মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হবে

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করে ওই ধারার বিষয়গুলো প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রেখে দেয়া এবং এর পাশাপাশি আরো নতুন কয়েকটি কঠোর ধারা তাতে সংযোজন করায় সাংবাদিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ২০০৬ সালে প্রণীত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে শুরুতেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ২০১০ সালে এ আইনের আওতায় ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হলে ফেসবুক বন্ধ করা এবং ৫৭ ও ৪৬ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। আবেদনে ধারা দু’টিকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করা হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৫৭ ও ৪৬ ধারা কেন অবৈধ নয় জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, তথ্য সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে জবাব দিতে বলা হয়। ২০১৩ সালে যখন আইসিটি আইন সংশোধন করা হয়, তখন স্বভাবতই আশা করা হয়েছিল, ৫৭ ধারার যথাযথ সংশোধন হবে। বাস্তবে সংশোধন হয় বটে তবে সেই সংশোধনীতে ধারাটিকে আরো কঠোর ও শক্ত করা হয়। পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানো হয়। সন্দেহভাজন যে কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের ক্ষমতা দেয়া হয়। সেই সঙ্গে এই আইনের আওতায় অপরাধকে জামিনের অযোগ্য করা হয়। শুধু তাই নয়, এ ধারায় সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ কারাদÐ ৭ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪ বছর করা হয়। একই সঙ্গে এক কোটি টাকার অর্থদÐের বিধান করা হয়।
সঙ্গতকারণেই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ উচ্চারিত হয়। অবিলম্বে ধারাটি বাতিলের দাবি জানানো হয়। কিন্তু সরকার তাদের প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও দাবি উপেক্ষা করে ধারাটি বহাল ও কার্যকর রাখে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত আইসিটি আইনে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪১৭টি। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই হয়েছে ৫৭ ধারায়। এ ধারায় দায়েরকৃত কিছু মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। কয়েকটি মামলায় আসামীদের শাস্তি হয়েছে। কয়েকটি মামলায় আসামীরা খালাস পেয়েছে। বাকী মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। ধারাটি এখন ওই আইন থেকে বাতিল করার ঘোষণা দেয়া হলেও বলা হয়েছে, ৫৭ ধারায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর বিচার এ ধারার ভিত্তিতেই চলতে থাকবে।
আলোচনার সুবিধার জন্য ধারাটি উল্লেখ করা প্রয়োজন। ধারাটি এই ‘(১) কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যাহা মিথ্যা, অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়িলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃংখলার অবনতি ঘটে বা ঘটিবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) কোনো ব্যক্তি উপধারা (১) এর অধীনে অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বছর কারাদÐে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদÐে দÐিত হইবেন।’
ধারাটি সম্পর্কে একটি বড় অভিযোগ ছিল, এটি অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থবোধক। একে ইচ্ছামত ব্যাখ্যা করার সুযোগ রয়েছে যাতে এর অপব্যবহারের সমুহ আশংকা বিদ্যমান। উল্লেখ আবশ্যক, এধারায় দায়েরকৃত অধিকাংশ মামলার ক্ষেত্রেই ‘অপব্যবহারের’ অভিযোগ উঠেছে। মামলা ও গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকদের যে রূপ নিরংকুশ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, তাতেই এই অপব্যবহারে সংঘটিত হয়েছে। ধারাটি সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ এই যে, এটি সংবিধানের সঙ্গে সংঘর্ষিক। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। অন্যসব আইনে যাই থাক, সংবিধানের আইনই অগ্রাধিকার পাবে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের ১ নম্বর ধারায় চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। ২ নম্বর ধারায় কিছু বিধিনিষেধ সাপেক্ষে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। ৫৭ ধারা এই অনুচ্ছেদ ও ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। স্মর্তব্য, ভারতের আইসিটি আইনে প্রায় অনুরূপ একটি ধারা ছিল যা সেই আইনের ৬৬ ধারা হিসাবে চিহ্নিত ছিল। সেখানে ধারাটির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ উঠলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ধারাটি সংবিধানের পরিপন্থী ঘোষণা দিয়ে বাতিল করে দেন। সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেন, ধারাটি তথ্য অধিকারের ওপর বিরাট এক হুমকি। আইনবিদদের অভিমত: ভারতের আইসিটি আইনের ৬৬ ধারার চেয়ে বাংলাদেশের আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা আরো কঠোর।
অত্যন্ত দু:খজনক হলো, ধারাটি সুগ্রন্থিত নয়, অস্পষ্ট, দ্ব্যর্থবোধক, অপব্যবহারযোগ্য, মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং সর্বোপরি সংবিধানিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে প্রতিভাত হলেও সরকারের তরফ থেকে ধারাটির পক্ষে বরাবরই সাফাই গাওয়া হয়েছে। তাকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করা হয়েছে। বহুল আলোচিত প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে গ্রেফতারের ঘটনায় যখন দেশজুড়ে তোলপাড় ওঠে তখন আইনমন্ত্রী এই মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন যে, অচিরেই ধারাটির সংশোধন অথবা বাতিল করা হবে। এতে সবাই আশ্বাস্থ হয় ও অপেক্ষায় থাকে। সেই অপেক্ষার ফল যে এমন মর্মান্তিক বাস্তবতার মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দেবে তা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। ক’দিন আগে আইনমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, ৫৭ ধারার অপব্যবহারের সুযোগ ছিল। তখনই তিনি এ সত্য স্বীকার করলেন, যখন ধারাটির বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছে। সঙ্গতভাবেই এ প্রশ্ন ওঠে, অপব্যবহারের সুযোগ ছিল যে ধারাটির, সেটি আরও শক্ত করে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলো কেন? এটি কি গণইচ্ছা বা গণদাবির প্রতি উপহাস নয়? এক্ষেত্রে একটি কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। ৫৭ ধারায় বিষয়বস্তুকে চারটি ধারায় বিভক্ত করে দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারার তা সন্নিবেশিত হয়েছে। যারা এই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তারা কি মনে করেন, কেউ এটি ধরতে বা বুঝতে পারবেনা? নিজেদের এতটা চালক-চতুর ভাবা তাদের উচিৎ হয়নি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরও ভয়ংকর ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এটি ৩২ ধারা, যাতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি আধা সরকারি স্বায়ত্ত¡শাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার কোনো ধরনের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করিতে সহায়তা করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে কম্পিউটার গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২৩ সালের সরকারি গোপনীয়তা আইনের ৩ ধারার গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধের শাস্তির বিভিন্ন বিধানকে ভিন্ন মোড়কে খসড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। গুপ্তচর বৃত্তির অজুহাতে গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে তদন্তকারী কর্মকর্তার অভিপ্রায়নির্ভর করায় প্রস্তাবিত আইনটি ক্ষেত্র বিশেষে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়াও ৩২ ধারার অপপ্রয়োগের ফলে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী দুর্নীতি ও মানবাধিকার লংঘন সংক্রান্ত তথ্য জানার অধিকার ব্যাপকভাবে রুদ্ধ হবে এবং ফলে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লংঘন সুরক্ষিত হয়ে এরূপ অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটাবে। মানবাধিকার লংঘন মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ সংক্রান্ত যে সমস্ত তথ্যাবলী মানুষের জানার কথা বা জানার অধিকার রয়েছে, এমনকি প্রকাশের অধিকার রয়েছে সাংবাদিকসহ অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীদের তা খর্ব হবে।
বলা বাহুল্য, এ ধারা আইনটিতে থাকলে আমলা বা ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ছাড়া অন্য যে কারো পক্ষে সরকারি, অধাসরকারি, স্বায়ত্ত¡শাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার দফতরে ক্যামেরা, মোবাইল ফোন বা পেনড্রাইভের মতো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার বিপদজ্জনক হয়ে পড়বে। এমন কি ওই সব দফতরের ই-মেইল বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কাউকে কোনো তথ্য বা নথির কপি পাঠানোও অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। এটা দুর্নীতিবাজ আমলা ও সরকারি দলের লোকজনদের সুরক্ষা দেবে। দুর্নীতি-দুষ্কৃতির কোনো তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ সংবাদকর্মীদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। সাংবাদিকতা গুপ্তচরবৃত্তি নয়, তবে এই ধারার সুবাদে সাংবাদিকদের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার সমূহ আশংকা থাকবে। এ প্রসঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৩২ ধারায় ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি প্রসঙ্গে অপরাধের ধরন ও শাস্তির যে বিধান রাখা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনা ও বাক স্বাধীনতায় আঘাত হানবে। এই সঙ্গে তা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আস্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
ধারাটি নিয়ে সংবাদকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবধি নেই। তাদের মতে, এ ধারার কারণে সাংবাদিকতা বলে কিছু থাকবে না। বিশেষ করে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। কে না জানে, অনুসন্ধানী রিপোর্টের কারণেই সাম্প্রতিক বছর গুলোতে দুর্নীতি-দুষ্কৃতির অনেক তথ্য দেশবাসী জানতে পেরেছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে নথিতথ্য ও ছবি সংগ্রহ করতে হলে হলমার্ক, ইউনিপে টু, ডেসটিনির লুটপাট, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসহ বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ কেলেংকারির কথা দেশের মানুষ হয়তো কখনোই জানতে পারতো না। জানতে পারতো না ভুয়া মুক্তিযোদ্ধ সার্টিফিকেট বাণিজ্য, সরকারি কর্মকর্তাদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিয়ে প্রমোশন হাতিয়ে নেয়া, গুনে গুনে ঘুষ খাওয়া কর্মকর্তার হদিস বা স্বর্ণের ক্রেস্টে স্বর্ণ কম থাকার কথা। সরকারি দলের বহু নেতা-এমপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, ক্ষমতার অপব্যহার, মাদক ব্যবসা, মানবপাচার ইত্যাদির যে কথা-কাহিনী মানুষ জানতে পেরেছে, তাও হয়তো তাদের পক্ষে জানা সম্ভব হতো না। একজন মন্ত্রী তো রাখ ঢাক না করেই বলেছেন, ‘আপনারা গণমাধ্যমে যেভাবে বিভিন্ন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন, তাতে তাদের মান-ইজ্জত থাকে না। তাদের সম্মান ক্ষুন্ন হয়। তারা তো জনপ্রতিনিধি। এ আইনের বলে এখন হয়তো এমন পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।’
প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯, ৩১ ও ৩২ ধারা ছাড়াও আরো কিছু ধারা রয়েছে যেগুলো তেমনভাবে আলোচনায় আসেনি। অথচ সেগুলোও কম বিপদজ্জনক নয়। মোটকথা, এই আইনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সরকারের ইচ্ছা ও স্বার্থের বাইরে গিয়ে কি-ও করা যাবেনা। সরকার একে তার মর্জি অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে। অধ্যাপক আসিফ নজরুলের বিবেচনায়, আইনটি আগের চেয়ে আরো ভয়ংকর। আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। অনেক অস্পষ্টতা রয়েছে। বিরোধী পক্ষকে দমন-পীড়ন নির্যাতন, জুলুম ও অবিচার করতেই এটি করা হয়েছে।
যে কোনো আইনের লক্ষ্য জনকল্যাণ। পরিবর্তিত বাস্তবতায় জনচাহিদার নিরিখে নতুন নতুন আইন প্রণীত হয় কিংবা পুরানো আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার-সংশোধন সাধিত হয়। এটা সবদেশে সবকালেরই সাধারণ রেওয়াজ। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থে কোনো আইন হতে পারে না। এ ধরনের আইন নিবর্তনমূলকই হয়ে থাকে। অনেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে আরেকটি ‘কালো আইন’ বা ‘নির্বতনমূলক’ আইন হিসাবে অভিহিত করেছেন। যে আইন গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী, মত প্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি স্বরূপ সে আইন কীভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে! ক্ষমতাধীনরা তাদের কর্তৃত্ববাদী শাসন দৃঢ় ও নিরংকুশ করতে নিবর্তনমূলক আইন করে থাকে। আমাদের দেশও এ ধরনের আইন অতীতে বেশ কিছু হয়েছে। এসব আইন ক্ষমতাসীন ও দেশবাসী-কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনেনি।
প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রীপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণের মধ্য দিয়ে সংসদে সেটি পাস হবে। আইনটির পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিয়োযোজন ও সংযোজনের সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। সাংবাদিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে ব্যাপক ভিত্তিক আলোচনা করতে পারেন, পরামর্শ ও সুপারিশ পেশ করতে পারেন। সম্পাদক পরিষদ আইনটির ব্যাপারে অংশীজনদের সংশ্লিষ্ট করার তাকিদ দিয়েছেন। আমরাও মনে করি, অংশীজনদের সংশ্লিষ্টতা ও পরামর্শ এক্ষেত্রে খুবই জরুরি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
গনতন্ত্র ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:৫০ পিএম says : 0
ডিজিটাল র্দুনিতীবাজ নিরাপত্তা আইন। আল্লাহর মাইর চিন্তার বাইর। নমরুদ ও ফেরাউন কেহই আল্লার হাত থেকে রেহাই পায়নি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন