদেশ ধর্ষণ ও জবাইকারীদের দেশ। এর আগেও অনেক আদিবাসী নারীকে বাঙ্গালী মুসলিম স্যাটেলাররা গণধর্ষণ ও জবাই করে হত্যা করলেও তার কোন বিচার হয়নি। কিন্তু পুলিশ খুনি তুষার চাকমাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং সে স্বীকারও করেছে যে, কোন বাঙ্গালী নয় বরং ৫জন চাকমা যুবক এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দেয়। এছাড়া খাগড়াছড়ির পানছড়ির বালাতি ত্রিপুরাকে খুনের দায়ে তিন বাঙ্গালীকে দোষারোপ করে শুরু হয় বাঙ্গালী বিদ্বেষী প্রচারণা। পরে জানা যায়, কোন বাঙালী এই খুনের সাথে জড়িত নয় বরং এই খুনের মূল নায়ক কার্বারী সাধন ত্রিপুরা নামের এক পাহাড়ি।
সূত্র জানায়, বিশাখা চাকমা নামে রাঙ্গামাটির এক শোরুমের বিক্রয় কর্মী, কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় এবং পরবর্তীতে কাপ্তাই হ্রদে তার বস্তা বন্দি লাশ পাওয়া যায়। যথারীতি শুরু হয় বাঙ্গালীদের দায়ি করে প্রচারণা-সমাবেশ-মানববন্ধন। যার সমাপ্তি ঘটে তখনি, যখন প্রমানিত হয় যে, তার স্বামীর উপস্থিতিতে অন্য পাহাড়ি দুস্কৃতিকারীরাই তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করেছে। বান্দরবানের রোয়াংছড়ির বাঙ্গালি কাঠুরিয়া মুসলিম উদ্দিনকে পাহাড়িরা পিটিয়ে মেরেই ফেলে। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সে প্রমান করতে পারেনি যে, ব্র্যাক এনজিও›র আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা উ প্রু মারমাকে সে ধর্ষণ করেন, হত্যা করাতো দুরের কথা। অথচ, পরবর্তীতে বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা নামের একজনের জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যায়।
সূত্র আরো জানায়, কম্পনা চাকমার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হয়। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় এটা পরিস্কার অনুমেয় যে, তৎকালীন ভোটের রাজনীতি আর চির প্রচলিত পাহাড়িদের অন্তরদ্ব›েদ্বর বলি কল্পনা চাকমা। পার্বত্য চট্টগ্র্রামে আসল ঘটনা আড়াল করে, সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু উপস্থাপন করা নতুন কিছু নয়। কিছু পাহাড়ি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অনেক দিন ধরেই এমটি করে আসছে। এমনকি লংগদুর ঘটনাতেও বরিশালের ও টঙ্গীর অগ্নিকান্ডের ছবি এবং গাইবান্দার সাওতাল পল্লির ছবি উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে দেশে এমনকি বিদেশে পর্যন্ত। এই ধরনের ভিন্ন উপস্থাপনায় অনেকেই বিভ্রান্ত হয়েছেন, এখনো হচ্ছেন। একই ধারাবাহিকতায়, গত কয়েক দিন আগে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা নিয়ে প্রায় অনুরুপ নীল নক্শা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ইতো মধ্যেই। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে ইতি মধ্যেই সেনাবাহিনীর দুই জওয়ানকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের দাবিতে মিছিল করা হচ্ছে। ঘোষণা আসছে আরো কর্মসূচীর। অথচ আরো দশটি ঘটনার মতোই এখানেও এখন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে তারা নিরপরাধ। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত বিলাইছড়ির ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন ও অপরাধীদের খুঁজে বের করতে কাজ চলছে। ততদিনে অপশক্তি যেন পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি-সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে সক্ষম না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক ও গুরুত্ব দিয়ে পাহাড়ী-বাঙালী সকলকেই সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন