পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির আজ ২১ বছর পূর্তি হয়েছে। দীর্ঘ দুই দশকের অধিক সময় চলা পাহাড়ের সশস্ত্র সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের এই দিনে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। এ উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলাসয় বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারি ভাবেও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি চুক্তি ২১ বর্ষপূর্তিতে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় গঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমি দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলের দূর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি ও উন্নয়নের ধারা। ইউনেক্সো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্বারক।
পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে জনসংহতি সমিতি বিভিন্ন সময়ে হতাশা প্রকাশ করলেও সরকারের দাবি চুক্তির বেশিরভাগ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। এ নিয়ে গত ২১ বছর ধরে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দুই পক্ষের মধ্যে চলছে টানাপোড়েন। চুক্তির ধারা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে এবং কতটুকু বাস্তবায়ন হয়নি এ বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের নেতৃবৃন্দের মধ্যে টানাপোড়েন চললেও পাহাড়ি-বাঙালি সাধারণ জনগণ সন্তুষ্ট আছে। কারণ জনগণ শান্তি চুক্তি পূর্ববর্তী সেই রক্তাক্ত সংঘাতময় দিনগুলিতে ফিরে যেতে চায় না। তাই পার্বত্য জনজীবনে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির গুরুত্ব অনেক বেশি।
পাহাড়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির অবসানের জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এ চুক্তির মধ্যদিয়ে শান্তিবাহিনীর সদস্যদের প্রথম গ্রুপ খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে এবং দ্বিতীয় গ্রুপ রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিবদমান দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান হয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হয়। সে প্রক্রিয়া এখনো চলমান। তবে এই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার রয়েছে ক্ষোভ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দুই মেয়াদে এক দশকধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
পার্বত্য চুক্তির ২১ বছর সংবিধানবিরোধী চুক্তি মানতে মানুষ বাধ্য নয়-বিচারপতি খাদিমুল ইসলাম
পার্বত্য শান্তি চুক্তি সংবিধান বিরোধী এবং বর্তমানে চুক্তির কোনো বৈধতা বা ভিত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য ভূমি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি খাদিমুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ে এই চুক্তিকে সংবিধান পরিপন্থী বলা হয়েছে। যার কারণে এ চুক্তি মানতে দেশের মানুষ বাধ্য নয়। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২১ বছরে জাতির প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
খাদিমুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৬ সালে চুক্তি হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো নানা ধরণের সমস্যা রয়ে গেছে। এর মধ্যে ভুমির সমস্যা বড়। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনায় উচ্চ আদালতে দুটি রিট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালত কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। যা এখন আপিল বিভাগে পেন্ডিং রয়েছে। আদালতের পর্যালোচনায় চুক্তিটিকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলা হয়েছে। যার কারণে সেই রায়ের পর থেকে এ চুক্তির আর কোন অস্তিত্ব নেই।
পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ, সাংবাদিক মেহেদী হাসান পলাশ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন