শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করতে মরিয়া একাধিক চক্র

জুম্মল্যান্ড বানাতে গোপনে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে উপজাতীয় পরিবারকে আনা হচ্ছে

সাখাওয়াত হোসেন : | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্ত পরিবেশ অশান্ত করতে মারিয়া হয়ে উঠেছে একাধিক চক্র। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ওই চক্রগুলোকে অর্থ ও অবৈধ অস্ত্রসহ নানাভাবে মদদ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের কাছে ১০ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। অন্যদিকে সরকারি অর্থায়নে পুনর্বাসনের আওতায় আসছে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার প্রায় ৮২ হাজার উদ্বাস্তু পরিবার। এ জন্য এ তিন পার্বত্য জেলার অভ্যন্তরীণ ৮১ হাজার ৭৭৭ উদ্বাস্তু পরিবারের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে সরকার গঠিত টাস্কফোর্স। খবর সংশ্লিষ্ট্র সূত্রের। স্থানীয় আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় পুরনো অস্ত্রের পাশাপাশি নতুন ও অত্যাধুনিক কিছু অস্ত্র সম্প্রতি সময়ে যোগ হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে এম ১৬ রাইফেল, মিয়ানমারে তৈরি এম ১ রাইফেল, একে ৪৭ রাইফেল, একে ২২ রাইফেল এবং এলএমজি (লাইট মেশিনগান)। সশস্ত্র গ্রুপগুলোর চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব অবৈধ অস্ত্রের মজুত বাড়ছে। প্রায় একই কারণে সাম্প্রতিক সময়ে খুন, অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধের ঘটনায় অশান্ত হচ্ছে পাহাড়ি জনপদ।
আইন শৃংখলা বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্তির পেছনে অনেকগুলো বিষয়কে দায়ী করা হয়। তন্মধ্যে, ভূমি সমস্যা সবচেয়ে জটিল বলে বিবেচিত। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন এলাকায় ভূমি সংক্রান্ত অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ আমলেই জনসংহতি সমিতির ১৯৯৩ সালের দাবিনামায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বমোট ৪৪৬.০৪ বর্গমাইল এলাকা জেলা ও আঞ্চলিক পরিষদের এখতিয়ারভুক্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের কাঙ্খিত জুম্মল্যান্ড বানাতে গোপনে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার ও ভারত থেকে উপজাতীয় পরিবারকে রাতের আঁধারে সীমানা পার করে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু সাজানো হচ্ছে। এর আগেও ১৮টি উপজাতীয় পরিবারকে ভারত থেকে সীমান্ত পার করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলার ছোট বেলছড়িতে নিয়ে এসে তাদের জোরপূর্বক বাঙালিদের ভূমিতে ঘর তৈরি করে দিয়ে বাংলাদেশি ভোটার করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় এক উপজাতীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, সরকারি অর্থায়নে পুনর্বাসনের আওতায় আসছে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলার প্রায় ৮২ হাজার উদ্বাস্তু পরিবার। এ জন্য এ তিন পার্বত্য জেলার অভ্যন্তরীণ ৮১ হাজার ৭৭৭ উদ্বাস্তু পরিবারের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে সরকার গঠিত টাস্কফোর্স। সম্প্রতি এক সভায় পুনর্বাসনের জন্য ভারত থেকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাগত ২১ হাজার ৯০০ শরণার্থী পরিবারের তালিকা যাচাই বাছাই পূর্বক প্রস্তুত করার অনুমোদন দিয়েছে টাস্কফোর্স।
মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এছাড়াও, উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের ঋত মওকুফ, ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার, প্রত্যাগত শরণার্থীদের চাকরিতে জ্যেষ্ঠতা প্রদান, রেশন দেয়া এবং টাস্কফোর্স সদস্যদের সম্মানী ভাতা নিয়ে আলোচনা করেন টাস্কফোর্স সদস্যরা। উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ৪৫১টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।
সভায় খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক জানান, এসব মামলার মধ্যে ৪৪৬টি মামলা ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকি মামলাগুলোতে কিছু জটিলতা থাকলেও তা নিরসন করে দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শান্তি চুক্তির পর ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের ইতিমধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে। সর্বশেষ ২১ পরিবারকে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার জামতলীতে পুনর্বাসন করা হয় ফখরুদ্দিন সরকারের সময়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টেও শান্তিচুক্তির এই ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত বলে দাবি করা হয়েছে। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে ভারত থেকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাগত এই ২১ হাজার ৯০০ শরণার্থী পরিবার কোথা থেকে এলো? পুনর্বাসনের নামে সীমান্তের ওপার থেকে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে গোপনে বসবাসকারী লোকদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে কি না, এই বিপুল পরিমাণ লোককে কোথায় পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুাব করা হচ্ছে, এখানে বাঙালিদের কবুলিয়তপ্রাপ্ত জমি, সরকারি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জমি ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, শান্তিচুক্তি পরবর্তীকালে ইউপিডিএফ, জেএসএস তাদের অধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন এলাকায়, সরকারি, খাস, রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় যেসব নতুন বসতি স্থাপন করেছে তাদের এই অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ক্যাটাগরিতে ফেলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা পুনর্বাসন করিয়ে নিচ্ছে কি না, চুক্তি পরবর্তী পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে বিভিন্ন সময় যেসব নিরীহ পাহাড়িরা ডিসপ্লেসড হয়ে অন্যত্র বসতি গড়েছে তাদেরও এই অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের মধ্যে ফেলা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে বাঙালি নেতৃবৃন্দ।
তারা আরো জানান যে, নিরাপত্তার জন্য যেসব বাঙালিকে তাদের বসতবাড়ি থেকে সরিয়ে গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসন করা হয়েছিল তারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের কেন অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসাবে বিবেচনা করে সরকারি কবুলিয়ত প্রদত্ত পূর্বের জমিতে ফিরিয়ে আনা হবে না?
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসারে ১২,২২২টি উপজাতীয় পরিবারকে উপযুক্তভাবে পুনর্বাসন করা হয়। সর্বশেষ ২১টি পরিবারকে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার জামতলীতে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু জেএসএস সভাপতি ও তৎকালীন শান্তি বাহিনীর প্রধান সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন বর্তমান জেএসএসের হত্যা নির্যাতনে উদ্বাস্তু ২৬ হাজার বাঙালি পরিবারকে (প্রকৃত সংখ্যা ৩৮ হাজার ১৫৬টি) এখন পর্যন্ত পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্তের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সীমান্তচৌকি (বর্ডার আউটপোস্ট-বিওপি) নেই। ফলে সেখানে বাধাহীনভাবে অস্ত্র ঢুকতে পারে। তাছাড়া শান্তিচুক্তিসই করার পর চুক্তি বাস্তবায়নের শর্ত মোতাবেক বেশকিছু নিরাপত্তা ফাঁড়ি প্রত্যাহার করা হয়। শান্তিচুক্তির আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫৫২টি নিরাপত্তা ফাঁড়ি ছিল। চুক্তির পর অনেকগুলো প্রত্যাহারের পর বর্তমানে সেখানে ২১৮টি নিরাপত্তা ফাঁড়ি রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড়ি সীমান্তে পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকায় উন্মুক্ত সীমান্তে বিওপি স্থাপন করা যাচ্ছে না। কেননা বিওপি স্থাপন করতে হলে তার নিরাপত্তার প্রয়োজনে যোগাযোগ জরুরি। বর্তমান অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন দুর্গম স্থানও রয়েছে, যেখানে কোনো সশস্ত্র হামলা হলে নিরাপত্তা বাহিনীর পৌঁছতে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Yeasin Arafat Imran ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৪০ পিএম says : 0
জুম্মাদের উপজাতীদের সুযোগ সুবিধে বেশী দেওয়ার কারণে মাথায় উঠে গেছে,,, এখন সুলতানা কামালরা কই?? পাহাড়ে যখন সেনা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাহাড়ী উপজাতী জুম্মারা হামলা করে তখন সুলতানা গংরা কোথায় থাকে??
Total Reply(0)
Jahid Abedin ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৪১ পিএম says : 0
পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের নির্মূলে আরো বেশী সেনা ক্যাম্প বাড়ানো প্রয়োজন।
Total Reply(0)
Miah Mohammad Shamim Hossain ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৪১ পিএম says : 0
100% right
Total Reply(0)
AI ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৫৭ পিএম says : 1
এরা অস্ত্র কি ভাবে পায়? কে খরচ বহন করে?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন