(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
রাসূল (সা:) মৃত ব্যক্তিদের দোষ-ত্রæটি বলতে নিষেধ করার সাথে সাথে তাদের সদগুণাবলী আলোচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে- “তোমরা তোমাদরে মৃত ভাইয়ের সদগুণাবলী আলোচনা কর এবং দুর্নাম করা থেকে বিরত থাক। ৬। দৈনিক কাঠামোর গীবত ঃ কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বেঁটে, কুৎসিত, নাক, লম্বা, কানে শোনে না, চোখে দেখে না ইত্যাদি দৈহিক ত্রæটির উল্লেখ করে গীবত করা হারাম। একদা হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, হে আল্লাহ রাসূল! আপনি কি সাফিয়ার বেঁটে হওয়াটা পছন্দ করেন না? রাসূল (সা:) বললেন, হে আয়েশা তুমি এমন একটি কথা বললে যা নদীর পানির সাথে মিশিয়ে দিলে তার উপরও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে।”
রাসূল (সা:) এর স্ত্রী উম্মে সালমা বেঁটে ছিলেন। ত৭ার অন্য সহধর্মীগণ এজন্যে হাসি ঠাট্টা করলে আল্লাহ তা’আলা তৎক্ষণাৎ নাযিল করলেন ঃ হে ঈমানদারগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষের বিদ্রæপ না করে। হতে পারে সে তুলনায় উত্তম। আর কোন মহিলাও যেন অপর কোন মহিলার বিদ্রæপ না করে। হতে পারে সে বিদ্রæপ অপেক্ষা উত্তম। ৭। পোষাক-পরিচ্ছদের গীবত ঃ পোষাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রেও গীবত হয়। যেমন- এভাবে বলা যে, অমুক ব্যক্তি বদমায়েশের মত পোষাক পরে, অমুক মহিলা এমনভাবে ওড়না পরিধান করে যে, তার আভ্যন্তরীণ অংশ খোলা তাকে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে চলাফেরা করে ইত্যাদি। একদা হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, অমুক স্ত্রী লোকটির আঁচল খুব লম্বা। একথা শুনে রাসূল (সা:) বললেন, হে আশেয়া! তুমি তার গীবত করলে। তোমার থুথু ফেলা জরুরী। আয়েশা (রা:) বলেন, আমি থুথু ফেললে মুখ থেকে গোশতের একটি টুকরা বেরিয়ে আসে। ৮। বংশের গীবত ঃ কেউ যদি কাউকে তুচ্ছ ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বলে, অমুকের বংশ নীচ বা ইতর অথবা অমুক অজ্ঞাত বংশের তবে এটাও গীবত হবে। ইসলামে নিজেকে খুব উচ্চ বংশীয় এবং অন্যকে নিম্ন বংশীয় বলা জায়েয জনয়। কেননা বংশীয় মর্যাদা শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাটি নয়। রাসূল (সা:) বলেছেন, দীনদারী ও সৎকর্ম ব্যতিত কোন ব্যক্তির অপর ব্যক্তির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই বেশি সম্মানিত যে বেশি আল্লাহ ভীরু। ৯। অভ্যাস ও আচার-আচরণের গীবত ঃ কেউ যদি কারো অভ্যাস ও আচার-আচরণের কথা উল্লেখ করে বলে অমুক কাপুরুষ ভীরু, অলস, পেটুক, নির্বোধ, স্ত্রীর কথায় উঠে বসে, পরিণামের কথা ভেবে কাজ করে না ইত্যাদিও গীবতের অন্তর্ভূক্ত। একদা এক সাহাবী কোন এক ব্যক্তির উল্লেখ পূর্বক বলে, সে এক আজব লোক। কেহ তাকে খাদ্য দিলে সব সে খেয়ে ফেলে। কেউ বাহন দিলে তাতে সে চড়ে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু নিজে পরিশ্রম করে আয় উপার্জন করে না। রাসূল (সা:) বললে, তুমি তোমার ভাইয়ের গীবত করলে। সাহাবী আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল। কারো ত্রæটি তুলে ধরাও কি গীবত? রাসূল (সা:) বললেন, প্রকৃতপক্ষে কারো ত্রæটি নির্দেশ করাই গীবতের জন্য যথেষ্ট। ১০। ইবাদতের গীবত ঃ কেউ যদি কারো ইবাদতের সমালোচনা করে বলে অমুক ভাল করে নামায পড়ে না অথবা বলে সে তাহাজ্জুদ বা নফল নামায পড়ে না কিংবা সে রমযান মাসের সকল ফরয রোযা রাখে না ইত্যাদিও গীবতের অন্তর্ভূক্ত। তাহাজ্জুদ নামাযের ওয়াক্তের সময় কিছু লোক ঘুমিয়ে থাকলে শেখ সাদী তাদের সমালোচনা করে বললেন, এই লোকগুলো তাহাজ্জুদ নামায পড়লে কতই না ভাল হত। শেখ সাদীর পিতা একথা শুনে বললেন, কতই না ভালো হত তুমি তাহাজ্জুদ না পড়ে এদের মতো ঘুমিয়ে থাকতে। তাহলে এদের গীবত করার পাপ তোমার ঘাড়ে চাপত না। ১১। গুণাহের গীবত ঃ গুনাহের গীবত হলো যেমন বলা-অমুক ব্যক্তি ব্যভিচারী, অমুক পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, অমুক মদ্যপায়ী, অমুক চোর, অমুকের অন্তর বিদ্বেষপূর্ণ ইত্যাদি। শেখ সাদী একবার তার শিক্ষককে বললেন, অমুক ব্যক্তিক আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। শিক্ষক বলেন, হে সাদী! তোমার মতে বিদ্বেষ পোষণ হারাম, তার গীবত কি হালাল? তুমি আমার কাছে অমুক ব্যক্তির গীবত করছ তার বিদ্বেষের উল্লেখ করে। ১২। মুখের গীবত ঃ রাসূল (সা:) কিছু লোককে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা খিলাল করে নিজেদের দাঁতের ফাঁক থেকে গোশত বের করে ফেলে দাও। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আজ আমরা তো গোশত খাইনি। রাসূল (সা:) বললেন, ‘আমি তোমাদের দাঁতের ফাঁকে গোশতের লাল টুকরা দেখতে পাচ্ছি। নিশ্চয়ই তোমরা আজ কারো গীবত করেছ।’ জানা যায় প্রকৃত পক্ষেই তারা ঐদিন এক ব্যক্তির গীবত করেছিল ১৩। ইশারা ইঙ্গিতে গীবত ঃ ইশারা ইঙ্গিতে গীবত করা জায়েয নয়। যেমন কেউ যদি কারো নাম উল্লেখ না করে এমন ইশারা ইঙ্গিত ব্যবহার করে দোষ বর্ণনা করে যা দ্বারা মানুষ বুঝে নিতে পারে যে, অমুক ব্যক্তির গীবত করা হচ্ছে। যেমন- কেউ এভাবে বললো ঃ এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর কথামত চলে এর্ব নিজের পিতা-মাতার কথা শুনে না। এতে শ্রবণকারী বুঝতে পারলো যে, সে অমুক ব্যক্তির গীবত করছে। এ ধরণের গীবত বৈধ নয়। ১৪। সরাসরি কিংবা অভিনয়ের মাধ্যমে গীবত ঃ সরাসরি গীবত যেমন কোন ব্যক্তির নাম পরিচয় উল্লেখ পূর্বক তার দুর্নাম বর্ণনা করা। আর অভিনয়ের মাধ্যমে গীবত যেমন-অন্ধ, বধির, বোবা ইত্যাদি সেজে অভিনয় করে তাদের দোষ-ত্রæটির দিকে ইঙ্গিত করা অথবা সমালোচনা করার জন্যে কারো চাল-চলন, কথা-বার্তা ও পোষাক পরিচ্ছেদ পরিধান ইত্যাদি নকল করে অভিনয় করা। রাসূল (সা:) বলেছেন, আমি অপরকে অনুকরণ করা পছন্দ করি না, এত সম্পদের বিনিময়েও না। একদা হযরত আয়েশা (রা:) কোন এক মহিলাকে নকল করে দেখালে রাসূল (সা:) বললেন, কাউকে নকল করা আমার কাছে মোটেই পছন্দীয় নয়, অনেক সম্পদের বিনিময়েও নয়। ১৫। কানের গীবত ঃ কেউ যদি কারো গীবত কানে শুনে অথচ তাতে বাধা না দিয়ে নীরব থাকে তাও গীবতের অন্তর্ভূক্ত। রাসূল (সা:) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, কারো গীবত করা হলে এবং তুমি সেখানে হাজির থাকলে তাকে এভাবে সাহায্য কর যে, তুমি তার প্রশংসা শুরু করে দাও যাতে লোকেরা তার গীবত করা থেকে বিরত থাকে। গীবতকারীকেও বাধা দাও, অত:পর স্থান ত্যাগ করো। রাসূল (সা:) বলেছেন, গীবত শ্রবণকারীও গীবতকারীদের একজন। ১৬। অঙ্গ-প্রতঙ্গের গীবত ঃ কেউ যদি নিজের হাত, পা, চোখ ইত্যাদির দ্বারা ইশারা করে কোন ব্যক্তির দোষ বর্ণনা করে তাও অঙ্গ-প্রতঙ্গের গীবত হবে। এ যেমন কোন ব্যক্তির কোন বৈঠক থেকে চলে যাওয়ার পর তার প্রতি উপস্থিত লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। মহানবী (সা:) বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার ভাইয়ের চোখের দ্বারা এমনভাবে ইঙ্গিত করা জায়েয নয় যাতে সে মর্মাহত হয়। ১৭। মনে মনে গীবত করা ঃ কারো প্রতি বিদ্বেষ বশত: মনে কু-ধারণা পোষণ করা হারাম। অবশ্য অনিচ্ছা বশত: কারো প্রতি কোন খারাপ ধারণা জাগ্রত হলে তা ক্ষমার যোগ্য। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন