শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

যে আগুনে পুড়ছে পাহাড়

সৈয়দ ইবনে রহমত | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি(জেএসএস)’র সাথে সরকারের চুক্তির পরও পাহাড়ে খুনোখুনি, গুম, অপহরণ এবং বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। তার উপর পূর্বে যেখানে একটি সশস্ত্র সংগঠন ছিল চুক্তির পর বিভিন্ন সময় সেটি ভেঙ্গে ৪টি সশস্ত্র সংগঠন তৈরি হওয়ায় এবং তাদের চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে পার্বত্য জনগণের নাভিশ্বাস উঠার উপক্রম। এই অবস্থার মধ্যেই ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর চুক্তির ২০ বছর উদযাপনকে ঘিরে পাহাড়ের অধিবাসীদের মধ্যে আকাক্সক্ষা জন্মে, এবার অন্তত শান্তির অন্বেষণে নতুন কোনো পথ খুঁজবে বিবদমান পক্ষগুলো। অথচ, বাস্তবে ঘটে উল্টোটা। চুক্তির দুই দশক পূর্তির আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সকল প্রকার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়ার পরও ২ ডিসেম্বর রাজধানীতে আয়োজিত এক সম্মেলনে চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন জেএসএস সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে আগুন জ্বলবে।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জন সংহতি সমিতির চেয়ারম্যান সন্তু লারমার সঙ্গে বৈঠক করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস কিংবা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বৈঠক কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই রাঙামাটিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অ্যাকশান শুরু হয়ে যায়।

বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সিনিয়র নেতারা শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়াকে অশান্তির একমাত্র কারণ বলে উল্লেখ করলেও জেএসএসের মধ্যম সারির নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পাহাড়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিয়ে তৎপর হয়ে উঠে। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় ৫ ডিসেম্বর সকালে গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফের কর্মী অনাদি রঞ্জন চাকমাকে। একই দিন সন্ধ্যার পর জুরাছড়ি উপজেলায় গুলি করে হত্যা করা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দ চাকমাকে। হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয় বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মার্মার ওপর। পরদিন ৬ ডিসেম্বর রাঙামাটি শহরেই জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসার বাসায় প্রবেশ করে তাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়, আহত হন তাঁর ছেলে ও স্বামী। ইউপিডিএফের কর্মী ছাড়া বাকিদের ওপর হামলার ঘটনায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জন সংহতি সমিতিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের উপর হামলার তীব্রতা এতটাই বেড়ে যায় যে, এর পর মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই রাঙামাটি সদরসহ চার উপজেলার ৫৪৮ জন পাহাড়ি নেতা-কর্মী দল ছাড়তে বাধ্য হন। বিবৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় বিভিন্ন কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা হতে থাকে। শান্তি চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে সহিংস অধ্যায়টি শুরু হয় মূলত এই সময় থেকেই। ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর ‘পাহাড়ে আগুন জ¦ালানোর’ হুঁশিয়ারি আসার পর আর শান্ত হয়নি এখানকার পরিবেশ। ৫ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটিতে হত্যা পাল্টা হত্যার ঘটনার শুরু হলেও পরে তা ছড়িয়ে পড়ে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানেও। পাহাড়ে সহিংসতার এই অধ্যায়টি দৃশ্যত স্থানীয় আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দিয়ে শুরু হলেও পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ে। নানা সমীকরণে জড়িয়ে যায় সকল পক্ষ। জেএসএস (সন্তু লারমা), ইউপিডিএফ (প্রসীত), জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এবং মগ পার্টি যার যার অবস্থান থেকে সক্রিয় হয়ে উঠে। এগুলোর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বা জোট গড়ে উঠারও আলামত স্পষ্ট। এরা কখনো এককভাবে কখনো-বা জোটগতভাবে হামলা করে প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে নামে। যার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে, বান্দরবানে ঘটে যাওয়া সিক্স মার্ডারের ঘটনা।

জেএসএস (সংস্কার) গ্রæপের আত্মপ্রকাশের পর থেকেই রাঙামাটি এবং খাগড়ছড়িতে তাদের কমিটি এবং কার্যক্রম ছিল। বান্দরবানে তাদের কার্যক্রম সেভাবে লক্ষ করা যায়নি। চলতি বছরের ১৩ মার্চ বান্দরবানে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা কমিটি করে তাদের কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেয়। বান্দরবানে সদ্য প্রকাশ হওয়া জেএসএস (সংস্কার) গ্রæপের ছয় নেতাকর্মীকে গত ৭ জুলাই ২০২০ রোয়াংছড়ি উপজেলার বাঘমারা এলাকায় পার্টি অফিসের পাশে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, জেএসএস’র সংস্কারপন্থী অংশের বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি রতন সেন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি এ এলাকায়। ৫৫ বছর বয়সী রতন নিজেও এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন। একই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। এদের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, জেএসএস (সন্তু লারমা) গ্রæপের সদস্যরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে। নিহত অবশিষ্টরা হলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি প্রগতি চাকমা ওরফে প্রদীপ (৬৫), বিমল কান্তি চাকমা ওরফে বিধু বাবু (৬০), কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ডেভিড মারমা (৫৫) এবং কেন্দ্রীয় সদস্য জয় ত্রিপুরা (৪০) ও জিতেন ত্রিপুরা (৪২)। রতন সেন তঞ্চঙ্গ্যা ছাড়া বাকীদের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায়। জেএসএস (সংস্কার) দলের বান্দরবান কমিটির সেক্রেটারি উবা মং মারমা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বিদ্যুৎ ত্রিপুরা (৩৭), নিরন চাকমা (৫০) এবং হ্লা ওয়াং চিং মারমা (২৫)।

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সম্প্রীতির জেলা হিসেবে পরিচিত ছিল বান্দরবান। চুক্তির পূর্বে এবং পরে রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য চললেও ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত শান্তির মডেল হিসেবে পরিচিত ছিল এ জেলা। কিন্তু গত বছরের মে মাসে হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠে এখানকার পরিবেশ। তিক্ত হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ ও জেএসএস বিবাদ, এরই মধ্যে যুক্ত হয় মগ পার্টি নামের আরো একটি সংগঠনের নাম। ৭ মে সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের দুর্গম তাইংখালী এলাকায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিনয় তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে ৯ নম্বর সইনক্ষ্যং পাড়ায় গিয়ে পুরাধন তঞ্চঙ্গ্যা (৪৫) নামের একজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তার খোঁজ এখনো মেলেনি। ১৯ মে বান্দরবান-রাঙামাটি সীমান্তের বাঙ্গালহালিয়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা ক্যহ্লাচিং মার্মাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২০ মে রাজবিলায় আওয়ামী লীগ নেতা ক্যচিং থোয়াই মারমা, ২৩ মে পৌর আওয়ামীলীগ নেতা চথোয়াই মং মারমা, ২৫ জুন রোয়াংছড়ি উপজেলার থোয়াইংগ্য পাড়ায় অং সিংচিং মার্মা, ২২ জুলাই রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মংমং থোয়াই মার্মাকে শামুকঝিরি এলাকায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। ২৪ জুলাই লামায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আলমগীর সিকদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের ২২ ফেব্রæয়ারি সদরের জামছড়ি এলাকায় একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং পাড়ার পাঁচ জন গুরুতর আহত হন। ১৭ এপ্রিল রোয়াংছড়ি উপজেলার কেনাইজু পাড়ায় মগ পার্টির এক জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৫ জুন বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বান্দরবানে নিহতের তালিকায় সর্বশেষ ৭ জুলাই যুক্ত হলো জেএসএস (সংস্কার) এর ৬ নেতাকর্মী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর সন্তু লারমার হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পর শুরু হওয়া রক্তাক্ত অধ্যায়ে পাহাড়ে প্রতিদ্ব›দ্বী গ্রæপগুলের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৮২ জন নিহত হয়েছে। সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের এক তথ্য বিবরণী থেকে জানা গেছে, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী জেএসএস (সন্তু লারমা) গ্রæপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৪২ জন খুন হয়েছে। তাদের হাতে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ১৫ জন করে এবং রাঙামাটিতে ১২ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে আছে শাসকদল আওয়ামী লীগের ৯ জন, ৮ জন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি, ১৪ জন জেএসএস (সংস্কার), এমএনপি ৫ জন, জেএসএস (সন্তু লারমা) গ্রæপের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১ জন এবং ৪ জন সাধারণ উপজাতি। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে আলোচিত ঘটনাগুলো হচ্ছে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেএসএস (সংস্কার) নেতা শক্তিমান চাকমা হত্যাকাÐ এবং তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমাসহ তার সঙ্গীদের হত্যাকাÐ। খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজারে সিক্স মার্ডারের ঘটনা। ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ বাঘাইছড়িতে উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর ব্রাশ ফায়ার করে ৮ জনকে হত্যা এবং ১৬ জনকে আহত করার ঘটনা।

বলা বাহুল্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠন জেএসএস থেকে বেরিয়ে গিয়েই বিভিন্ন সময়ে মগ পার্টি বাদে অন্য চারটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে উঠেছে এবং এদের গড়ে ওঠার পেছনে উদ্দেশ্য যাই থাক, তাদের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্য হয়ে পড়েছে চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে ভোগ-বিলাসের জীবন যাপন করা। কিন্তু চাঁদার পরিমাণ বাড়াতে হলে তো ব্যাপক এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে হবে, তাই প্রয়োজন জনবল এবং অস্ত্রের মজুদ বাড়ানো। একারণেই তারা মন ভোলানো বুলি আওড়িয়ে তরুণদের একটি অংশকে প্রলুব্ধ করছে, অন্যদিকে চাঁদার টাকায় চোরাই পথে সংগ্রহ করছে বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলা-বারুদ।

জনবল, আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলা-বারুদ সংগ্রহের পর তারা নতুন নতুন এলাকা দখলের লড়াইয়ে নামছে। আর যখনই একটি সশস্ত্র গ্রæপ অন্য গ্রæপের এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে যাচ্ছে, তখনই শুরু হচ্ছে দ্ব›দ্ব-সংঘাত। গুম, খুন, অপহরণের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এর ফলে শুধু সশস্ত্র ক্যাডাররাই মরছে না, বরং অনেক সময় পাহাড়ি-বাঙালি নিরীহ মানুষও মরছে। আর সংঘাত যত বাড়ছে ততই তাদের অস্ত্র এবং চাঁদা আদায়ের লক্ষ্যও বড় হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পার্বত্য তিন জেলা থেকে বছরে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছে সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলো। তাদের চাঁদা আদায়ের মূল উৎস হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো, দেশি-বিদেশি এনজিও থেকেও তারা নানা উপায়ে অর্থ পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ আছে। বনজ সম্পদ, পর্যটন, পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য কোনোটাই তাদের চাঁদা থেকে মুক্ত নয়। স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে সরকারি-বেসারকারি চাকরিজীবীদেরও বেতনের একটা অংশ দিয়ে দিতে হয়। সর্বোপরি সাধারণ মানুষও তাদের চাঁদা দিতে বাধ্য। প্রতিটি জুম চাষিকেও দিতে হয় তার ফসল বিক্রি থেকে আয়ের একটা অংশ, তাদের পালিত গরু, ছাগল এমনকি একটি মুরগী বিক্রি করলেও দিতে হয় চাঁদা।

সংগৃহীত চাঁদায় মায়ানমার এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রæপগুলোর মাধ্যমে কেনা হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র, সশস্ত্র জনবল লালন-পালনেও খরচ করা হচ্ছে। একটা অংশ ব্যয় হচ্ছে নিজেদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য দেশি-বিদেশি লবিস্টদের পেছনে। অবশিষ্ট টাকায় সিনিয়র নেতারা ভোগ-বিলাসী জীবন যাপন করছেন, পাশাপাশি নামে-বেনামে দেশে এবং বিদেশে গড়ে তুলছেন সম্পদের পাহাড়। সশ¯্র এবং জুনিয়র কর্মীরা অর্থ আয়ের প্রধান হাতিয়ার হলেও তাদের ভাগ্যে জোটে কমই, এমনকি হিসাব-পত্র সম্পর্কেও তাদের জানার সুযোগ থাকে না। একদিকে অর্থ ভাগাভাগিতে বঞ্চনা, অন্যদিকে নেতাদের বিলাসী জীবনে হতাশ হয়ে পড়ে অনেকে। বেরিয়ে আসতে চায় সন্ত্রাসের জীবন থেকে, ফিরতে চায় স্বাভাবিক জীবনে। কিন্তু চাইলেই এটা তারা করতে পারে না। এতদিন যাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে, তারা পেলে যেমন ছাড়বে না, তেমনি নিজ দলের কাছেও তারা শত্রæ হয়ে যায়। তথ্য-উপাত্ত ফাঁস হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় নিজেদের কর্মীকেও হত্যা করে সশস্ত্র গ্রæপগুলো।

শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহযোগিতা করার পরিবর্তে ২০১৭ সালে কেন পাহাড়ে আগুন জ¦ালানোর হুমকি দিলেন, তার পর থেকে পাহাড় কেন এতটা উত্তপ্ত হয়ে উঠল এবং এই সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া বড় হত্যাকাÐগুলোর পেছনে কেনই-বা তার দলের জড়িত থাকার কথা উঠে আসছে সেসব প্রশ্নের জবাব পাওয়াও জরুরি। ২০১১ সালে ২৫ নভেম্বর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে সন্তু লারমা বলেছিলেন, ২০০০ সাল থেকেই পাহাড়ে তাদের বেশ কয়েকশ’ সশ¯্র কর্মী সক্রিয় আছে। কীভাবে এই শসস্ত্র কর্মী গড়ে উঠতে পারলো, সেটাও জানা দরকার। কারণ শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা একপক্ষীয় কোনো বিষয় নয়। অন্য পক্ষ সদিচ্ছা না দেখালে সরকারের একার পক্ষে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী ভারত এবং মায়ানমারের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে বহুদিন ধরেই বিভিন্ন সশস্ত্রগোষ্ঠি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দুর্গম এবং অরক্ষিত সীমান্তের সুযোগ নিয়ে কখনো কখনো বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলেও এরা আশ্রয় নিয়ে থাকে। এদের কারো কারো সাথে আমাদের দেশের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরও আন্তঃযোগাযোগ আছে। অস্ত্র আসে তাদের মাধ্যমেই। কাছের এবং দূরের বহু রাষ্ট্রশক্তি নানা কারণে এ অঞ্চলের সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোকে মদদ দিয়ে সক্রিয় রাখে। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে থাকা সকল সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিষ্ক্রিয় করা জরুরি।
sayedibnrahmat@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন