বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন : গীবত কি আমল ধ্বংস করে?

| প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

উত্তর : কারো অগোচরে তার দোষ বর্ণনা করা গীবতের অন্তর্ভুক্ত। হাদীসের মধ্যে এসেছে রাসূল সা.-কে জিজ্ঞাসা করা হলো- ইয়া রাসূল আল্লাহ গীবত কী! রাসূল সা. উত্তর দিলেন- ‘স্বীয় ভাইয়ের এমন আলোচনা যা সে অপছন্দ করে।’ অর্থাৎ যদি সে ঐ আলোচনা শোনার পর কষ্ট পায় তাহলেই সেটা গীবত হবে। অতপর ঐ সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন। যদি আমার ভাইয়ের মাঝে বাস্তবেই ঐ দোষ থাকে যা আমি বর্ণনা করেছি। তখন তিনি উত্তর দিলেন যদি বাস্তবেই তার মাঝে ঐ দোষ থাকে এবং তার দিকে মিথ্যে সম্বোধন করা হয় তাহলে গীবত হবে না; বরং ‘বুহতান’ তথা অপবাদ হবে। যা আরেকটি মারাত্মক গুনাহ। আমাদের পরষ্পরের কথোপকথন, বৈঠক এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গীবতের মতো ভয়াবহ এ ব্যাধি জোয়ারের পানির মত ঢুকে পড়েছে। একজনের ব্যাপারে আলোচনা হলেই তার প্রসংশার সাথে সাথে অপ্রসংশনীয় দিকগুলোও অকপটে তুলে ধরা হয়। রাত দিন প্রায় সকলেই গীবতের মতো এ কঠিন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত।

অন্য দিকে কিছু লোক গীবতকে হালকা বানানোর জন্য এই কথা বলে যে- ‘আমি তার গীবত করছি না, আমি তো তার সামনে এ কথা বলতে পারবো। উদ্দেশ্য এই, যেহেতু আমি তার মুখের সামনে বলতে পারব সুতরাং আমার জন্য গীবত করা যাবে।’ আমি তার মুখের সামনে বলতে পারি আর না পারি সর্বাবস্থায় সেটা গীবত। আমি যদি কারো মন্দ দোষ বর্ণনা করি তাহলেও সেটা গীবতই। মদপান যিনা ব্যভিচার ইত্যাদির মত কারো গীবত করাও কবীরা গুনাহ। এটার মাধ্যমে মানবিক দিক থেকে নিয়ে অভ্যন্তরীণ দিকও পাপের সম্মুখীন হয়। কাজেই এ গুনাহ থেকে পুরোপুরি আমাদের হাত গুটিয়ে নেয়া অপরিহার্য।

ফকীহ আবুল লাইস সমরকন্দী রহ. বলেনÑ আল্লাহ তাআলা কারো ধ্বংস চাইলে তাকে তিনটি শাস্তি দেন। প্রথমত, তাকে ইলম দান করেন, কিন্তু উলামায়ে কেরামের মত আমল করতে দেন না। দ্বিতীয়ত, তাকে তিনি নেককার লোকদের সাহচর্য দান করেন, কিন্তু তাঁদের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে দেন না। তৃতীয়ত, তার জন্য ইবাদতের দরজা খুলে দেন, কিন্তু তাকে আমলে ইখলাস দান করেন না। এরূপ হবার কারণ তার নিয়তের কলূষতা, অন্তরের দুষ্টতা ও গীবতের ব্যাধি। কেননা তার নিয়ত শুদ্ধ হলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে ইলমের উপকারিতা, আমলে ইখলাস ও নেককারদের মর্যাদাবোধ দান করতেন, পাশাপাশি গীবতের স্বভাব থেকেও রক্ষা করতেন।

সুতরাং গীবতের মত ভয়াবহ এই ব্যাধি থেকে আমার জবান যেন পবিত্র থাকে; এর জন্য সতর্কতার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে দোয়াও করা চাই। সামাজিক নৈরাজ্য কিংবা বিশৃংখলা এড়ানোর জন্য অন্যান্য পাপের সাথে গীবতের মত কঠিন এ পাপের পথও বন্ধ করা অনিবার্য। আল্লাহ আমাদের গীবতের গোনাহ থেকে হেফাজত করুন।

উত্তর দিচ্ছেন : মিযানুর রহমান জামীল, সহকারী সম্পাদকÑ মাসিক আর রাশাদ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন