এরশাদ আলী। বয়স মাত্র ৩২। বাড়ি রাজশাহীর তানোরের শংকরপুর এলাকায়। এরশাদের বয়স অল্প হলেও তিনি অত্যন্ত কৌশলী। মাদক ব্যবসায় সিদ্ধহস্ত। গোপনে পরিচালনা করেন মাদক সিন্ডিকেট। নিরবে চালিয়ে যান ইয়াবা আর ফেনসিডিল ব্যবসা। মাদকের বড় ব্যবসায়ী হলেও এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে মাত্র দুটি। তবে একটি মামলায় ধরাশয়ী হয়েছেন এরশাদ। বর্তমানে রয়েছেন রাজশাহী কারাগারে বন্দি।
মাদকের বড় চালান পৌঁছে যায় এরশাদের আস্তানায়। তারপর তিনি ও তার সহযোগী সাবেক মেম্বর সাইফুদ্দিন উপজেলার অর্ধশত পয়েন্টে সুকৌশলে সরবরাহ করেন। আর মাদক ব্যবসা করেই এরশাদ অল্প সময়ের মধ্যে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। কিনেছেন জমি আর পুকুর। দৃশ্যমান কোন ব্যবসা নেই তার। তবে তার সম্পদ এবং নির্মাণাধীন ব্যয়বহুল বাড়ি নিয়ে উঠেছে নানান প্রশ্ন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এরশাদ পাঁচ বছর থেকে ইয়াবা এবং ফেনসিডিল ব্যবসা করেন। পার্শ্ববর্তী রাজশাহীর গোদাগাড়ী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা এরশাদের আস্তানায় ফেনসিডিলের বড় চালান সরবরাহ করেন। এছাড়া কক্সবাজার থেকে রাজশাহীতে ইয়াবার বড় চালান আসে। এরপর তা রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা সাইফুদ্দিন মেম্বারের মাধ্যমে এরশাদের কাছে সরবরাহ করেন।
এলাকাবাসীর একটি সূত্র জানায়, এরশাদ বড় ধরনের মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। মাদক ব্যবসা নির্বিঘেœ চালানোর জন্য রয়েছে অন্তত ১০জন যুবক। তারা এরশাদের হয়ে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন পয়েন্টে ফেনসিডিল এবং ইয়াবা পৌঁছে দেয়। এসব পয়েন্টে সাধারণত খুচরা ব্যবসায়ীরা মাদকাসক্তদের কাছে মাদক বিক্রি করেন। এরশাদের নিয়োগকৃত লোকজন তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক পয়েন্টে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে। এরশাদের বাড়ি শংকরপুর এবং পার্শ্ববর্তী দরগাডাঙ্গা মোড়েই রয়েছে মাদকদ্রব্য বিক্রির ১৫টি পয়েন্ট। এসব পয়েন্ট এলাকায় থেকে দেখভাল করেন এরশাদ। আর এর মাধ্যমেই এরশাদ অল্প সময়ের মধ্যে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এদিকে এরশাদ তিন মাস আগে থেকে দরগাডাঙ্গা মোড়ে শুরু করেছেন ব্যয়বহুল বাড়ি নির্মাণকাজ। এলাকাবাসী বলছেন, তিনি ৫তলা বাড়ি নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়িটির এখন দোতলার কাজ চলছে। প্রত্যেক তলায় রয়েছে দুটি ইউনিট। আর প্রত্যেকটি ইউনিটে রয়েছে তিনটি রুম। রুমের সাথে টয়লেট। রয়েছে ডাইনিং স্পেস। নিচতলার সামনে দুটি দোকানঘরও নির্মাণ করেছেন। বাড়িটি প্রথম শ্রেণীর ইট দিয়ে গাথা। আর ব্যবহার করা হয়েছে দামি টাইলস। দরজা-জানালার কাঠ মেহগনি। ৫ তলা বাড়িটি নির্মাণে অন্তত ২ কোটি টাকা খরচ হবে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। এছাড়া শংকরপুর এলাকার মাঠে মাত্র তিন বছরের মধ্যে এরশাদ প্রায় ১৫ বিঘা জমি কিনেছেন। কিনেছেন তিনটি বড় পুকুর। এসবের দামও প্রায় তিন কোটি টাকা। আর রয়েছে নামে-বেনামে ব্যাংকে অঢেল টাকা।
এদিকে রমরমা মাদক ব্যবসা করলেও এরশাদের বিরুদ্ধে রয়েছে মাত্র দুটি মামলা। এর মধ্যে গত নভেম্বরে তিনি ফেনসিডিলসহ তার একসহযোগী মান্দা ধরা পড়েন। আর সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ তানোর সদরের আমশো মোড়ে দুইশ পিস ইয়াবাসহ ধরা পড়েন এরশাদ। এসময় জব্দ করা হয় ভারতীয় হিরো ব্রান্ডের দেড়শ সিসির একটি দামি মোটরসাইকেল। এ মামলায় এরশাদ বর্তমানে রয়েছেন কারাগারে। তাই তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয় নি।
তবে এ বিষয়ে সাবেক মেম্বর সাইফুদ্দিন জানান, আমি জনপ্রতিনিধি হিসাবে কেউ বিপদে পড়লে তাদের সহযোগীতা করে থাকি। মাদকের কোন ব্যবসা করিনা। যারা বলেছে তারা মিথ্যা বলেছে।
তবে মাদক ব্যবসায়ী এরশাদের ব্যাপারে জিঙ্গাসা করা হলে তানোর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম বলেন, এরশাদের মাদক নেটওয়ার্কের ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। তার সিন্ডিকেটে যেসব যুবক বাহক হিসেবে কাজ করছে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আর শংকরপুর এবং দরগাডাঙ্গাসহ যেসব এলাকায় মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে, সেসব স্থানে অচিরেই অভিযান চালানো হবে বলে মন্তব্য করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন